Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Death

জুটল না অক্সিজেনটুকুও, এ বার ‘রেফার চক্রের’ বলি বৃদ্ধা 

রবিবার রাতে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে রাস্তাতেই মৃত্যু হয় ওই বৃদ্ধার। অভিযোগ, কোভিড হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতাল বৃদ্ধাকে পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করলেও ডেথ সার্টিফিকেট দেয়নি।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২০ ০২:৪২
Share: Save:

ইছাপুরের আঠারো বছরের তরুণের পরে এ বার হাওড়ার সদর বক্সী লেনের বাসিন্দা সত্তর বছরের বৃদ্ধা। ফের ‘রেফার-চক্রে’র বলি হলেন আর এক জন। মৃত্যুর পরে বৃদ্ধার পরিজনেদের অভিযোগ, চিকিৎসা তো দূর, সামান্য অক্সিজেনটুকুও দেয়নি তিনটি হাসপাতাল। চরম শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে মারা গিয়েছেন বৃদ্ধা। এমনকি মৃত্যুর পরে বৃদ্ধার ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া নিয়েও দীর্ঘক্ষণ চলেছে দায় ঠেলাঠেলি। এমনকি অ্যাম্বুল্যান্সচালককে পুলিশ ডেকে মার খাওয়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ।

রবিবার রাতে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে রাস্তাতেই মৃত্যু হয় ওই বৃদ্ধার। অভিযোগ, কোভিড হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতাল বৃদ্ধাকে পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করলেও ডেথ সার্টিফিকেট দেয়নি। উল্টে আত্মীয়দের বলা হয় মৃতদেহ তুলে নিয়ে যেতে। অভিযোগ, বৃদ্ধার মৃতদেহ চার ঘণ্টা সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সেই পড়ে থাকে। অবশ্য জেলা স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে যে বেসরকারি হাসপাতালে ওই বৃদ্ধার চিকিৎসা হয়েছিল তারা রাতে ডেথ সার্টিফিকেট দিলে বৃদ্ধার দেহ করোনার সুরক্ষা বিধি মেনে দাহ করা হয়।

বৃদ্ধার পরিবার জানায়, গত শুক্রবার নিউমোনিয়া ও পেটে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে তাঁকে মধ্য হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে বৃদ্ধার কোভিড পরীক্ষা হয়। রবিবার দুপুরে পরীক্ষার রিপোর্টে জানা যায় বৃদ্ধা করোনা পজ়িটিভ। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, এর পরেই ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বৃদ্ধাকে সরকারি কোভিড হাসপাতাল টি এল জয়সওয়ালে রেফার করে দেয়। অভিযোগ, বৃদ্ধার প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হলেও তাঁকে অক্সিজেন দেয়নি ওই হাসপাতাল। ওই অবস্থাতেই বৃদ্ধাকে দুপুর ৩টের সময়ে একটি ২০২ সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সে করে টি এল জয়সওয়াল হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধ্য হন তাঁর পরিজনেরা। অভিযোগ, ওই সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সেও অক্সিজেনের ব্যবস্থা ছিল না। শুধু তাই নয়, টি এল জয়সওয়ালের সামনে ইমার্জেন্সিতে চরম শ্বাসকষ্ট নিয়ে পড়ে থাকা বৃদ্ধাকে সেখানকার চিকিৎসকেরা দেখতে পর্যন্ত আসেননি বলে তাঁর পরিবারের অভিযোগ।

ওই বৃদ্ধার ছেলে রবিবার বলেন, ‘‘আমরা কান্নাকাটি করেছি একটু অক্সিজেনের জন্য। কিন্তু হাসপাতাল দেয়নি। প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে এক চিকিৎসক এসে জানান কোভিড কন্ট্রোল রুম তাঁদের জানায়নি বলে হাসপাতালে ভর্তি করা যাবে না।’’ এর পরে ওই হাসপাতাল বৃদ্ধাকে গোলাবাড়ির একটি বেসরকারি হাসপাতালে রেফার করে দেয়।

তাঁর পরিজনেরা জানান, ওই অ্যাম্বুল্যান্সেই বৃদ্ধাকে গোলাবাড়ির ওই বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জরুরি বিভাগে তাঁর পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা জানান, সম্ভবত রাস্তাতেই বৃদ্ধা মারা গিয়েছেন। তাঁর জামাই বলেন, ‘‘স্রেফ অক্সিজেনের অভাবে শাশুড়ি মারা গিয়েছেন। কোভিড হলে যে মানুষকে এ ভাবে বিনা চিকিৎসায় মরতে হবে তার প্রমাণ পেলাম। এমনকি ডেথ সার্টিফিকেট পর্যন্ত দিতে চায়নি গোলাবাড়ির ওই বেসরকারি হাসপাতাল।’’

অভিযোগ, ওই বেসরকারি হাসপাতাল ডেথ সার্টিফিকেট না দিয়ে বৃদ্ধার মৃতদেহ নিয়ে চলে যেতে বলে তাঁর পরিজনেদের। ডেথ সার্টিফিকেট না পাওয়ায় প্রায় চার ঘণ্টা ধরে অ্যাম্বুল্যান্সের ভিতরে দেহ পড়ে থাকে ওই হাসপাতালের সামনে। অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খবর দেওয়ায় পুলিশ এসে অ্যাম্বুল্যান্সের চালককে মারধর করে এলাকা থেকে চলে যেতে বাধ্য করে। রাত ১২টা নাগাদ জেলা স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি নিয়ে ওই বৃদ্ধা প্রথম যে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন সেখান থেকে ডেথ সার্টিফিকেট দিলে বৃদ্ধার দেহটি দাহ করার জন্য কোভিডের সমস্ত রকম সুরক্ষা বিধি মেনে পুলিশের সাহায্যে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়।

হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘এ ভাবে কোভিড আক্রান্তের দেহ আত্মীয়দের হাতে তুলে দেওয়া উচিত হয়নি ওই বেসরকারি হাসপাতালের। এ ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হবে। টি এল জয়সওয়াল কোভিড হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও কেন বৃদ্ধাকে ভর্তি নেয়নি তার ব্যাখ্যাও চাওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Oxygen
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE