Advertisement
E-Paper

জমি কি আর ফেরত পাব, আতঙ্কিত নাকতলার বৃদ্ধা

হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে তিনিও গিয়েছিলেন সে দিন নাকতলায়। প্রশাসনের সহযোগিতায় নিজের জমির দখল নিতে। কিন্তু পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থর উপস্থিতিতেই ভাস্কর দামের নেতৃত্বে স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের হুজ্জুতি দেখে এক রাশ আতঙ্ক নিয়ে ফিরে এসেছেন লীনা দত্ত।

অত্রি মিত্র ও দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:৫৫

হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে তিনিও গিয়েছিলেন সে দিন নাকতলায়। প্রশাসনের সহযোগিতায় নিজের জমির দখল নিতে। কিন্তু পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থর উপস্থিতিতেই ভাস্কর দামের নেতৃত্বে স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের হুজ্জুতি দেখে এক রাশ আতঙ্ক নিয়ে ফিরে এসেছেন লীনা দত্ত। তাঁর কথায়, ‘‘হাইকোর্ট রায় দিলেও জমি ফেরত পাব কি না বুঝে উঠতে পারছি না। কারণ নেতারা যে ভাবে সে দিন লোক জড়ো করেছিলেন, তাতে পুলিশ কমিশনারকেও তো পিছিয়ে আসতে হয়েছে। তা হলে জমিটা আমাদের হাতে কে উদ্ধার করে দেবে!’’

আতঙ্কটা এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে বছর বাহাত্তরের লীনা দেবীকে। নাকতলা ইয়ুথ ক্লাবের প্রসঙ্গ উঠলেই তাই বলে দিচ্ছেন, ‘‘আমি এ সবের মধ্যে আর নিজেকে জড়াতে চাইছি না। জড়ালে যতটুকু আয়ু আছে, সেটুকুও আর থাকবে না।’’

হাইকোর্টের নির্দেশে গত শুক্রবার নাকতলা ইয়ুথ ক্লাবের জমির দখল নিতে যায় কলকাতা পুলিশ। উপস্থিত ছিলেন পুলিশ কমিশনারও। পুলিশ বাহিনীর সামনেই হাতে কেরোসিনের বোতল নিয়ে বুক চিতিয়ে ‘আত্মহত্যা’র হুমকি দেন ভাস্কর দাম ওরফে গনো। অভিযোগ, সেই হুমকি শুনে বাহিনী নিয়ে ফিরে যান কমিশনার। এ জন্য বুধবার হাইকোর্টের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়েছে সুরজিৎবাবুকে। তাতে বিব্রত শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্বও।


সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন...

শুক্রবার ভবানীপুরে নিজের বাড়ির গেটের সামনে বসে লীনা দেবী জানালেন, আশা ছিল পুলিশ কমিশনারের উপস্থিতিতে এত দিন পর জমির দখল পাবেন। কিন্তু তা তো হয়ইনি। উল্টে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের হুজ্জুতি দেখতে হয়েছে গাড়িতে বসে। তাঁর কথায়, ‘‘সে দিন আমাকে গাড়ি করে নিয়ে গিয়েছিল। গাড়িতে বসেই ছিলাম। কিন্তু সেখানে বসে যা দেখেছি, তাতে আমি আতঙ্কিত।’’ জমি আদৌ আর ফেরত পাবেন কি না, তা নিয়েও সন্দিহান তিনি।

মামাবাড়ির সূত্রে প্রায় ৪০ কাঠা ওই জমির মালিকানা হাতে পেয়েছেন লীনা দেবী। তাঁর দাদু হেমন্তকুমার বসু জমিটি কিনেছিলেন। হেমন্তবাবুর একমাত্র মেয়েই লীনা দত্তের মা। ‘‘দাদু অনেক কষ্ট করে জমি কিনেছিলেন। ভবানীপুর থেকে হেঁটে নাকতলা গিয়ে জমির দেখাশোনা করে আসতেন। সেই জমি ফিরে পেতে চাওয়াটা কি অন্যায়,’’ প্রশ্ন লীনাদেবীর। একই সঙ্গে বলছেন, ‘‘আমি আর্থ্রাইটিসের রোগী। হাঁটতে পারি না। ডাক্তার হাঁটু প্রতিস্থাপন করতে বলেছে। আদালতকেও সে কথা বলেছি।’’ গত শুক্রবারের অভিজ্ঞতার পরে আপাতত আগামী ১৪ জানুয়ারি হাইকোর্টের পরবর্তী নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করছেন। বলছেন, ‘‘আমি কোনও রাজনীতি করি না। কোনও সরকারই আমাদের সাহায্য করেনি। তাই বলে সরকারের উপরে আস্থা হারাইনি।’’

এত কিছুর পরেও সরকারের উপর আস্থা হারাচ্ছেন না কেন? ইয়ুথ ক্লাবের একাংশের দাবি, লীনাদেবীর স্বামী শিশিরকুমার দত্ত নিজে কেএমডব্লিউএসএ-র (কলকাতা মেট্রোপলিটন ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন অথরিটি) অ্যাকাউন্টস অফিসার ছিলেন। তিনি কর্মরত অবস্থাতেই ওই সংস্থা জমিটি অধিগ্রহণ করে। কিন্তু ক্ষতিপূরণের একাংশ এখনও পর্যন্ত লীনাদেবীরা পাননি বলে অভিযোগ।

এক ক্লাব-কর্তার দাবি, ‘‘টাকা না পেলেও শিশিরবাবু অবসর নেওয়া পর্যন্ত লীনাদেবীরা কিন্তু কোনও মামলা করেননি কেএমডব্লিউএসএ-র বিরুদ্ধে। মামলা করলেন শিশিরবাবু অবসর নেওয়ার ৮-৯ বছর পরে।’’ এই বিষয়টি মনে করিয়ে দিচ্ছেন ইয়ুথ ক্লাবের আরও কেউ কেউ। যদিও এ সব নিয়ে মুখ খুলতে চাননি লীনাদেবী। বলছেন, ‘‘মামলার সংক্রান্ত যা কিছু, আমার স্বামীই দেখভাল করেন।’’ একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘কেএমডব্লিউএসএ-তে আমার স্বামী কাজ করতেন ঠিকই। তেমন হলে তো আরও আগে আমাদের ক্ষতিপূরণ পেয়ে যাওয়ার কথা। তা তো পাইনি।’’

naktala land acquisition case lina dutta leena dutta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy