Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

চল্লিশ মিনিটেও মিলল না ট্রলি, মৃত্যু বৃদ্ধের

ঘটনার জেরে সাময়িক ভাবে কাজ বন্ধ রেখে সুপার রঘুনাথ মিশ্রের কার্যালয়ে যান জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা ওই বেসরকারি সংস্থার কর্মীরা।

মোতায়েন: রোগীর মৃত্যুর পরে এসএসকেএম চত্বরে পুলিশ। (ডানদিকে) হাসপাতাল চত্বরে সিসি ক্যামেরা ঠিক করছেন এক কর্মী। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

মোতায়েন: রোগীর মৃত্যুর পরে এসএসকেএম চত্বরে পুলিশ। (ডানদিকে) হাসপাতাল চত্বরে সিসি ক্যামেরা ঠিক করছেন এক কর্মী। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৯ ০৪:১১
Share: Save:

ব্যবধান মাত্র তিরিশ দিনের। সরকারি হাসপাতালে রোগী-মৃত্যুর ঘটনায় ফের সময়ে পরিষেবা না পাওয়ার অভিযোগ উঠল। যার জেরে রোগীর পরিজনেদের মারে রক্তাক্ত হয়ে ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন জরুরি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী। এন আর এসের পরে এ বার ঘটনাস্থল এসএসকেএম।

৬৯ বছরের বৃদ্ধ নারায়ণচন্দ্র বাগচী সকাল থেকে বুকের ব্যথায় অস্বস্তি বোধ করছিলেন। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা নাগাদ জগাছার বাসিন্দা অসুস্থ বৃদ্ধকে এসএসকেএমের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন পরিজনেরা। বৃদ্ধের ছেলে সৌরভ বাগচী জানান, চিকিৎসকেরা নারায়ণবাবুকে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু অভিযোগ, ঠায় ৪০ মিনিট অপেক্ষা করার পরেও তাঁরা ট্রলি পাননি। এরই মধ্যে শৌচাগার যেতে চান নারায়ণবাবু। উপায় না দেখে অসুস্থ বৃদ্ধকে হাঁটিয়ে জরুরি বিভাগ থেকে খানিক দূরে শৌচাগারে নিয়ে যান পরিজনেরা। সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে ফের ট্রলির জন্য বাড়ির লোকজন জরুরি বিভাগে ছোটেন। শেষমেশ রোগীর কাছে ট্রলি যতক্ষণে পৌঁছয়, ততক্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

অভিযোগ, এর পরেই জরুরি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থার চতুর্থ শ্রেণির কর্মী অমৃত রায়ের উপরে চড়াও হন নারায়ণবাবুর ভাই জয়ন্ত বাগচী। বেসরকারি সংস্থার রক্ষীদের উদ্দেশে গালিগালাজও করেন মৃত রোগীর আত্মীয়েরা। পুলিশ সূত্রের খবর, জয়ন্তবাবু অমৃতের মুখে ঘুসি মারলে তাঁর কানের নীচ থেকে রক্ত বেরোতে থাকে। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ওই কর্মীর সিটি স্ক্যান করানো হয়। পরে ‘ইনস্টিটিউট অব ওটোরাইনোল্যারিঙ্গোলজি অ্যান্ড হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি’ বিভাগে অমৃতকে ভর্তি করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।

ঘটনার জেরে সাময়িক ভাবে কাজ বন্ধ রেখে সুপার রঘুনাথ মিশ্রের কার্যালয়ে যান জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা ওই বেসরকারি সংস্থার কর্মীরা। ক্ষুব্ধ কর্মীরা জানিয়েছেন, আগে ‘ইমার্জেন্সি ট্রলি পার্সন’ হিসেবে প্রতি শিফটে ১২ জন কর্মী ছিলেন। এখন তা সাকুল্যে চার জনে ঠেকেছে। রোগীকে ওয়ার্ডে ভর্তি, বহির্বিভাগে নিয়ে যাওয়া, বিবিধ পরীক্ষা করানো এবং গুরুতর অসুস্থ রোগীকে এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তাঁদেরই। হাতেগোনা কর্মীর পক্ষে রোগীর বিপুল চাপ সামলাতে গিয়ে অনেক সময়ে দেরি হয় বলে বক্তব্য বিক্ষুব্ধ কর্মীদের। একই সঙ্গে এসএসকেএমের মতো হাসপাতালে পর্যাপ্ত ট্রলিও নেই বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

বস্তুত, এন আর এস-কাণ্ডের পরে এ ধরনের পরিস্থিতি রোধে প্রশাসনের তরফে যে আশ্বাস মিলেছিল, এ দিনের ঘটনা তার সারবত্তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। গন্ডগোলের খবরে এ দিন ঘটনাস্থলে যান কলকাতা পুলিশের ডিসি (কমব্যাট) নভেন্দ্র সিংহপাল। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, রোগীর পরিজন আচমকা মারধর করায় রক্তপাত এড়ানো যায়নি। তবে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সুপার রঘুনাথবাবু বলেন, ‘‘পর্যাপ্ত ট্রলি রয়েছে। একসঙ্গে অনেক রোগী ট্রলি নিয়ে গেলে তা ফেরত আসতে দেরি হয়। তা ছাড়া, রোগীর পরিজনেরা ট্রলি ফেরত না দেওয়ায় সেগুলি খুঁজে আনতেও সময় লাগে। এরই মধ্যে ওই বৃদ্ধের অবস্থার অবনতি হয়েছিল। তবে নিরাপত্তারক্ষীদের উপস্থিতিতে মারধরের ঘটনা আমরা সহজ ভাবে নিচ্ছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Trolley SSKM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE