Advertisement
E-Paper

চুলোয় যাক পুল, দাবি তুলে মামলা ও মিছিল

নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য সেতু, রাস্তা বা উড়ালপুল নির্মাণের দাবিতে স্থানীয় মানুষ সরব হন। প্রয়োজনে কমিটি বা সমিতি তৈরি করে পথেও নামেন। সাধারণ রেওয়াজ এটাই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:২৬

গড়ে তোলার দরবার নয়। ভেঙে ফেলার দাবি।

নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য সেতু, রাস্তা বা উড়ালপুল নির্মাণের দাবিতে স্থানীয় মানুষ সরব হন। প্রয়োজনে কমিটি বা সমিতি তৈরি করে পথেও নামেন। সাধারণ রেওয়াজ এটাই।

কিন্তু পোস্তায় নির্মীয়মাণ বিবেকানন্দ উড়াপুল ভেঙে পড়ার পরে ‘উড়ালপুল হটাও অভিযান সমিতি’ গড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের দাবি, ঢের হয়েছে! আর উড়ালপুল চাই না। যেটুকু আছে, সেটাও ভেঙে দেওয়া হোক। নিছক কাগজেকলমে দাবি জানিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছেন না তাঁরা। একেবারে দ্বিমুখী তৎপরতার সাঁড়াশি চাপ তৈরি করা হচ্ছে। ওই উড়ালপুল নির্মাণের বিরোধিতা করে সমিতি কাল, রবিবার এলাকায় মিছিল করছে। উড়ালপুল না-ভাঙলে রাস্তায় ধর্নায় বসবেন বলেও জানায় তারা। একই সঙ্গে ওই উড়ালপুল পুরোপুরি ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়ে বাসিন্দাদের একাংশের পক্ষ থেকে শুক্রবার হাইকোর্টে মামলাও রুজু করা হয়েছে। প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টেও যেতে তৈরি সমিতি।

সমিতির সদস্যেরা মূলত বিবেকানন্দ রোড ও কালীকৃষ্ণ ঠাকুর রোডের বাসিন্দা। তাঁদের সাফ কথা, পুলের দু’কিলোমিটারেরও বেশি যে-অংশটি এখনও হাওড়া থেকে গিরিশ পার্ক পর্যন্ত মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে, সেটাও ভাঙতে হবে। গত ৩১ মার্চ, পোস্তায় উড়ালপুল ভেঙে পড়ার দিনেই বাসিন্দাদের একাংশ জানিয়ে দেন, তাঁরা ওই উড়ালপুল চাইছেন না। উড়ালপুল হটাও অভিযান সমিতি মাঠে নামায় তাঁদের দাবি জোরদার হবে বলে এলাকাবাসীর আশা।

উড়ালপুল ভেঙে পড়ার ঘটনায় এ দিন একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানি ছিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের ডিভিশন বেঞ্চে। জিপি (গভর্নমেন্ট প্লিডার) অভ্রতোষ মজুমদার জানান, এই ব্যাপারে রাজ্য সরকার একটি সবিস্তার রিপোর্ট দেবে আদালতে। প্রধান বিচারপতি তিন সপ্তাহের মধ্যে সেই রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দেন। মামলার আবেদনকারীদের কৌঁসুলিরা আদালতে আর্জি জানান, কী কারণে, কার গাফিলতিতে উড়ালপুল ভেঙে পড়ল, ক’জন মারা গিয়েছেন, উড়ালপুলের মালমশলাই বা কেমন ছিল— সরকারের রিপোর্টে যাতে এই সব কিছুরই সবিস্তার উল্লেখ থাকে, সেই নির্দেশ দেওয়া হোক।

উড়ালপুলের ভেঙে পড়া অংশ সরাতে রেলওয়ে বিকাশ নিগম লিমিটেড (আরভিএনএল)-কে দায়িত্ব দিয়েছে কেএমডিএ। সংস্থাটি তিন সপ্তাহ সময় চেয়েছে। তার পরে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে উড়ালপুলের নির্মাণকাজ ফের শুরু হওয়ার কথা।

আর তাতেই আপত্তি বাসিন্দাদের একাংশের। উড়ালপুল হটাও অভিযান সমিতির সদস্য-সংখ্যা এখন প্রায় একশো। তাঁদের কথায়, ‘‘এই পুল আমাদের কাছে আতঙ্ক। নীচ দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হয়, এই বুঝি আবার ভেঙে পড়ল।’’ সমিতির সম্পাদক বাপি দাস বলেন, ‘‘এই উড়ালপুল স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চার বছর আগেই আমরা উড়ালপুলের নকশা পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। সেই মামলার নিষ্পত্তি এখনও হয়নি।’’ বাপিবাবু জানান, মামলার নিষ্পত্তি না-হওয়া সত্ত্বেও উড়ালপুল নির্মাণের কাজ চলছিল। তাঁর কথায়, ‘‘৩১ মার্চের দুর্ঘটনা দেখিয়ে দিল, আমরাই বিপদ ঠিকঠাক আঁচ করেছিলাম।’’

উড়ালপুল নিয়ে আপত্তি জানিয়ে বাসিন্দাদের তরফে এলাকার বিধায়ক স্মিতা বক্সীকে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল। নকশা পরিবর্তনের আর্জি জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা সরকারের শীর্ষ মহলে বহু বার চিঠি লিখেছেন। কাজ না-হওয়ায় তাঁরা বাধ্য হয়েই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ২০১২ সালে।

মামলাকারীদের পক্ষে আইনজীবী চন্দ্রশেখর ঝা বলেন, ‘‘পুর আইন অনুয়ায়ী দু’টি নির্মাণের মধ্যে কমপক্ষে দশ ফুট দূরত্ব থাকার কথা। কিন্তু বিবেকানন্দ রোডের দু’ধারে বাড়ি ও উড়ালপুলের মধ্যে ফাঁক মাত্র এক ফুট।’’ তাঁর আশঙ্কা, উড়ালপুলে দুর্ঘটনা ঘটলে বাসিন্দারা বড়সড় বিপদে পড়বেন। উড়ালপুলে দাঁড়িয়ে গা-ঘেঁষা বাড়িগুলোয় চুরি-ডাকাতি করতে সুবিধে হবে দুষ্কৃতীদের। আর উড়ালপুল হটাও সমিতির সম্পাদক বাপিবাবুর প্রশ্ন, সেতুর বাকি অংশ যে নিরাপদ, তার প্রমাণ কে দেবে?

কেএমডিএ-র দাবি, বাসিন্দাদের আশঙ্কা ও অভিযোগ ভিত্তিহীন। যে-সব বাসিন্দা উড়ালপুলের বিরোধিতা করছেন, তাঁদের বাড়িই আসলে নিয়ম মেনে তৈরি নয়। বাপিবাবুর পাল্টা সওয়াল, ‘‘কেএমডিএ চাইলে আমাদের বাড়ির নকশা দেখুক। নিজেদের দোষ ঢাকতে ওরা এখন আমাদের বদনাম করছে।’’

Vivekananda Flyover flyover collapse
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy