Advertisement
১৯ মে ২০২৪

পুলিশকে বাস দিতে নারাজ মালিকেরা

দিনের আয় নেমে আসে প্রায় চার ভাগের এক ভাগে। লাভের গুড় তো দূর অস্ত্‌, চালক-কন্ডাক্টরকে মজুরি দিতেই কালঘাম ছোটে। তাই এ বছর পুজোয় কলকাতা পুলিশকে বাস ভাড়া দিতে নারাজ বেসরকারি বাস মালিকেরা।

সুপ্রিয় তরফদার
শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৪৩
Share: Save:

দিনের আয় নেমে আসে প্রায় চার ভাগের এক ভাগে। লাভের গুড় তো দূর অস্ত্‌, চালক-কন্ডাক্টরকে মজুরি দিতেই কালঘাম ছোটে। তাই এ বছর পুজোয় কলকাতা পুলিশকে বাস ভাড়া দিতে নারাজ বেসরকারি বাস মালিকেরা। সম্প্রতি কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে নিজেদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন বেসরকারি বাস মালিক সংগঠন জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটস। তাদের সমর্থন জানিয়েছে অন্য সংগঠনগুলিও। লালবাজারের এক কর্তার অবশ্য সাফ কথা, ‘‘ভাড়া আমরা ঠিক করি না। ঠিক করে রাজ্য সরকার। আমাদের কিছু করার নেই।’’

লালবাজার সূত্রে খবর, প্রতি উৎসব ও পুজোতেই বাস ভাড়া নেয় কলকাতা পুলিশ। পুজোর পাঁচ দিন বাসগুলি থাকে পুলিশের হেফাজতেই। বদলে দিন-প্রতি হিসেবে মালিকদের ভাড়া দেয় পুলিশ। যেটি সাধারণত এক হাজারের কিছু বেশি বা কম। মিনিবাসের ক্ষেত্রে তা দিন-পিছু পাঁচশো টাকা। জ্বালানির খরচ বহন করে পুলিশই। তাতেও এই ভাড়া যে পর্যাপ্ত নয়, তা-ই কমিশনারকে চিঠিতে জানান বেসরকারি বাস মালিকেরা। অনিচ্ছুক বাস মালিকদের থেকে জোর করে বাস নেওয়ার প্রক্রিয়াটি বেআইনি বলেও চিঠিতে দাবি করেছেন জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটসের নেতারা। এর পরেও পুলিশ জোর করে বাস নিলে আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে হুমকিও দিয়ে রেখেছেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘পরিবহণ কর্তা ও পুলিশের সঙ্গে এই নিয়ে বৈঠক হয়েছিল লালবাজারে। কিন্তু পুলিশ এ নিয়ে আর কিছু জানায়নি। আমাদের প্রশ্ন, সরকার যদি সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকদের যোগ্য সম্মান দিতে পারে, তা হলে অনিচ্ছুক বাসমালিকেরাই বা কী দোষ করল!’’

বাস মালিকদের অভিযোগ, জোর করে পুলিশ বাস তুলে নেওয়ায় রাস্তায় বাসের আকাল পড়ে যায়। তপনবাবু জানান, আর পাঁচটা দিনে রাস্তায় বাস চললে গড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হয়। চালক ও কন্ডাক্টরকে মোট ২৪ শতাংশ কমিশন দিতে হয়। এর পরে ব্যাঙ্ককে দেয় ঋণশোধের কিস্তি, জ্বালানির খরচ তো আছেই। কিন্তু পুলিশ বাস ভাড়া করলে মালিকের হাতে আসে ন’শো থেকে এক হাজার টাকা। ওই টাকা থেকে চালক ও কন্ডাক্টরকে অন্তত চারশো থেকে পাঁচশো টাকা দিতে হয়। তার পরে যা পড়ে থাকে তাতে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, দাবি মালিকদের।

পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, যাত্রিবাহী বাসগুলিকে যখন পারমিট দেওয়া হয় তখন উৎসবে পুলিশের ভাড়া করার বিষয়টি উল্লেখ থাকে না। বাস মালিকদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে বাস ভাড়া হয়। এ বার ওই অস্ত্রটিকেই ব্যবহার করতে চাইছে সংগঠনগুলি। এ ছাড়া পুলিশ যে টাকা দেয় তার পরিমাণ কম হওয়া বেশির ভাগ সময়েই বাস মালিকদের সঙ্গে সমঝোতা হয় না বলে অভিযোগ। এক প্রকার অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাস মালিকেরা বাধ্য হয়েই পুলিশকে বাস দেয়। ভোগান্তি হয় মানুষের।

সংগঠনের এক কর্তা বলেন, ‘‘বন্‌ধ ব্যর্থ করার লক্ষ্যে সরকার যাত্রী পরিষেবা দিতে রাস্তায় বাস নামাতে বলেছিল। সরকারই উৎসবের সময়ে বাস তুলে নেয়। তখন বাস মালিক ও যাত্রীদের স্বার্থ কেন দেখা হয় না?’’

মিনিবাস অপারেটর্স কোঅপারেটিভ কমিটির-র তরফে অবশেষ দাঁ বলেন, ‘‘আমরা তপনবাবুর সঙ্গে একমত। পুলিশ আমাদের মিনি বাস নিলে বাস পিছু চারশো টাকা করে দেয়। চালক ও কন্ডাক্টরকেই দিতে হয় পাঁচশো টাকা। ফলে লাভ তো হয়ই না, উল্টে পকেট থেকে আরও একশো টাকা ‌বেরিয়ে যায়।’’ বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট–এর সহ সভাপতি দীপক সরকার বলেন, ‘‘পুলিশ হোক বা সরকার যদি এ ভাবে বাস নেয় তার জন্যে নির্দিষ্ট পদ্ধতি এবং নির্দিষ্ট আর্থিক কাঠামো থাকা প্রয়োজন। না হলে এ ভাবে বাস চালানোই মুশকিল।’’

ট্রাফিক পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ভাড়ার বিষয়ে বাসমালিকেরা সরকারকে জানাতে পারেন। আমাদের কিছুই করার নেই।’’ যদি বাস ভাড়া না দিতে চায় তা হলে কী করবেন? প্রশ্নের উত্তরে ওই কর্তা বলেন, ‘‘সেটা তখন দেখা যাবে।’’ বাস মালিকেরা অবশ্য তাদের অবস্থানেই অনড়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bus Calcutta police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE