Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বাইকের বেমানান হেডলাইট চিনিয়ে দিল দুষ্কৃতীদের

ঘটনাস্থল: ইএম বাইপাসের এখান থেকেই ব্যাগ ছিনতাই হয়েছিল ওই তরুণীর। ছবি: সুদীপ ঘোষ

ঘটনাস্থল: ইএম বাইপাসের এখান থেকেই ব্যাগ ছিনতাই হয়েছিল ওই তরুণীর। ছবি: সুদীপ ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৯ ০১:১৮
Share: Save:

হাতে আসা ঘটনাস্থলের আশপাশের সমস্ত সিসি ক্যামেরার ফুটেজই ছিল ঝাপসা। মেলেনি মোটরবাইকের নম্বর বা চালক, সওয়ারিদের কোনও ছবিও। সম্বল বলতে ছিল স্রেফ মোটরবাইকের হেডলাইট। চার দিনের লাগাতার চেষ্টায় ‘অন্য রকম’ দেখতে, আকারে বড় ওই হেডলাইটের সূত্র ধরেই বৃহস্পতিবার রাতে তিন ছিনতাইবাজকে ধরল পুলিশ। ধৃত মহম্মদ জসিম (২৪), মহম্মদ সুকুর (৩৪) এবং বছর কুড়ির মহম্মদ সোনুর কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া ৬০ হাজারের মধ্যে ৫৭ হাজার টাকা এবং একটি দামি মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত গত ২৩ নভেম্বর রাত আড়াইটে নাগাদ। ইএম বাইপাসের একটি ধাবা থেকে বেরিয়ে অ্যাপ-ক্যাবের জন্য অপেক্ষা করছিলেন দিল্লিবাসী তিন তরুণী। তাঁদের গন্তব্য ছিল রাজারহাটের একটি বহুতল। দিল্লি থেকে কাজের সূত্রে কলকাতায় এসে সেখানেই উঠেছিলেন তাঁরা। তবে ওই দিন ‘পিঙ্ক টেস্ট’ চলায় ভিআইপি রোড হয়ে সমস্ত ভিআইপি মুভমেন্টই ছিল ইডেন গার্ডেন্সের দিকে। ফাঁকা রাস্তায় উল্টোডাঙার দিক থেকে আসা একটি মোটরবাইকে সওয়ার তিন যুবক হঠাৎই তরুণীদের মধ্যে এক জনের হাতে থাকা ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। চিৎকার করে লোক ডাকার আগেই চোখের নিমেষে বাইকটি উধাও হয়ে যায়। এলাকাটি মানিকতলা থানার অন্তর্গত হওয়ায় ২৪ নভেম্বর সকালে সেখানে অভিযোগ দায়ের করেন কাজলনারায়ণ সিংহ নামে বছর তেইশের এক তরুণী।

তদন্তে নেমে পুলিশকে প্রথমেই হোঁচট খেতে হয় সিসি ক্যামেরার ঝাপসা ফুটেজ নিয়ে। ভিআইপি রোড হয়ে উল্টোডাঙা সেতু ইএম বাইপাসের যে অংশে শেষ হচ্ছে, তার বাঁ পাশেই ওই ধাবা। ব্যাগ ছিনিয়ে চম্পট দেওয়ার ছবি ধরা পড়লেও বাইকের কারও মুখের ছবি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে বোঝা যায়নি। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘রাতের ধোঁয়াশা ও খারাপ আলোর জন্য কি না জানি না, যে ফুটেজ পেয়েছিলাম, তার সবই ঝাপসা। পরে কোনওমতে বাইকটিকে চিহ্নিত করা যায়।’’

ওই তদন্তকারী জানান, ১৮০ সিসি-র বাইকটির হেডলাইট বেঢপ বড়। প্রস্তুতকারী সংস্থা যে হেডলাইট দেয়, এটা একেবারেই সে রকম নয়। শহরের প্রায় আড়াইশো সিসি ক্যামেরার ফুটেজে এর পরে ওই হেডলাইটের বাইকের খোঁজ শুরু হয়। এক সময়ে পরিস্থিতি দাঁড়ায় ‘খড়ের গাদায় সুচ খোঁজা’র মতো। তদন্ত কিছু দূর এগোনোর পরে সেই বাইকও কাহিনি থেকে অন্তর্হিত হয়।

পুলিশ সূত্রের খবর, ব্যাগ ছিনিয়ে বাইকটি কাদাপাড়া মোড়ের কাছ থেকে সল্টলেকের দিকে যায়। এর পরে দক্ষিণদাঁড়ি পর্যন্ত ফুটেজ মিললেও তার পরে আর বাইকের ছবি পাওয়া যায়নি। এর পর থেকেই তদন্ত অন্য মোড় নেয়। তত দিনে চালকের ছবি মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল তদন্তকারীদের কাছে। সোনাগাছিতে ঢোকার রাস্তার মুখের একটি সিসি ক্যামেরায় হঠাৎই ওই যুবকের ছবি পাওয়া যায়। দেখা যায়, ঘটনার রাতেই একটি অ্যাপ-ক্যাবে চড়ে সোনাগাছির সামনে নামছে ওই যুবক। দ্রুত ওই এলাকায় হানা দেয় পুলিশ। সূত্র মারফত খবর নিয়ে ওই রাতে যুবক যে মহিলার সঙ্গে ছিলেন তাঁর সঙ্গেও কথা বলা হয়। সেখান থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই খোঁজ লাগায় পুলিশ।

বৃহস্পতিবার রাতে দক্ষিণদাঁড়ি থেকেই গ্রেফতার করা হয় জসিমকে। তাকে জেরা করে ধরা হয় সুকুর ও সোনুকে। দক্ষিণদাঁড়ি পর্যন্ত গিয়ে সেই রাতে বাইক রেখে বেরিয়েছিল জসিম। ছিনতাই করা টাকার কিছুটা সে খরচ করে সোনাগাছিতে। এই তিন জনের দল আরও কোনও ঘটনায় যুক্ত ছিল কি না, এখন তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Snatching Kolkata Police CCTV Footage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE