মহম্মদ ইরফান
কিছুতেই আফশোস যাচ্ছে না মহম্মদ এখলাকের। দু’সপ্তাহ কেটে যাওয়ার পরেও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দাদার কোনও খোঁজ না মেলায় তাঁর এখন মনে হচ্ছে, পিছন থেকে না ডাকলেই ভাল হত। কান্নাজড়ানো গলায় এখলাক বলেন, ‘‘আমি বুঝতে পারিনি আমার ডাক শুনেই ও ভাবে জলে ঝাঁপ দেবে দাদা। এখন মনে হচ্ছে, না ডাকলেই ভাল হত। হাওড়া ব্রিজটা পেরোনোর পরে ডাকা যেত। আমি তো ওকে বাঁচানোর জন্যই ডেকেছিলাম!’’
গত ১ ফেব্রুয়ারি হাওড়া ব্রিজের ৩৫ নম্বর স্তম্ভের সামনে থেকে গঙ্গায় ঝাঁপ দেন মেটিয়াবুরুজের বাসিন্দা মহম্মদ ইরফান। তার পর থেকেই আর খোঁজ মেলেনি ৩৫ বছর
বয়সি ইরফানের। ঘটনার দিন জেট-স্কি, স্পিড বোট ও লঞ্চ নিয়ে গঙ্গায় খোঁজ চালানো হলেও ইরফানের কোনও হদিস মেলেনি। তার পরেও ইরফানের খোঁজ চালানো হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাতেও কোনও লাভ হয়নি।
ইখলাক জানালেন, ঘটনার দিন খুব ভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন ইরফান। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ অন্য এক ব্যক্তির ফোন থেকে বাড়িতে যোগাযোগ করে ইরফান স্ত্রীকে বলেন, ‘‘ছেলে-মেয়ের খেয়াল রাখো। আমি অনেক দূরে যাচ্ছি।’’ এর পরে ফোন রেখে দেন তিনি। ওই নম্বরেই ফোন করে জানা যায়, ইরফান হাওড়ায় রয়েছেন।
দাদার কথা ফোনে ইখলাককে জানান ইরফানের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা। এখলাক দাদাকে খুঁজতে হাওড়ায় পৌঁছন। এখলাক বললেন, ‘‘হাওড়ায় পৌঁছে দেখি, ব্রিজের উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে দাদা। আমি ডাকতেই দৌড়ে গিয়ে গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে দেয় ও। কিছুই করতে পারলাম না।’’ তার পর থেকে এখলাক নিজেকেই দোষারোপ করছেন। সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। ইরফানের বাজারে কোনও দেনা ছিল না। তাঁদের বাড়িতে কেউই ক্যানসারে মারা যাননি বলেও দাবি এখলাকের। তিনি বললেন, ‘‘সকলে বলছেন, আমাদের বাড়িতে অনেকে ক্যানসারে মারা গিয়েছেন। তাঁদের চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে গিয়ে দেনা হয়ে গিয়েছিল দাদার। সব মিথ্যা। ভুল কথা প্রচার করা হচ্ছে। এ সব না বলে আমার দাদাকে খুঁজতে সাহায্য করুন।’’
তা হলে এ ভাবে বাড়ি ছে়ড়ে বেরিয়ে যাওয়ার কারণ কী?
মেটিয়াবুরুজের পাথরপোতা লেন এলাকায় বাড়ি ইরফানের। স্ত্রী রাজিয়া ছাড়াও বাড়িতে রয়েছে তাঁদের এক ছেলে এবং এক মেয়ে। দু’জনেই স্কুলে পড়ে। তাঁর আত্মীয়েরা
জানালেন, ছেলের স্কুলে বেতনের কিছু টাকা বাকি ছিল ঠিকই, তবে তা খুবই কম। তাকে দেনা বলতে নারাজ ওই আত্মীয়েরা। বরং তাঁদের দাবি, অটোচালক ইরফান একটি নতুন অটোর পারমিট পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তা নিয়েই বেশ কয়েক দিন থেকে চিন্তিত ছিলেন তিনি। সেই সংক্রান্ত কোনও ঝামেলার জন্য ইরফান বাড়ি ছেলে চলে গিয়েছিলেন কি না, তাঁরা বলতে পারছেন না। মহম্মদ ইকবাল নামে এক আত্মীয় বললেন, ‘‘ভাইকে খুঁজতে সাহায্য করুন। দয়া করে ভুল কিছু প্রচার করবেন না।’’
স্বামীর অপেক্ষায় থাকা ইরফানের স্ত্রী রাজিয়া বললেন, ‘‘কেউ কেউ বলছেন, আমার সঙ্গে ওর ঝগড়া হয়েছিল। বিশ্বাস করুন, কোনও ঝগড়া হয়নি। আমার বাচ্চাগুলোর কথা ভেবে অন্তত ওকে ফিরিয়ে এনে দিন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy