Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Orphan

Orphan: হোমের সকলের উৎসাহেই ঘর বাঁধতে চলেছেন লড়াকু অঙ্কিতা

আগামী কাল, সোমবার চার হাত এক হচ্ছে অঙ্কিতা আর সুব্রতের। হৃদয়পুরের ওই হোমের মেয়েদের মধ্যে এই প্রথম কারও বিয়ে।

আইবুড়ো ভাতের অনুষ্ঠানে অঙ্কিতা। শনিবার।

আইবুড়ো ভাতের অনুষ্ঠানে অঙ্কিতা। শনিবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:০২
Share: Save:

খুব ছোটবেলাতেই পরিবারকে হারিয়েছিল দুই বোন। তার পরে একটি হোমে ঠাঁই হয় আট বছরের অঙ্কিতা ও ছ’বছরের প্রিয়া দাসের। একরাশ অভিমান চেপে দুই বোন প্রতিজ্ঞা করেছিল, ‘বড়’ হতেই হবে। হোমের মা, মামণি আর বন্ধুদের ভালবাসায় পড়াশোনা শেষে এখন কাজ পেয়েছেন অঙ্কিতা। শুধু পড়াশোনাই নয়, দুই বোনের ‘গুণের’ কথা বলে শেষ করতে পারেন না হোমের সকলে। তাঁরাই এ বার নতুন ঘর বেঁধে দিচ্ছেন অঙ্কিতার।

আগামী কাল, সোমবার চার হাত এক হচ্ছে অঙ্কিতা আর সুব্রতের। হৃদয়পুরের ওই হোমের মেয়েদের মধ্যে এই প্রথম কারও বিয়ে। আর তাই সাজো সাজো রব হোম জুড়ে। সমস্ত আয়োজনই করছেন হোমের মেয়েরা। তদারক করছেন হোমের সম্পাদক, মেয়েদের ‘মামণি’ সর্বাণী চক্রবর্তী। বিয়েটা অবশ্য দেখে যেতে পারলেন না সর্বাণীর মা পুষ্পাদেবী। মাস আটেক আগে মারা যান তিনি। তবে অঙ্কিতার বিয়ের জন্য দু’গাছি সোনার বালা রেখে গিয়েছেন।

সর্বাণী জানান, তখন দুই বোন খুবই ছোট। অন্য একটি হোম থেকে সেই হোমে পাঠানো হয়েছিল তাদের। হাতে দিদিমার লেখা একটি চিরকুট, ‘আমরা ওদের দায়িত্ব নিতে অক্ষম, তাই হোমে দিলাম।’ সর্বাণীর কথায়, ‘‘খুব কাঁদছিল ওরা। পরে অবশ্য সবার সঙ্গে একাত্ম হয়ে যায়। দুই বোনই খুব ভাল। আজ পর্যন্ত ওদের নামে কেউ কোনও অভিযোগ করেনি। ওরা কেউ মুখ ফুটে কোনও দিন কিছু চায়ওনি। জিজ্ঞাসা করলেই বলত, সবই তো দাও। আর কী চাইব।’’

হোমে আসার পরে কিছু দিন কাউন্সেলিং করিয়েই স্কুলে ভর্তি করানো হয় দুই বোনকে। পড়াশোনার পাশাপাশি নানা রকম প্রশিক্ষণ নিতে থাকে দু’জনেই। সেলাই ও বিউটিশিয়ানের কোর্সের পাশাপাশি ঘরে সাজানোর জিনিস থেকে জ্যাম-জেলি তৈরির কাজও শিখে নেয় তারা। সেই সঙ্গে ক্যারাটে, নাচ, গান, ছবি আঁকাও চলতে থাকে। প্রিয়া এ বার উচ্চ মাধ্যমিক দেবেন। আর ২২ বছরের অঙ্কিতা এখন হোমের ছোট বাচ্চাদের সামলান, প্রশিক্ষণ দেন।

তবে অঙ্কিতার একটা সংসার হোক, চেয়েছিলেন হোমের সকলেই। অঙ্কিতা রাজি হতেই শুরু হয় পাত্রের খোঁজ। বারাসতের নেতাজিপল্লির সুব্রত সরকারকে পছন্দ হয় তাঁদের। ছবি সম্পাদনার কাজ করেন তিনি। পাত্র পছন্দ হতেই কোমর বেঁধে নেমে পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণির আশা দাস, ললিতা মণ্ডল, শম্পিয়া মণ্ডলের মতো জনা ৫০ আবাসিক।

হোমের মেয়েদের ধরে বিয়েতে মোট ২০০ জন আমন্ত্রিত। মণ্ডপ, আলো, ফুলের দায়িত্বে রয়েছেন হোমের ৮৮ বছরের গৌরহরি দাদু (বসু) বা অরুণ সাধুখাঁর মতো সদস্যেরাও। মেয়েকে সম্প্রদান করছেন শ্রাবণী চক্রবর্তী। তাঁর কোলে-পিঠেই মানুষ হয়েছেন অঙ্কিতা-সহ অনেকে।

অঙ্কিতার পছন্দের খাবার রান্না করে শনিবার তাঁকে ‘আইবুড়ো ভাত’ দেয় দশম শ্রেণির ঝুমা খাতুন, দোলনচাঁপা সর্দারেরা। মেয়েদের দাবিতেই আজ, রবিবার বিকেল থেকে চলবে মেহেন্দি পর্ব। নাচ-গান করবে মেয়েরাই। বিয়ে নিয়ে ব্যস্ততার শেষ নেই পঞ্চম শ্রেণির ঋতমা সেনগুপ্ত, তিথি সরকারদের। তত্ত্ব সাজানোও চলছে। বরযাত্রীদের আপ্যায়নের গুরুদায়িত্ব আবার রিয়া খাটুয়ার মতো ক্লাস সেভেনের ‘বড়দের’।

ছাপানো হয়েছে বিয়ের কার্ড। নিমন্ত্রণ পেয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তও। তিনি বলেন, ‘‘মেয়েটির লড়াই আর হোমের সকলের এমন উদ্যোগই সমাজে শক্তি জোগায়।’’ বারাসত পুলিশ জেলার সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘সবাইকে অনুপ্রেরণা দেওয়ার মতো ঘটনা। আমি বা আমাদের প্রতিনিধি কেউ বিয়েতে থাকবেনই।’’

কী চাই?

অঙ্কিতা বললেন, তাঁর চাওয়া একটাই— ‘‘বোন আর হোমের বাকি সব মেয়েই যেন এক দিন নিজের পায়ে দাঁড়ায়। আমার মতো ঘর পায়।’’ আর তাই বাকি জীবন হোমের মেয়েদের পাশেই থাকতে চান অঙ্কিতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Orphan Orphanage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE