E-Paper

বিসর্জনের পথে এ বার ট্রেলারের চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু

রেণুকা শুক্রবার যাচ্ছিলেন বালিগঞ্জ প্লেসের বালক সঙ্ঘ আদি দুর্গোৎসব কমিটির প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য। ৭৫তম বর্ষে এ বার ওই পুজোর থিম ছিল যামিনী রায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৫ ০৭:২১
রেণুকা সরকার।

রেণুকা সরকার।

পুজোর ক’দিন টানা ঠাকুর দেখার পরে পরিকল্পনা ছিল, প্রতি বারের মতো এ বারও পাড়ার প্রতিমার বিসর্জন দিতে যাবেন। সেই মতো স্বামী ও ন’বছরের মেয়েকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন বছর তিরিশের রেণুকা সরকার। কিন্তু বিসর্জন সেরে বাড়ি ফেরা আর হল না তাঁর। ভাসানের নাচের পরে স্বামী আর মেয়ের সঙ্গে প্রতিমা যে ট্রেলারে রাখা ছিল, সেখানে গিয়েই বসেছিলেন তিনি। এর পরেই কোনও ভাবে ট্রেলারের চাকার সঙ্গে জড়িয়ে যায় রেণুকার ওড়না। যার জেরে তিনি রাস্তায় ছিটকে পড়লে তাঁর মাথার উপর দিয়েই চলে যায় ট্রেলারের চাকা!

গত বৃহস্পতিবার রাতেই আলিপুর রোডের কাছে জিরাট সেতুতে ওঠার মুখে হাইট বারে ধাক্কা খায় বিসর্জনের জন্য যাওয়া একটি লরি। সেই ঘটনায় লরির চালকের আসনের উপরে বসে থাকা উৎসব চট্টোপাধ্যায় নামে এক যুবকের মাথায় সজোরে ধাক্কা লাগে। রাস্তায় ছিটকে পড়েন তিনি। ওই রাস্তায় হাইট বার থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে বিসর্জনের লরিটিকে পুলিশ ঢুকতে দিল, সেই প্রশ্ন উঠেছে। ওই ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ঘটেছে শুক্রবার রাতের শরৎ বসু রোডের ঘটনা। ভবানীপুর থানায় এ নিয়ে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। পুজো কমিটির লোকজন রেণুকাকে দ্রুত উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ওই হাসপাতালেই শনিবার রেণুকার দেহের ময়না তদন্ত হয়েছে। ওই ঘটনার পর পুজো কমিটির লোকজন কোনও মতে বিসর্জন সেরে ফেরেন।

জানা গিয়েছে, রেণুকা শুক্রবার যাচ্ছিলেন বালিগঞ্জ প্লেসের বালক সঙ্ঘ আদি দুর্গোৎসব কমিটির প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য। ৭৫তম বর্ষে এ বার ওই পুজোর থিম ছিল যামিনী রায়। বালক সঙ্ঘ আদি দুর্গোৎসবকমিটির পুজো মণ্ডপের কাছেই বস্তিতে ঘর রয়েছে রেণুকাদের। তিনি পরিচারিকার কাজ করতেন। স্বামী অনলাইনে বরাত দেওয়া খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজে যুক্ত। শনিবার ওই পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, থমথমে পরিস্থিতি। ছোট্ট ঘরে বসে রয়েছেন রেণুকার স্বামী বাপ্পার ঠাকুরমা। বৃদ্ধা চোখে ভাল দেখতে পান না। সেই চোখ বেয়েই গড়িয়ে পড়ছে জল। কোনও মতে বললেন, ‘‘মেয়েটা খুব আনন্দ করতে ভালবাসত। স্বামী, মেয়েকে নিয়ে গোটা পুজোয় খুব আনন্দ করেছে। প্রচুর ঠাকুর দেখেছে। প্রতি বারই বিসর্জনে যেত। এ বারও গিয়েছিল। মেয়েটা যে আর ফিরবে না, কে জানত!’’ এর পরে বৃদ্ধা বলেন, ‘‘মা-হারা বাচ্চা মেয়েটাকে এ বার কী ভাবে রাখব, জানি না।’’ এসএসকেএম হাসপাতালে দেখা গেল, রেণুকার স্বামী বাপ্পা শোকস্তব্ধ হয়ে বসে। কথা বলার মতো অবস্থা নেই। শুধু বললেন, ‘‘আমাকে বাঁচাতে গিয়েই ও শেষ হয়ে গেল। আমার সংসারটাই শেষ হয়ে গেল।’’

বালক সঙ্ঘ আদি দুর্গোৎসব কমিটির পুজোর সম্পাদক, পেশায় চিকিৎসক সঞ্জীবকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, ঘটনার একটি সিসি টিভি ফুটেজ পুলিশ তাঁদের দেখিয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ট্রেলার থেকে বাপ্পা এবং আরও এক যুবক হঠাৎ পড়ে গিয়েছিলেন। পাশে বসা রেণুকা স্বামীকে তুলতে ঝুঁকে হাত বাড়াতে যান। সেই সময়েই কোনও ভাবে তাঁর পোশাকের অংশ ট্রেলারের চাকার সঙ্গে জড়িয়ে যায়। রেণুকা রাস্তায় ছিটকে পড়লে তাঁর মাথার উপর দিয়ে ট্রেলারের চাকা চলে যায়।

সঞ্জীবকুমার বলেন, ‘‘রাত ১১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। খবর পেয়েই আমরা কয়েক জন হাসপাতালে ছুটি। বাকিরা কোনও মতে প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে ফেরেন। রাতভর ঘুম আসেনি কারও। ক্লাবের তরফে ওই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। কিন্তু কোনও কিছুই ওই মেয়েটিকে ফিরিয়ে আনতে পারবে না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Road Accident Accidental Death

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy