E-Paper

ধৃত আরও এক, পর্যটন ব্যবসার আড়ালে কারবার জাল পাসপোর্টের

ধৃতের নাম মনোজ গুপ্ত। শনিবার রাতে উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার চাঁদপাড়া থেকে তাকে ধরা হয়। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের দাবি, মনোজ এই চক্রের অন্যতম মাথা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:৩১
জাল পাসপোর্ট কান্ডে ধৃত মনোজ গুপ্তকে আলিপুর আদালতে তোলা হচ্ছে।

জাল পাসপোর্ট কান্ডে ধৃত মনোজ গুপ্তকে আলিপুর আদালতে তোলা হচ্ছে। —নিজস্ব চিত্র।

বার বার ঠিকানা বদলে গা-ঢাকা দিয়েও শেষ পর্যন্ত বাঁচা গেল না। ভুয়ো পাসপোর্ট চক্রে আরও এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করলেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। ধৃতের নাম মনোজ গুপ্ত। শনিবার রাতে উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার চাঁদপাড়া থেকে তাকে ধরা হয়। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের দাবি, মনোজ এই চক্রের অন্যতম মাথা।

লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় আগেই গ্রেফতার হওয়া, বারাসতের কাজিপাড়ার বাসিন্দা সমরেশ বিশ্বাসের মোবাইলের ‘কল লিস্ট’ খতিয়ে দেখে মনোজের নম্বর পান তদন্তকারীরা। সমরেশের সঙ্গে একাধিক বার অভিযুক্তের কথা বলার প্রমাণ মিলেছিল। এর পরেই কলকাতায় ঠাকুরপুকুরে মনোজের অফিসে হানা দেন গোয়েন্দারা। সেখান থেকে বহু ভুয়ো নথি উদ্ধার হলেও মনোজের সন্ধান মেলেনি। দিন দুয়েক আগে তদন্তকারীরা খবর পান, চাঁদপাড়ায় একটি বাড়িতে উঠেছে অভিযুক্ত। এর পরেই শনিবার সেখানে অভিযান চলে।

রবিবার মনোজকে আলিপুরের মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারকের আদালতে পেশ করা হয়। সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে বলেন, ‘‘অভিযুক্ত তার নিজস্ব ব্যবসার আড়ালে বাংলাদেশি নাগরিকদের বিদেশে যাওয়ার পথ মসৃণ করতে তাঁদের পাসপোর্ট ও ভিসা পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করত। এই চক্রের অন্যতম মাথা মনোজ। তাকে হেফাজতে নিয়ে আরও জেরা করার প্রয়োজন।’’ আদালত সূত্রের খবর, মনোজকে আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ঠাকুরপুকুরের শীলপাড়ায় একটি ভ্রমণ সংস্থার ব্যবসা রয়েছে মনোজের। অভিযোগ, সেই ব্যবসার আড়ালে ভুয়ো পাসপোর্ট চক্র চালাত সে। বিনিময়ে আবেদনকারীদের কাছ থেকে নিত কয়েক লক্ষ টাকা। মনোজের পরিবারের সদস্যেরা জানাচ্ছেন, তাঁরা মনোজের এই বেআইনি কাজের ব্যাপারে অবগত ছিলেন। কিন্তু অভিযোগ, মনোজ তাঁদের ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে রাখত। ওই পরিবারের এক সদস্য বলেন, ‘‘একাধিক বার মনোজকে এই বেআইনি কাজ করতে বারণ করা হয়েছিল। কিন্তু বার বার আমাদের মুখ বন্ধ করিয়ে রাখত।’’

প্রসঙ্গত, ভুয়ো পাসপোর্ট কাণ্ডে এর আগে ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে লালবাজার। যাদের মধ্যে রয়েছে সমরেশ ও তার ছেলে রিপন বিশ্বাস, ডাকঘরের দুই কর্মী তারকনাথ দাস এবং দীপক মণ্ডল, পর্ণশ্রী থানা এলাকার বাসিন্দা দীপঙ্কর দাস এবং দত্তপুকুরের বাসিন্দা মোক্তার আলম। তদন্তে উঠে এসেছে, মনোজের ভ্রমণ সংস্থার অফিসে কাজ করত দীপঙ্কর। ওই অফিসে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে একাধিক ব্যাঙ্কের নথি, জাল রবার স্ট্যাম্প, ৩৬টি ভারতীয় পাসপোর্টের ফোটোকপি, ইংল্যান্ডের ভিসার নথি। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে একাধিক কম্পিউটার। গোয়েন্দাদের ধারণা, পাসপোর্ট তৈরির যাবতীয় নথিপত্র জাল করা হত ভ্রমণ সংস্থার ওই অফিসেই।

এ দিন ভবানী ভবনে কলকাতার নগরপাল মনোজ বর্মাকে পাশে বসিয়ে পাসপোর্ট কাণ্ডের তদন্ত ঠিক পথে চলছে বলে দাবি করেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। পাসপোর্টের পুলিশি যাচাই নিয়ে ওঠা প্রশ্নেরপরিপ্রেক্ষিতে ডিজি বলেন, ‘‘ঠিকানা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষের নির্দিষ্ট নিয়মবিধি (গাইডলাইন) রয়েছে। আমরা তাদের বলেছি, এটা পরিবর্তন করতে হবে।’’ পাসপোর্ট যাচাইয়ের ক্ষেত্রে স্থানীয় থানার পাশাপাশি পুলিশ আধিকারিকদের আরও সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এডিজি (আইনশৃঙ্খলা)জাভেদ শামিম। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও জঙ্গি বা অনুপ্রবেশকারী যাতে কোনও ভাবে ভারতীয় পাসপোর্ট না পায়, তার জন্য যা যা করণীয়, সব করা হচ্ছে। এই চক্রে যে বা যারা যুক্তথাকবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ বা সরকারি কর্মচারীদের কেউ যুক্ত থাকলেও তাঁরা ছাড় পাবেন না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

arrest passport

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy