Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বাড়িতে খুন একা বৃদ্ধ, ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ব্রড স্ট্রিটের ওই বাড়িতে বিশ্বজিৎবাবু ছোট মেয়ে বিজেতার সঙ্গে থাকতেন। তাঁর স্ত্রী রত্না বছর তিনেক আগে মারা গিয়েছেন। বড় মেয়ে জয়িতার বিয়ে হয়ে গিয়েছে।

এই বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয় বিশ্বজিৎ বসুর দেহ। নিজস্ব চিত্র

এই বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয় বিশ্বজিৎ বসুর দেহ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৯ ০২:১০
Share: Save:

বাড়ি ফিরে মেয়ে দরজা ধাক্কালেও বাবা দরজা খোলেননি। তাই দরজা ভাঙতে পুলিশ ডাকেন মেয়ে। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে দেখে, ঘরের চেয়ারে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে গৃহকর্তা বিশ্বজিৎ বসু (৬৫)। তাঁর গলায় কোপানোর দাগ ছাড়াও দেহের একাধিক জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বুধবার রাতে, কড়েয়া থানা এলাকার ব্রড স্ট্রিটের এই ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ওই বৃদ্ধকে খুন করা হয়েছে বলেই মনে করছে পুলিশ। আরও অনুমান, পরিচিত কেউ এই খুন করেছে। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। তবে ওই বৃদ্ধের ছোট মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ব্রড স্ট্রিটের ওই বাড়িতে বিশ্বজিৎবাবু ছোট মেয়ে বিজেতার সঙ্গে থাকতেন। তাঁর স্ত্রী রত্না বছর তিনেক আগে মারা গিয়েছেন। বড় মেয়ে জয়িতার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার বিজেতা এক বন্ধুর সঙ্গে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলেন। রাত ১০টা নাগাদ বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তিনি। রাত পৌনে ১১টা নাগাদ বাড়ি ফিরে দেখেন, সদর দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। ধাক্কাধাক্কির পরেও বিশ্বজিৎবাবু দরজা না খুললে পুলিশ ডাকেন বিজেতা। এর পরে দরজার ভিতরের হাতল ভেঙে ঘরে ঢুকে রক্তাক্ত অবস্থায় বিশ্বজিৎবাবুকে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ।

এক তদন্তকারী অফিসার জানিয়েছেন, যে ভাবে ঘরের মেঝেতে রক্ত পড়ে ছিল তাতে অনুমান, চেয়ারে বসা অবস্থায় বিশ্বজিৎবাবু খুন হননি। ঘরে অন্য কোনও জায়গায় খুন করে বিশ্বজিৎবাবুকে চেয়ারে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিছানায় একটি আনাজ কাটার ছুরি, একটি কাটারি পাওয়া গিয়েছে। এমনকি, খাবার খাওয়া হয়েছে এমন দু’টি থালাও ঘরে পাওয়া গিয়েছে। তবে ওই বৃদ্ধের মোবাইল ফোনটি পাওয়া যাচ্ছে না। ঘরে কোনও ধস্তাধস্তির চিহ্নও মেলেনি। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে ফরেন্সিকের দল গিয়ে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে। কড়েয়া থানার এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বাইরের দরজা সাধারণত বন্ধ থাকে। ফলে পরিচিত কাউকে দেখে বিশ্বজিৎবাবু দরজা খুলেছিলেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। ব্রড স্ট্রিটের মতো ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় নিঃশব্দে কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল, তা ভাবাচ্ছে পুলিশকে। ওই বাড়ির সদর দরজা ভিতর থেকে বন্ধ থাকলেও পাঁচিল খুব উঁচু নয়। ফলে দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে পাঁচিল টপকে কেউ বেরিয়ে যেতে পারে বলে তদন্তকারীদের অনুমান। ইতিমধ্যেই ওই বাড়িটি সিল করে দিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বিশ্বজিৎবাবু ও তাঁর মেয়ে পাড়ায় খুব একটা মেলামেশা করতেন না। এক প্রতিবেশীর কথায়, ‘‘মেয়ের রাতে ফিরতে দেরি হলে তাঁকে পাড়ার মোড়ে আনতে যেতেন বিশ্বজিৎবাবু। সকালে মাঝেমধ্যে মেয়েকে অটোয় তুলতেও বেরোতেন।’’

ব্রড স্ট্রিটে বিশ্বজিৎবাবুর বাড়ির আশপাশে কিছু বহুতল রয়েছে। তার মাঝখানে তিন থেকে সাড়ে তিন কাঠার মতো জমিতে তাঁর টালির চালের বাড়ি এবং বাগান। প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, বাড়ি ও জমি বিক্রি সংক্রান্ত কাজে বিশ্বজিৎবাবুর বাড়িতে লোকের আসা-যাওয়া ছিল। জমি-সহ ওই বাড়ির দাম ১ কোটি ১৫ লক্ষ টাকার মতো উঠেছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। জমি বিক্রি সংক্রান্ত কোনও বিবাদের জেরে এই ঘটনা কি না, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। লালবাজার জানিয়েছে, বাড়ি বিক্রি নিয়ে কোনও প্রোমোটারের সঙ্গে বিশ্বজিৎবাবুর বিবাদ ছিল কি না, তা-ও তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। একই সঙ্গে পারিবারিক অশান্তির জেরে এই খুন কি না, তা-ও মাথায়

রাখছেন তদন্তকারীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

crime Murder Kolkata Police Homicide Department
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE