Advertisement
০৭ মে ২০২৪

জঙ্গি আতঙ্ক সামলাতে কেমন প্রস্তুতি

গত মঙ্গলবার কলকাতা স্টেশন থেকে দুই বাংলাদেশি জঙ্গি-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে লালবাজারের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। পাশাপাশি, হাওড়ার দুই হোটেলে তিন জন সন্দেহভাজন বাংলাদেশিকে আশ্রয় নিতে দেখা গিয়েছে।

শিয়ালদহের এমন হোটেলগুলি নিয়েই চিন্তায় পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

শিয়ালদহের এমন হোটেলগুলি নিয়েই চিন্তায় পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

মেহবুব কাদের চৌধুরী
শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৫৭
Share: Save:

হাওড়ার হোটেলে সন্দেহভাজন জঙ্গির আশ্রয় নেওয়ার ঘটনায় কপালে ভাঁজ কলকাতা পুলিশেরও। শহরের মধ্যে ব্যস্ততম স্টেশন চত্বর শিয়ালদহ। পুলিশ সূত্রের খবর, মুচিপাড়া থানার অন্তর্গত শিয়ালদহ স্টেশনের আশপাশের এলাকায় প্রায় একশোটি ছোটবড় হোটেল রয়েছে। নিত্যদিন প্রচুর মানুষ এই সমস্ত হোটেলে এসে ওঠেন। পুলিশ জানিয়েছে, এখানকার প্রায় দশ শতাংশ লজে এখনও সিসি ক্যামেরা নেই। সম্প্রতি হাওড়ার দু’টি হোটেলে জঙ্গিদের আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা জানাজানির পরে কলকাতা পুলিশ নিরাপত্তায় বিন্দুমাত্র খামতি রাখতে নারাজ। ফলে শিয়ালদহ স্টেশন সংলগ্ন সমস্ত হোটেল, লজে সিসি ক্যামেরা বসানোর পাশাপাশি ক্যামেরার সংখ্যা বাড়াতেও নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা পুলিশ।

কলকাতা পুলিশের ডিসি (এসটিএফ) মুরলীধর শর্মা রবিবার বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক ঘটনার পরে শহরের হোটেল, লজগুলিতে এখন বা়ড়তি নজরদারি রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে শহরের প্রতিটি থানাকে। বিশেষত শিয়ালদহ স্টেশন লাগোয়া হোটেল, লজগুলিতে আরও বেশি করে সিসি ক্যামোরা বসানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

গত মঙ্গলবার কলকাতা স্টেশন থেকে দুই বাংলাদেশি জঙ্গি-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে লালবাজারের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। পাশাপাশি, হাওড়ার দুই হোটেলে তিন জন সন্দেহভাজন বাংলাদেশিকে আশ্রয় নিতে দেখা গিয়েছে। তিন সন্দেহভাজনের খোঁজে শহরের বিভিন্ন হোটেলেও তল্লাশি শুরু করেছে এসটিএফ। রবিবার শিয়ালদহের একাধিক হোটেল, লজ ঘুরে সেখানকার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গত সপ্তাহে জঙ্গি গ্রেফতারের ঘটনার পরে পুলিশ ‘চেকিং’ বে়ড়েছে। একটি হোটেলের এক কর্মীর কথায়, ‘‘এখন শুধুই পরিচয়পত্র দেখছি না। অতিথিদের ভাল করে পরখ করে তবেই তাঁদের ঠাঁই দিচ্ছি। সাবধানের মার নেই।’’ লালবাজারের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘শিয়ালদহ ও ধর্মতলা তল্লাটের বিভিন্ন হোটেল কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত ভিজিটার্স রেকর্ড বুক আপডেট করে রাখতে বলা হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট থানা হোটেলগুলিতে সেই খাতা পরীক্ষা করবেন।’’

এক সময়ে শিয়ালদহ স্টেশন সংলগ্ন হোটেলগুলিতে দেহ ব্যবসার রমরমা নিয়েও একাধিক অভিযোগ উঠেছে। শিয়ালদহ চত্বর আগে হেরোইন ও অন্যান্য নেশার কারবারিদেরও স্বর্গরাজ্য ছিল। গত কয়েক বছর থেকে এখন পুলিশি তৎপরতায় সেই সব অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এলেও জঙ্গি অনুপ্রবেশ পুলিশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। গত ১-৩ অক্টোবর ও ১২-১৪ অক্টোবর হাওড়ার ডবসন রোডের হোটেলে থাকা তিন জঙ্গি উত্তর চব্বিশ পরগনার বাজিতপুরের বাসিন্দা হিসেবে নিজেদের আধার কার্ড দিয়েছিল। কলকাতা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘জঙ্গিরা যে ভাবে ছদ্মবেশে আধার কার্ড বানিয়ে ঢুকে প়ড়েছে, তাতে আমাদের উদ্বেগ বেড়েছে। এর মোকাবিলার জন্য পুলিশি নজরদারি বা়ড়ানোর পাশাপাশি, হোটেল মালিকদেরও সজাগ থাকতে বলা হয়েছে।’’ তবে শিয়ালদহ চত্বরের এক হোটেলের মালিক এ দিন বলেন, ‘‘হোটেলে ঢোকার সময়ে আমরা অতিথিদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড বা ড্রাইভিং লাইসেন্সের মূল কপির জেরক্স নিজেদের কাছে রাখি। কিন্তু এর বেশি যাচাই করার ক্ষমতা আমাদের কোথায়?’’

পুলিশ সূত্রে খবর, কলকাতায় আসা বেশির ভাগ বাংলাদেশি প্রধানত নিউ মার্কেট থানা এলাকার মার্কুইস স্ট্রিটে থাকেন। তবে শিয়ালদহ স্টেশন সংলগ্ন হোটেলেও অনেক বাংলাদেশি আশ্রয় নেন। তাঁদের থেকে পাসপোর্ট বা ভিসার জেরক্স নেওয়া হয়। হাও়ড়ার ঘটনা এড়াতে সন্দেহভাজন কাউকে হোটেলে দেখলেই পুলিশকে সঙ্গে সঙ্গে খবর দিতে বলা হয়েছে সব হোটেল কর্তৃপক্ষকে। পুলিশ সূত্রের খবর, শিয়ালদহের যে সব হোটেলে এখনও সিসি ক্যামেরা নেই, সেখানে অবিলম্বে তা বসাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Security terror attack
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE