Advertisement
E-Paper

মরণের পরে অন্য সংগ্রাম

হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগের সামনে কাচের গাড়িতে শোয়ানো রয়েছে বৃদ্ধের মৃতদেহ। তাঁর পরিবারের লোকেরা উদ‌্ভ্রান্তের মতো এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটছেন। যদি এমন কাউকে পান, যিনি মৃতদেহটি গ্রহণ করবেন এবং তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবেন।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৭ ০১:৩১

হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগের সামনে কাচের গাড়িতে শোয়ানো রয়েছে বৃদ্ধের মৃতদেহ। তাঁর পরিবারের লোকেরা উদ‌্ভ্রান্তের মতো এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটছেন। যদি এমন কাউকে পান, যিনি মৃতদেহটি গ্রহণ করবেন এবং তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু কেউ নেই! আজীবন মরণোত্তর দেহদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার পরে ৯৩ বছরের অরুণজিৎ সিংহের নিজের দেহটি দান করার সময়ে এমনই অব্যবস্থার সাক্ষী হলেন তাঁর পরিজনেরা।

এক পরিচিতের সূত্র ধরে প্রথমে আর জি কর হাসপাতালের সুপার মানস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পরে অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যালের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন তাঁরা। সুপার সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, রাতে সাধারণ ভাবে মৃতদেহ গ্রহণ করা হয় না। তবে অরুণজিৎবাবুর পরিজনেরা হাসপাতালের অধ্যক্ষ অথবা অ্যানাটমি বিভাগের প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করে অনুরোধ করতে পারেন। এর পরে যোগাযোগ করা হলে অধ্যক্ষ আশ্বাস দিয়েছিলেন, তিনি অ্যানাটমি বিভাগের কর্মীদের বলে রাখছেন। কেউ না কেউ দেহটি গ্রহণ করবেন। বুধবার সকালে সই-সাবুদের কাজ হবে। এই আশ্বাস মতো মৃতদেহ নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছন তাঁরা। অভিযোগ, হাসপাতালে পৌঁছে কাউকেই পাওয়া যায়নি। অ্যানাটমি বিভাগ তালা বন্ধ ছিল। ফোন ধরেননি অধ্যক্ষ। শেষ পর্যন্ত এক পরিচিতের সূত্র ধরে স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বর়ঞ্জন শতপথীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁরা। স্বাস্থ্য অধিকর্তা মিনিট দুয়েক সময় চেয়ে নেন। তার পরেই চাকা ঘুরতে থাকে। পরবর্তী কয়েক মিনিটের মধ্যেই দেহটি গ্রহণ করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

প্রশ্ন উঠেছে, যাঁদের কোনও যোগাযোগ নেই, তাঁদের ক্ষেত্রে তা হলে কী হবে? বিকেল পাঁচটার পরে কারও মৃত্যু হলে দেহদানের ইচ্ছা অপূর্ণই থেকে যাবে? এই প্রশ্নের কোনও স্পষ্ট উত্তর স্বাস্থ্য কর্তাদের কাছে পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্বরঞ্জনবাবু জানিয়েছেন, এমনটা কোনও ভাবেই হওয়ার কথা নয়। রাতে কোনও চিকিৎসক না থাকলেও অ্যানাটমি বিভাগের কোনও না কোনও কর্মী মৃতদেহ গ্রহণ করেন।

মঙ্গলবার বিকেলে হৃদ‌রোগে আক্রান্ত হন বালি পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা আরএসপি নেতা অরুণজিৎ সিংহ। আমৃত্যু তিনি যে হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সেই বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তিরানব্বই বছরের বৃদ্ধের শেষ ইচ্ছা ছিল, তাঁর মৃত্যুর পরে দেহটি আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দান করা হবে। একটি চিরকুটে তা লিখেও রেখেছিলেন তিনি। তাঁর ওই ইচ্ছানুযায়ী আত্মীয়-পরিজনেরা মৃতদেহটি আর জি কর হাসপাতালে দান করার জন্য যোগাযোগ করেন। কিন্তু তাঁদের জানানো হয়, কোনও দেহ নেওয়া হয় না। সারা রাত কোথায় দেহটি সংরক্ষণ করবেন, সে নিয়ে চিন্তায় পড়েন সকলে।

এর পরে শ্রমজীবী হাসপাতালের তরফে গৌতম সরকার তাঁর এক পরিচিতকে বিষয়টি জানান। সেই সূত্র ধরেই প্রথমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং পরে স্বাস্থ্যকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। দীর্ঘ চেষ্টার পরে দেহটি দান করতে পারেন তাঁরা। গৌতমবাবুর প্রশ্ন, যে রাজ্যে মরণোত্তর দেহদানকে ঘিরে এত চর্চা, সেখানে খাস কলকাতা শহরের অন্যতম প্রধান একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যদি এমন অভিজ্ঞতা হয়, তা হলে জেলার পরিস্থিতি কী?

Old Man Dead Body
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy