Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

তাড়া করে বিক্ষুব্ধদের ফেলে মার সেন্ট পলসে

পিছনে ‘ধর ধর’ বলে চিৎকার করতে করতে দৌড়চ্ছেন জনা পঞ্চাশ পড়ুয়া। হাতের কাছে কয়েক জনকে পেয়ে মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ।

চাঁদা তোলার ব্যস্ততা।

চাঁদা তোলার ব্যস্ততা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৪৬
Share: Save:

জনা দশেক কলেজ-পড়ুয়া রাস্তা দিয়ে প্রাণপণে দৌঁড়চ্ছেন। পিছনে ‘ধর ধর’ বলে চিৎকার করতে করতে দৌড়চ্ছেন জনা পঞ্চাশ পড়ুয়া। হাতের কাছে কয়েক জনকে পেয়ে মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ।

বৃহস্পতিবার বেলা ২টো নাগাদ কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিটে সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল মিশন কলেজের সামনের এই দৃশ্য দেখে দাঁড়িয়ে যায় সব গাড়ি। পুলিশ জানায়, এ দিনের ঘটনায় আহত হয়েছেন তিন ছাত্রী। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁদের চিকিৎসা চলছে।

কিন্তু কেন? কয়েক দিন ধরেই ওই কলেজে ‘ফেস্ট’-এর জন্য পড়ুয়াদের কাছ থেকে প্রকাশ্যে রসিদ কেটে মাথাপিছু তিনশো টাকা নেওয়া হচ্ছিল। ওই পড়ুয়াদের দাবি, তাঁরা টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সদস্য। অনলাইন ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার মাধ্যমেও হাজার হাজার টাকা তোলা হচ্ছিল বলে অভিযোগ। এ দিন তারই প্রতিবাদে কলেজের বাইরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন এক দল পড়ুয়া। তখনই শুরু হয় গোলমাল।

এ দিন বিক্ষোভ চলার সময় কলেজের ভিতেরই ছিলেন ছাত্র সংসদের ৬০-৭০ জন সদস্য। এক দিকে বাইরে বিক্ষোভ চলছে, ভিতরে কার্যত ফুঁসছিলেন অভিযুক্তেরা। সেই সময় হঠাৎই কলেজের গেট খুলে যায়। জনা দশেক বিক্ষোভকারীর উপরে আছড়ে পড়ে ৭০ জনের দল। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। অভিযোগ, বাদ যাননি ছাত্রীরাও। এর পরে কোনও ভাবে নিজেদের বাঁচিয়ে দৌড়তে শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। কলেজের গেট থেকে বহু দূর পর্যন্ত তাঁদের তাড়া করে যায় অন্য দল। কয়েক জনকে ধরে ফেলে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। এ ভাবে চলার পরে ৭০ জনের ওই দল থেকেই কয়েক জন গোলমাল থামায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশবাহিনী। ওই কলেজের পড়ুয়াদের দাবি, দু’পক্ষই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মী-সমর্থক।

বিক্ষোভকারী এক পড়ুয়ার অভিযোগ, অন্যায় ভাবে টাকা তোলা হচ্ছে। তার বিরোধিতা করায় হামলা চালানো হল। অন্য পক্ষের দাবি, কোনও টাকা তোলা হয়নি। পুরোটাই সাজানো। অভিযোগের আঙুল তৃণমূল ছাত্র নেতা আব্দুল কাইয়ুম মোল্লার দিকে। যদিও কাইয়ুম বলেন, ‘‘এ-সব ভিত্তিহীন। কোনও কলেজ আর আমাকে ডাকে না।’’

কলেজে ভর্তিকে কেন্দ্র করে বারবার শিরোনামে এসেছে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন কলেজ। কলকাতার অনেক কলেজে টাকা তোলার অভিযোগ উঠেছিল। গত জুলাইয়ে ভর্তি-দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসার পরে তার মোকাবিলা করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া নির্দেশ দেন। তার পরে মাঠে নামে পুলিশ। কলকাতা থেকে গ্রেফতারও করা হয় আট জন ছাত্রকে। তাঁরা টিএমসিপি-র সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ ওঠে। ফেস্ট ঘিরে সেন্ট পলস কলেজে ফের টাকা তোলার অভিযোগ ওঠায় শোরগোল চলছে।

এ দিনই বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেন কলেজ-কর্তৃপক্ষ। উচ্চশিক্ষা দফতরে সেই বৈঠকের রিপোর্ট পাঠানোর কথা। কলেজের টিচার ইনচার্জ দেবাশিস মণ্ডলকে ফোন করলে তিনি বলেন, ‘‘বৈঠক চলছে।’’ এ দিনের গোলমালের কথা তোলার পরেই তিনি ফোন কেটে দেন।

তার পরেও ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ব্যস্ত আছেন বলে জানিয়েই ফোন কেটে দেন।

বক্তব্য জানতে কলেজের টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ সর্দারকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সমর্থকেরাই মার খেয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

College Fest Extortion TMCP St Pauls College
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE