E-Paper

ঠিকানা ঘিরে বিভ্রাটে দেরি দমকলের, সল্টলেকে পুড়ে মৃত্যু গৃহকর্তার

আগুনের ঘেরাটোপে আটকে পড়েছেন বাড়ির কর্তা। শেষ পর্যন্ত নিজের ঘর থেকে তাঁর কার্যত ছাই হয়ে যাওয়া দেহ উদ্ধার হল সোমবার রাতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:৩৪
দেবর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়।

দেবর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

একটি অক্ষরের গোলমাল। তাতেই কি ঘটে গেল বিপদ?

কন্ট্রোল রুমের আধিকারিক শুনেছিলেন, সল্টলেকের বিএ ব্লকে আগুন লেগেছে। আসলে আগুন লেগেছিল ডিএ ব্লকে। দমকল আধিকারিকের কানে ‘ডি’ অক্ষরটি ‘বি’ হয়ে পৌঁছেছিল বলে অভিযোগ। যার জেরে সময় মতো বেরিয়েও ভুল ঠিকানায় পৌঁছে যায় দমকলের ইঞ্জিন। পরে ঠিক ঠিকানা জেনে ডিএ ব্লকে পৌঁছলেও তত ক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। আগুনের ঘেরাটোপে আটকে পড়েছেন বাড়ির কর্তা। শেষ পর্যন্ত নিজের ঘর থেকে তাঁর কার্যত ছাই হয়ে যাওয়া দেহ উদ্ধার হল সোমবার রাতে।

এই ঘটনায় সল্টলেকের ডিএ-৪ নম্বর বাড়িতে সোমবার রাতে আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয় বাড়ির মালিক দেবর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়ের। প্রতিবেশীরা জানান, একটি ছোট প্লাস্টিকে করে তাঁর প্রায় ভস্মীভূত দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। একই কথা জানিয়েছে পুলিশও।
তবে ঘটনার পিছনে ঠিকানা বিভ্রাট যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে, তা জানাচ্ছেন আশপাশের বাসিন্দারাও। সেই বিভ্রাটের জেরে ফোন করার প্রায় ৪০ মিনিট পরে ডিএ ব্লকের ওই বাড়িটিতে পৌঁছন দমকলকর্মীরা। তার আগে আগুনে জল ঢালার কাজ শুরু করেন পুলিশকর্মীরা।

ওই বাড়ির প্রতিবেশী শাশ্বতী মুখোপাধ্যায় জানান, তিনি ঘটনার সময়ে খেতে বসেছিলেন। আচমকা একটি বিকট শব্দ পান। তার পরেই জানতে পারেন, পাশের বাড়িতে আগুন লেগেছে। দ্রুত তিনি পুলিশ, দমকল ও বিদ্যুৎ দফতরকে ফোন করে খবর দেন। তিনি বলেন,
‘‘পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও দমকল আসতে আধ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে। আমি ছাড়াও ওই বাড়ির ভাড়াটেরাও ফোন করেছিলেন। দমকল জানায়, তারা প্রথমে ঘটনাস্থল খুঁজে পায়নি। আমাদের বাড়িতে নির্মাণের কাজ হচ্ছে। পুলিশ বাড়ির ছাদে উঠে বাঁশের সঙ্গে বাড়িতে ব্যবহারের জলের পাইপ
দিয়ে পাশের বাড়ির আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা শুরু করে। দমকল সময় মতো পৌঁছলে হয়তো ওই ব্যক্তিকে বাঁচানো যেত।’’

এই ঠিকানা বিভ্রাট নিয়ে দমকলের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, তাঁদের বলা হয়েছিল বিএ ব্লক। সেই মতো তাঁদের গাড়ি সেখানে ছোটে। পরে তাঁরা জানতে পারেন, আসলে আগুন লেগেছে ডিএ ব্লকের একটি বাড়িতে। যদিও স্থানীয়দের দাবি, তাঁরা ঠিক নামই বলেছিলেন ফোনে। যিনি ফোন ধরেছেন, তিনি ভুল করে বিএ শুনেছেন। এই নিয়ে আপাতত চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘আগুন নেভানোর কৌশল জানে দমকল। ওদের মতো কি আমরা আগুনে জল দিতে পারব? না কি আমাদের সেই যন্ত্র আছে? বাঁশের গোড়ায় পাইপ লাগিয়ে যতটা সম্ভব আগুনের মোকাবিলা করা হয়েছিল।’’

পুলিশ জানায়, প্রাথমিক ভাবে তাদের ধারণা, সিগারেট থেকেই আগুন লেগেছে। এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে ঘটনাস্থলের ফরেন্সিক পরীক্ষা করানো হবে। ওই ব্যক্তি মত্ত অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়েছিলেন কিংবা আচ্ছন্ন ছিলেন কিনা, তাঁর হাতের জ্বলন্ত সিগারেট থেকে আগুন লেগেছিল কিনা, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জেনেছে, দেবর্ষি ওই ঘরে দীর্ঘ সময় একা ছিলেন। দেবর্ষির স্ত্রী নিবেদিতা দোতলার ঘরে মেয়েকে খাওয়াচ্ছিলেন। ওই বাড়িতে দেবর্ষির মা-ও থাকেন। নিবেদিতা আগুন দেখতে পেয়ে উপরে উঠে স্বামীর ঘরে ঢোকার চেষ্টা করলেও ধোঁয়ার কারণে সেখানে পৌঁছতে পারেননি। রাত প্রায় ১২টা নাগাদ দেবর্ষির প্রায় ছাই হয়ে যাওয়া দেহ বার করে নিয়ে যায় পুলিশ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Death Firebreak

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy