Advertisement
E-Paper

ভ্রূণ-বিভ্রান্তির দায় কার, মেলেনি উত্তর

রহস্য ঘোরালো হয়েছে সেই চার শ্রমিককে সরিয়ে দেওয়ায়, যাঁরা রবিবার হরিদেবপুরের মুচিপাড়ায় রাজা রামমোহন রায় রোডের জমিতে ১৪টি প্লাস্টিকের ব্যাগে ভ্রূণ ও শিশুদেহ দেখেছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:১৬
সেই জমি: হরিদেবপুরের এই জমি থেকেই উদ্ধার হয় ‘মেডিক্যাল বর্জ্য।’ ছবি: রণজিৎ নন্দী

সেই জমি: হরিদেবপুরের এই জমি থেকেই উদ্ধার হয় ‘মেডিক্যাল বর্জ্য।’ ছবি: রণজিৎ নন্দী

এঁড়ে না বকনা, লেজ তুলে দেখার বিধান আছে গ্রামদেশে। মেধাবী তদন্ত এবং দক্ষতায় যে-লালবাজারের তুলনা টানা হয় স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সঙ্গে, তারা কি সেই লোকজ্ঞানের ধার ধারে না? প্রশ্ন উঠছে হরিদেবপুরের ভ্রূণ-বিভ্রান্তির ঘটনায়। প্রশ্ন উঠছে, খোদ পুলিশ কমিশনার, গোয়েন্দা-প্রধান, লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের হোমিসাইড শাখার দুঁদে অফিসারেরা তো অকুস্থলে গিয়েছিলেন। তাঁদের অভিজ্ঞ চোখে চিকিৎসা-বর্জ্য কী ভাবে ভ্রূণ হিসেবে ধরা দিল?

পুলিশি সূত্রের দাবি, খুঁটিয়ে না-দেখেই প্লাস্টিকের ব্যাগে ভ্রূণ ও নবজাতকের দেহ মিলেছে বলে ঘোষণা করা হয়।তাতেই বিভ্রান্তি ছড়ায়।খুঁটিয়ে না-দেখেই ভ্রূণ বলে ঘোষণা করা হল কেন? ছাই উড়িয়ে দেখার প্রাথমিক প্রক্রিয়াটুকুকে অবজ্ঞা করার কারণ কী? গোয়েন্দা-প্রধান নিরুত্তর। বিভ্রান্তির দায় কার? তারও সদুত্তর নেই পুলিশের কাছে।

এর মধ্যেই রহস্য ঘোরালো হয়েছে সেই চার শ্রমিককে সরিয়ে দেওয়ায়, যাঁরা রবিবার হরিদেবপুরের মুচিপাড়ায় রাজা রামমোহন রায় রোডের জমিতে ১৪টি প্লাস্টিকের ব্যাগে ভ্রূণ ও শিশুদেহ দেখেছিলেন। তার পরেই তাঁরা জঞ্জাল সাফ করতে অস্বীকার করেন। সেই শ্রমিকেরা ঠিক কী দেখেছিলেন, তা জানতে সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গেলে সাইট ম্যানেজার বাবাই বেরা জানান, ওই চার শ্রমিককে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়েছে! কেন? জবাব মেলেনি। প্রশ্ন উঠছে, সত্যিটা কী, তা জানেন বলেই কি চার শ্রমিককে সরে যেতে হল? যদি তা-ই হয়, সত্য গোপনের তাগিদেই কি বিভ্রান্তির সমূহ সম্ভাবনা সত্ত্বেও বয়ান বদলানো হয়েছে?

রবিবার ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন সিপি রাজীব কুমার, গোয়েন্দা-প্রধান প্রবীণ ত্রিপাঠী। সন্ধ্যায় ডিসি (দক্ষিণ-পশ্চিম) নীলাঞ্জন বিশ্বাস জানান, মানবভ্রূণ ও নবজাতকের দেহ পাওয়া গিয়েছে। পরে তিনিই ফের জানান, এমআর বাঙুর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, প্লাস্টিকের ব্যাগে মিলেছে ‘ড্রাই আইস’। আরও পরে গোয়েন্দা-প্রধান জানান, ব্যাগে চিকিৎসা-বর্জ্য পাওয়া গিয়েছে।

ধোঁয়াশা হরিদেবপুরে

•হরিদেবপুর ভ্রূণ-কাণ্ডে এত বিভ্রান্তি কেন? তার জন্য দায়ী কে বা কারা?

• পুলিশের দাবি, কাউন্সিলর ফোনে জানান, নবজাতকের দেহ মিলেছে।

• কাউন্সিলর সোমা চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘সাইট ম্যানেজার বলেন, শ্রমিকেরা নবজাতকের দেহ পেয়েছেন। সেটাই পুলিশকে বলি।’’

•কিন্তু পুলিশ পরীক্ষা না-করিয়েই ভ্রূণের কথা ঘোষণা করল কেন?

• পুলিশের দাবি, আপাতদৃষ্টিতে ‘নবজাতক’ মনে হয়েছিল। ভিড় এড়াতে পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়।

• পরীক্ষা করানোর আগে সংবাদমাধ্যমকে বলা হল কেন?

• গোয়েন্দা-প্রধান প্রবীণ ত্রিপাঠী জবাব দেননি।

এই বিভ্রান্তি কেন? পুলিশের একাংশ সোমবার যুক্তি দেখায়, ব্যাগে রক্তমাখা ‘অ্যাডাল্ট ডায়াপার’ ছিল। প্লাস্টিকের উপর থেকে দেখে মনে হয়েছিল, সেগুলো ভ্রূণ বা নবজাতকের দেহ। আর তা থেকেই ছড়িয়েছে যাবতীয় বিভ্রান্তি।

পরীক্ষা তো করেছিলেন অভিজ্ঞ পুলিশকর্তা ও গোয়েন্দারা। জিনিসটা কী, তাঁরা বুঝতে পারলেন না কেন? সদুত্তর মেলেনি। তবে পুলিশের একাংশ মানছে, ভিতরে কী আছে, ব্যাগ খুলে পরীক্ষা করার পরেই তা ঘোষণা করা উচিত ছিল। উপস্থিত বড়কর্তারাও ব্যাগ খুলে দেখতে পারতেন। দেখেননি কেন? এমন একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনায় তাবড় পুলিশকর্তারা উদ্ধার করা বস্তু পরীক্ষা করবেন না, এটা কি আদৌ সম্ভব?

তদন্তকারীদের একটি সূত্রের দাবি, ব্যাগ খুললে প্রমাণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় তা তড়িঘড়ি বাঙুর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। কিছু বলার থাকলে ডাক্তারি পরীক্ষার পরেই বলা উচিত বলে মনে হয়েছিল তাঁদের। তা হলে কার নির্দেশে বলে দেওয়া হল যে, ভ্রূণ ও শিশুদেহ মিলেছে? পুলিশ নিরুত্তর।

ঘটনাচক্রে ওই জমিতে আগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন স্থানীয় ১২২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সোমা চক্রবর্তী। পরে যান মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও। এবং পুলিশের ঘোষণার আগেই মেয়র বলেন, ‘‘১৪টি ব্যাগে নবজাতকের দেহ মিলেছে। গন্ধ এড়াতে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছিল।’’ সোমাদেবীর একই সুর। অনেকেরই প্রশ্ন, মেয়র ও কাউন্সিলরের বক্তব্যকে মান্যতা দিতেই কি পুরোপুরি খতিয়ে দেখার আগে পুলিশ ওই ঘোষণা করেছিল?

পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘বিভ্রান্তি একটা হয়েছিল ঠিকই। তবে এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও ব্যাপার নেই।’’ সোমাদেবী এ দিন বলেন, ‘‘সাইট ম্যানেজারের ফোন পেয়ে ওখানে যাই। তবে ঘটনাস্থল থেকে দূরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। শ্রমিকেরা কিছু মোড়ক দেখিয়ে বলে, তাতে সদ্যোজাতের দেহ রয়েছে। আমি নিজে পরীক্ষা করিনি।’’

পুলিশকর্তারা পরীক্ষা করেননি। পুরপ্রতিনিধি পরীক্ষা করেননি। তা হলে ওগুলো যে নবজাতকের দেহ এবং ভ্রূণ, সেটা দেখল কে বা কারা? কেনই বা কয়েক জনের অনুমান বা সন্দেহের ভিত্তিতে দেহ ও মানবভ্রূণ পাওয়ার কথা ঘোষণা করল পুলিশ?

উত্তর দেওয়া দূরের কথা, গোয়েন্দা-প্রধান ফোনই ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপ বার্তারও জবাব দেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তিনি শুধু জানান, এই তদন্তে নতুন করে আর কিছু জানা যায়নি!

Investigation Confussion Embryo Medical Waste
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy