Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

নষ্ট হচ্ছে অজস্র শিক্ষা দিবস, খোঁজ নেবে কে

বাচ্চাদের সঙ্গে ঠেলাঠেলি করে বিশ্ববিদ্যালয় পৌঁছতে হবে। কিন্তু অবাক হলাম ফাঁকা বাস দেখে। বাড়ি থেকে কর্মস্থলের মধ্যে চারটে স্কুল রয়েছে।

পুলক রায়চৌধুরী (প্রধান শিক্ষক, কনকনগর এস ডি ইনস্টিটিউশন)
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৯ ০৩:১৯
Share: Save:

ঘূর্ণিঝড় ফণীর আশঙ্কা, তাপপ্রবাহ এবং গ্রীষ্মকালীন ছুটি— সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ দিন পরে চালু হল রাজ্যের সরকারি বা সরকার পোষিত সমস্ত প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুল। কিন্তু স্কুল খোলার এই প্রথম দিনে পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার কেমন ছিল, তা খোঁজ নেওয়ার কেউ কি আছেন?

“একশো জনের মধ্যে মেরেকেটে দশ-পনেরো জন স্কুলে এসেছিল! এই ভাবে স্কুল চালানো যায় নাকি? তাই মিড-ডে মিল খাইয়েই ওদের ছুটি দিয়ে দিতে হল!”— আক্ষেপ করছিলেন বসিরহাট অঞ্চলের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। বাসের নিত্যযাত্রী, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপিকা মেরুনা মুর্মু বলেন, “অনেক দিন পরে মনে আশঙ্কা নিয়েই বেরিয়েছিলাম যে আজ থেকে আবার ভিড় বাসে স্কুলের

বাচ্চাদের সঙ্গে ঠেলাঠেলি করে বিশ্ববিদ্যালয় পৌঁছতে হবে। কিন্তু অবাক হলাম ফাঁকা বাস দেখে। বাড়ি থেকে কর্মস্থলের মধ্যে চারটে স্কুল রয়েছে। শুধু যাদবপুর বিদ্যাপীঠের উঁচু ক্লাসের কিছু ছাত্র ছাড়া বাকি কোনও স্কুলের পড়ুয়াকে দেখলাম না। কলকাতারই যদি এই হাল হয়, তবে জেলার স্কুলের হাল কেমন, সেটা অনুমান করা যায়!”

সুতরাং, লম্বা একটা ছুটির পরে বসিরহাট থেকে বালুরঘাট, দিনাজপুর থেকে যাদবপুর, সর্বত্র আরও একটি শিক্ষা দিবস নষ্ট হল সবার চোখের সামনে। এই নিয়ে কিন্তু কোথাও কোনও চর্চা হল না। যেটুকু হল বা হচ্ছে তা রাজনৈতিক! যদিও এ ব্যাপারে বসিরহাটের অবস্থা ইদানীং অনেকটাই খারাপ! রাজনৈতিক অতি সংবেদনশীলতার বলি এখন শুধু বসিরহাটের মানুষ নন, বসিরহাটের শিক্ষা ব্যবস্থাও। রাজনৈতিক আস্তিনের ভিতরে লুকনো সাম্প্রদায়িক অস্থিরতার জেরে মাঝেমধ্যেই সেখানে ইন্টারনেট পরিষেবার সাথে বন্ধ করে দিতে হচ্ছে স্কুল-কলেজগুলোও। বন্ধের আগাম কোনও নোটিস না থাকায় বিঘ্নিত হচ্ছে স্কুল-কলেজের পরীক্ষা, পঠনপাঠন এবং সর্বোপরি শিক্ষার নিশ্চিন্ত পরিবেশ।

রেল অবরোধের কারণে মাঝেমধ্যেই দশ, পনেরো, কুড়ি জন ছাত্রছাত্রী মিলে একটা ইঞ্জিন-ভ্যান ভাড়া করতে বাধ্য হচ্ছে। দুর্ঘটনার আশঙ্কা উপেক্ষা করে পরীক্ষাকেন্দ্রের দিকে ছুটছে। ভ্যানের চালককে হয়তো বলছে, ‘‘কাকু আর একটু জোরে চালান। আমাদের পরীক্ষা আছে। দেরি হয়ে গেলে একটা বছর নষ্ট হবে।” মালতীপুর স্টেশন থেকে খোলাপোতা বাজার, সেখান থেকে বসিরহাট। অথবা মালঞ্চ থেকে টাকি কলেজ পৌঁছনোর দীর্ঘ রাস্তা। গোটা বসিরহাটের রাস্তায় রাস্তায় টায়ার জ্বলছে, পতাকা দিয়ে ব্যারিকেড বানিয়ে অবরোধ চলছে, মিছিল চলছে মাঝেমধ্যেই। থমকে যাচ্ছে সেখানকার শিক্ষা ব্যবস্থা। একটা একটা করে অনেকগুলি শিক্ষা দিবস সবার চোখের সামনেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বসিরহাট থেকে এই রোগ সংক্রামিত হচ্ছে রাজ্যের আরও অজস্র জনপদে। এর পরেও কি খোঁজ নেওয়ার কেউ নেই?

কিছু দিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় জাপানের একটি রেল স্টেশনের ছবি দেখা গিয়েছিল। হোক্কাইডো শহরের কিউ-শিরাটাকি রেল স্টেশন। শুধু একটি ছাত্রী স্কুলে যাবে বলে আস্ত একটি বুলেট ট্রেন দিনে দু’বার যাতায়াত করত সেই স্টেশন দিয়ে। একটি মাত্র মেয়ের শিক্ষা যাতে থমকে না যায়, তার জন্য একটি রাষ্ট্র এই ব্যবস্থা করতে পেরেছিল। আমাদের বসিরহাট পারে না? আমাদের রাজ্য পারে না?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education Head Master Summer Holiday
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE