E-Paper

‘ডিজিটাল গ্রেফতারি’র ভয় দেখিয়ে দেশ জুড়ে প্রতারণা, ধৃত চাঁই

ধৃতের নাম যোগেশ দুয়া। যোগেশ ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে ২০০টিরও বেশি সাইবার অপরাধের মামলা চলছে এবং ৯৩০টি সাইবার প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৫ ০৯:২৮
যোগেশকে গ্রেফতার করা হলেও সাইবার অপরাধের আর এক পান্ডা আদিত্য দুয়া পলাতক।

যোগেশকে গ্রেফতার করা হলেও সাইবার অপরাধের আর এক পান্ডা আদিত্য দুয়া পলাতক। — প্রতীকী চিত্র।

‘ডিজিটাল গ্রেফতারি’র ভয় দেখিয়ে দেশ জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় ১৮০ কোটি টাকা হাতানোর অভিযোগে এই চক্রের এক চাঁইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সাইবার অপরাধের অন্যতম ওই মাথাকে দিল্লি থেকে গ্রেফতার করেছে কলকাতার সাইবার থানার পুলিশ। ধৃতের নাম যোগেশ দুয়া। যোগেশ ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে ২০০টিরও বেশি সাইবার অপরাধের মামলা চলছে এবং ৯৩০টি সাইবার প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে।

যোগেশকে গ্রেফতার করা হলেও সাইবার অপরাধের আর এক পান্ডা আদিত্য দুয়া পলাতক। সে সম্পর্কে যোগেশের ভাই। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানিয়েছে, আদিত্য বিদেশে পালিয়ে গিয়েছে। সেখানে বসেই দাদার প্রতারণা-চক্রের সঙ্গে জড়িত থেকে কলকাঠি নাড়ছিল সে। যোগেশের বাড়ি থেকে আদিত্যের নামে জরুরি কাগজপত্র পেয়েছেন তদন্তকারীরা। ‘ডিজিটাল গ্রেফতারি’র এই ঘটনার তদন্তে নেমে শনিবার পর্যন্ত যোগেশ ছাড়াও ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে লালবাজার।

পুলিশ জানিয়েছে, যোগেশকে গ্রেফতার করার পাশাপাশি, উদ্ধার হয়েছে টাকা গোনার একটি যন্ত্র। ধৃতের বাড়ি থেকে দু’টি মোবাইল ফোন, দু’টি হার্ড ডিস্ক, একটি ল্যাপটপ, আটটি এটিএম কার্ড, দু’টি প্যান কার্ড উদ্ধার করেছে পুলিশ। বাড়ির একটি ড্রয়ার থেকে মিলেছে নগদ ১ লক্ষ ৮৯ হাজার টাকা। উদ্ধার হয়েছে দিরহাম, ইয়েন এবং ডলারের মতো প্রচুর পরিমাণ বিদেশি মুদ্রাও। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে আধার কার্ডও পাওয়া গিয়েছে। সেগুলি আসল না ভুয়ো, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

লালবাজার জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহেই দিল্লির বিবেক বিহার থেকে গোয়েন্দারা গ্রেফতার করেন যোগেশকে। তাকে ট্রানজ়িট রিমান্ডে কলকাতায় নিয়ে আসার জন্য স্থানীয় আদালতে তোলা হলে বিচারক জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার কলকাতা পুলিশ দিল্লি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হলে বিচারপতি যোগেশকে কলকাতায় নিয়ে আসার নির্দেশ দেন। সেই মতো শনিবার তাকে এ শহরে নিয়ে এসে গোয়েন্দারা ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির করেন। বিচারক যোগেশকে ১১ মার্চ পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

সূত্রের খবর, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে গল্ফ গ্রিনের এক মহিলাকে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ করা হয়েছে বলে ভয় দেখিয়ে প্রতারকেরা তাঁর থেকে ৪৭ লক্ষ টাকা আদায় করে। তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পান। সেই সূত্র ধরে আনন্দপুর, পাটুলি এবং নরেন্দ্রপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে একাধিক অফিসের সন্ধান মেলে। সেগুলি সবই বিভিন্ন ভুয়ো সংস্থার নামে খোলা হয়েছিল। সেই সময়ে আট জনকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, ওই সমস্ত ভুয়ো সংস্থার নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারণা করে পাওয়া টাকা সেখান থেকে বাইরে পাচার করা হচ্ছে। গত জানুয়ারি মাসে সাইবার অপরাধ এবং ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ চক্রের সঙ্গে যুক্ত চিরাগ কপূরকে বেঙ্গালুরু থেকে গ্রেফতার করেন তদন্তকারীরা।

এক তদন্তকারী জানান, চিরাগকে গ্রেফতার করার পরেই ওই চক্রের বাকিদের বিষয়ে জানা যায়। যারা ভুয়ো সংস্থার নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থার গোপন তথ্য ওঙ্কার সিংহ নামে এক জনের কাছে পাঠাচ্ছিল। সেই ওঙ্কারকে গ্রেফতার করার পরেই দুয়া ভাইদের নাম সামনে আসে। মূলত তাদের পরিকল্পনাতেই গোটা দেশ জুড়ে এই সাইবার প্রতারণা-চক্রের কারবার চলছিল। জানা গিয়েছে, ২০০টিরও বেশি মামলা চলছে দুয়া ভাইদের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া, তাদের বিরুদ্ধে ৯০০টিরও বেশি সাইবার প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে দেশ জুড়ে। বিষয়টি জানার পরে আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল তাদের ধরতে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Cyber Crime Cyber fraud

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy