Advertisement
০৪ মে ২০২৪

মেট্রো স্টেশনে আরপিএফের রাইফেল থেকে হঠাৎ গুলি, আহত ৯ বছরের বালক

টিকিট কাউন্টারের সামনে ঘটনাটি ঘটার সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে যাত্রীদের মধ্যে। আহতকে পাঠানো হয়েছে আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। 

আতঙ্ক: দমদম মেট্রো স্টেশনে আরপিএফের রাইফেল থেকে আচমকা গুলি ছিটকে যাওয়ার ঘটনায় আহত বালক এবং তার মা। আর জি কর হাসপাতালে। (ডান দিকে) শুক্রবার টিকিট কাউন্টারের সামনে গুলি বেরিয়ে মেঝেতে লেগে ছিটকে যায়। ছবি: সুদীপ ঘোষ ও শৌভিক দে।

আতঙ্ক: দমদম মেট্রো স্টেশনে আরপিএফের রাইফেল থেকে আচমকা গুলি ছিটকে যাওয়ার ঘটনায় আহত বালক এবং তার মা। আর জি কর হাসপাতালে। (ডান দিকে) শুক্রবার টিকিট কাউন্টারের সামনে গুলি বেরিয়ে মেঝেতে লেগে ছিটকে যায়। ছবি: সুদীপ ঘোষ ও শৌভিক দে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৮ ১৬:২২
Share: Save:

সাধারণ পটকার চেয়েও জোরালো ছিল আওয়াজটা। চমকে উঠে দমদম মেট্রো স্টেশনে টিকিটের লাইনে দাঁড়ানো যাত্রীরা দেখলেন, রক্ত পড়ছে বাচ্চা ছেলেটার পা থেকে। আঘাত লেগেছে তার মায়ের। আহত মেট্রোর এক কর্মীও। আতঙ্কে মুহূর্তেই ফাঁকা হল টিকিট কাউন্টার। দৌড়ে এলেন স্টেশন মাস্টার।
তত ক্ষণে বোঝা গিয়েছে ঘটনাটা। অসাবধানে গুলি চলেছে এক রেলরক্ষী জওয়ানের স্বয়ংক্রিয় রাইফেল থেকে। সেই গুলি লেগেছে মেঝেতে। আর তার পরে ধারালো কোনও টুকরো ঠিকরে এসে জখম করেছে ওই তিন জনকে। শুক্রবার ভরদুপুরে তখন তীব্র চাঞ্চল্য স্টেশন চত্বরে।
দ্রুত ট্যাক্সি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় মা-ছেলেকে। স্টেশনেই প্রাথমিক চিকিৎসা হয় মেট্রো-কর্মীর। সাসপেন্ড করে ক্লোজ করা হয় বিষ্ণুদত্ত মিনা এবং দীনেশকুমার মিনা নামে রেলরক্ষী বাহিনী (আরপিএফ)-এর ওই দুই জওয়ানকে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, এ দিন ঘটনা যখন ঘটে, তখন আরপিএফের দুপুরের শিফটে ডিউটি বদল হচ্ছিল। বিষ্ণুদত্ত তাঁর ইনসাস রাইফেলটি দীনেশকে দিচ্ছিলেন। তখনই কোনও ভাবে রাইফেল থেকে ছিটকে বেরোয় গুলি।

আরও পড়ুন: থানায় ঢুকে পুলিশকে চড়, সিসিটিভি-তে ধরা পড়ল বিজেপি বিধায়কের কীর্তি

দমদম মেট্রোর মাঝের গেট দিয়ে ঢুকলে বাঁ দিকে রয়েছে বালির বস্তার তৈরি আরপিএফের একটি বাঙ্কার। ঘটনার সময়ে ওই চত্বরেই ছিলেন দুই জওয়ান। তবে তাঁরা বাঙ্কারের মধ্যে ছিলেন কি না, স্পষ্ট নয়। ডান দিকে রয়েছে অটোম্যাটিক টোকেন ভেন্ডিং মেশিন। তার গায়েই পরপর চারটি বুকিং কাউন্টার। যার দু’টিতে তখন জনা ১৫ যাত্রী ছিলেন। ছিলেন সোনারপুরের সাউথ ঘোষপাড়ার সৌদাভিলার বাসিন্দা সঙ্গীতা বসু এবং তাঁর ৯ বছরের ছেলে সপ্তর্ষিও।

এই টিকিট কাউন্টারের সামনেই দাঁড়িয়েছিলেন সঙ্গীতা এবং তাঁর ছেলে সপ্তর্ষি। নিজস্ব চিত্র।

ঘড়িতে তখন ২টো ৫। মেট্রো সূত্রে খবর, ডিউটিতে এসে বিষ্ণুদত্তের থেকে রাইফেল নিচ্ছিলেন দীনেশ। নিয়মমাফিক বুলেটের সংখ্যা গুনে নেওয়ার কথা তাঁর। দেখে নেওয়ার কথা, রাইফেলের নলের মধ্যে কোনও গুলি রয়ে গিয়েছে কি না। মেট্রো কর্তাদের দাবি, দীনেশ রাইফেল হাতে নিয়ে সেটির ‘সেফটি ক্যাচ’ খুলে ম্যাগাজিনটি বিছিন্ন করছিলেন। এই সময়েই রাইফেলটি পড়ে গিয়ে কিংবা ট্রিগারে হাত লেগে একটি গুলি বেরিয়ে যায়। ওই গুলিটি মেঝেতে ধাক্কা খেয়ে সঙ্গীতা, সপ্তর্ষি এবং কাছাকাছি থাকা মেট্রো-কর্মী নারায়ণ মজুমদারকে আহত করে।
মেট্রোর কর্তাদের যদিও দাবি, কারও গুলি লাগেনি। তবে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের এক্স-রে রিপোর্ট বলছে, সঙ্গীতাদেবী এবং সপ্তর্ষির ক্ষতস্থানের ভিতরে কোনও কণা (পার্টিকল) রয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে মা-ছেলেকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান পরিজনেরা। দু’জনকেই পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
কলকাতা পুলিশের ডিসি (নর্থ) ও আরপিএফের ডিআইজি ঘটনাস্থলে যান। এক আধিকারিক জানান, দুই জওয়ানের বিরুদ্ধে আরপিএফের বিধি অনুযায়ী তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত করছে সিঁথি থানার পুলিশও। কেন গুলি চলল, অস্ত্র হস্তান্তরের সময়ে জওয়ানরা নিয়মমাফিক ঘেরা জায়গার মধ্যে ছিলেন কি না, সবই খতিয়ে দেখা হবে। এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে। মেট্রো রেলের জেনারেল ম্যানেজার অজয় বিজয়বর্গীয় বলেন, ‘‘অভিযোগ প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

দেখুন ভিডিয়ো

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dumdum Metro Firing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE