(উপরে) মাথায় হেলমেট নেই, তাই মিলল না তেল। (নীচে) পেট্রোল পাম্পে সেই নির্দেশ। — নিজস্ব চিত্র
পথ নিরাপত্তার অনুষ্ঠানে আর্জি জানিয়েছিলেন পরিবহণমন্ত্রী। তাতে সায় দেন মুখ্যমন্ত্রীও। সেই সম্মতি আদায়ের পরে আর দেরি করেনি লালবাজার। এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতাবলে শহরের পাম্পগুলিকে ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’ নির্দেশ পাঠিয়েছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। অর্থাৎ, হেলমেট না পরে গেলে মোটরবাইকের পেট্রোল মিলবে না।
শনিবার থেকে এই নিয়ম চালু হতেই শহরের বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পে শুরু হয়েছে নানা গোলমাল। যেমন পার্ক সার্কাসের পদ্মপুকুরে একটি পাম্পে তেল না পেয়ে পাম্পের কর্মীদের উপরে চড়াও হন এক যুবক। বেনিয়াপুকুরে পুলিশের সঙ্গে তর্ক জুড়েছেন অনেকে। শিয়ালদহের একটি পাম্পে আবার নিয়ম না মেনে হেলমেটহীন আরোহীকে তেল বিক্রি করেছেন পাম্পের এক কর্মী। তাঁর স্বীকারোক্তি, ‘‘পুলিশের নির্দেশ মাথায় ছিল না।’’ তেল না পেয়ে হেলমেটহীন মোটরবাইক আরোহীরা গোলমাল জুড়েছেন শহরের আরও কিছু জায়গায়। বন্দর এলাকায় তো হেলমেট কিংবা পেট্রোল বিক্রিতে লাগাম, কোনওটাই চালু হয়নি।
মোটরবাইকের দৌরাত্ম্য থামাতে মুখ্যমন্ত্রী এবং পুলিশের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকে। কিন্তু তাঁরা এটাও বলছেন, এই নির্দেশ ঘিরে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ার অবকাশ রয়েছে। কারণ এক বার মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, হেলমেট না থাকলে পুলিশ ধরবে। তিনি আবার এ-ও বলেছেন, প্রয়োজনে তিন মাস পর্যন্ত সময় দেওয়া হবে। তা হলে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী, হেলমেট না থাকলেও তিন মাস তেল কিনতে পারবেন মোটরবাইকের চালকেরা। তা হলে এই নির্দেশ তড়িঘড়ি দেওয়া হল কেন? সদুত্তর মিলছে না।
কেউ আবার বলছেন, হেলমেট না কিনতে পারলে সরকার বা পুলিশ হেলমেটের ব্যবস্থা করবে (যদিও ৬০-৭০ হাজার টাকা দিয়ে মোটরবাইক কেনার পরে কয়েকশো টাকার হেলমেট কিনতে টাকায় টান পড়বে কেন, তা স্পষ্ট নয়)। তেমনই যদি হবে, তা হলে তো এই নির্দেশ দেওয়ার কোনও মানেই হয় না। হেলমেট না কিনতে পারার অজুহাতে সরকারের মুখাপেক্ষী হয়েই তো লোকে দিন কাটাবে! সে ক্ষেত্রে পেট্রোল না দেওয়ার যৌক্তিকতা কোথায়? শনিবার রাত পর্যন্ত স্পষ্ট ব্যাখ্যা মেলেনি। এমনকী, রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্যেও তা খুব স্পষ্ট নয়। তিনি বলেন, ‘‘হেলমেট পরাটা নিরাপত্তার জন্যই প্রয়োজন। মুখ্যমন্ত্রী কিছু ক্ষেত্রে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিচার করতে বলেছেন। কিন্তু সেটা ব্যতিক্রম। হেলমেট না-পরাটা যেন অভ্যাস না হয়ে দাঁড়ায়।’’
পুলিশের একাংশও বলছে, তিন মাস সময় দেওয়া হলেও এই নির্দেশ তড়িঘড়ি চালু করা না গেলে দৌরাত্ম্যে লাগাম পরানো যেত না। এখন তাই জরিমানার বদলে হেলমেটহীন বাইকচালকদের কাউন্সেলিং করানোর কথাও ভাবছে পুলিশ।
পুলিশ কমিশনারের এই তড়িঘড়িতে ফাঁপরে পেট্রোল পাম্পের মালিকেরাও। পশ্চিমবঙ্গ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তুষার সেন বলছেন, ‘‘মোটরবাইক আরোহীরা হেলমেট পড়ছেন কি না, সেটা পুলিশ দেখবে। ব্যবসায়ীরা তো সেটা নিশ্চিত করতে পারবেন না। উল্টে তেল বিক্রি বন্ধ করলে গোলমাল পাকানোর আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। এই নির্দেশ জারি করার আগে প্রশাসন আমাদের সঙ্গে কথা বললে সুষ্ঠু ভাবে বিষয়টি কার্যকর করা যেত।’’ সংগঠন সূত্রের খবর, তেল বিক্রি বন্ধ করা হলে গোলমাল বাধতে পারে, এই আশঙ্কায় শুক্রবার রাত থেকেই নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন পাম্প-মালিকদের অনেকে। এ দিন সেই আশঙ্কা কিছুটা হলেও সত্যি হয়েছে। পাম্প-মালিকদের অনেকে বলছেন, তেল না পেয়ে এলাকায় ষণ্ডা গোছের যুবকেরা কিংবা রাজনৈতিক দলের কর্মীরা হাঙ্গামা বাধালে সামলাবে কে?
তুষারবাবু জানান, এই সব সমস্যা নিয়ে ইতিমধ্যেই পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন তাঁরা। কিন্তু তা সফল হয়নি। কাল, সোমবার এই সমস্যা নিয়ে পুলিশ কমিশনারকেও চিঠি পাঠাবেন তাঁরা। চিঠি পাঠানো হবে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলিকেও। প্রয়োজনে প্রশাসনকে পাম্পে সচেতনতা প্রসারের আর্জিও জানাবেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy