Advertisement
০২ এপ্রিল ২০২৩
Cinema Hall

Uttara Cinema Hall: ঐতিহ্যের টানাপড়েনে এ বার উত্তরা সিনেমা হল

গত সপ্তাহেই সংশ্লিষ্ট সিনেমা হলের বর্তমান মালিক পুরসভার কাছে ওই হলটি পুর হেরিটেজ তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন।

ঐতিহাসিক: বহু ঘটনার সাক্ষী উত্তরা সিনেমা হলের বর্তমান অবস্থা। শনিবার, হাতিবাগানে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

ঐতিহাসিক: বহু ঘটনার সাক্ষী উত্তরা সিনেমা হলের বর্তমান অবস্থা। শনিবার, হাতিবাগানে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২১ ০৬:০৩
Share: Save:

‘হেরিটেজ’ কি ‘হেরিটেজ’ নয়, এই বিতর্কের কেন্দ্রে এ বার হাতিবাগানের উত্তরা সিনেমা হল। যা নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন এবং কলকাতা পুরসভার মধ্যে।

Advertisement

গত সপ্তাহেই সংশ্লিষ্ট সিনেমা হলের বর্তমান মালিক পুরসভার কাছে ওই হলটি পুর হেরিটেজ তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। তিনি জানান, রাজ্য হেরিটেজ কমিশন তাঁকে জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট হলটি হেরিটেজ নয়। তা শুনে পুরসভার উত্তর, কমিশন যা-ই বলুক, সংশ্লিষ্ট হলটি পুরসভার হেরিটেজ তালিকায় রয়েছে। তা ছাড়া, বিষয়টি বিচারাধীন হওয়ায় এখনই কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।

উত্তরা সিনেমা হলের বর্তমান মালিক জন ম্যান্টোস অবশ্য জানাচ্ছেন, উত্তরার জায়গায় শপিং মলের সঙ্গে তিনটি সিনেমা স্ক্রিন তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না পুরসভা ও কমিশনের দু’টি ভিন্ন বক্তব্যের কারণে। জন ম্যান্টোসের কথায়, ‘‘রাজ্য হেরিটেজ কমিশন আমাকে জানিয়েছে, উত্তরা হেরিটেজ তালিকাভুক্ত নয়। আবার কলকাতা পুরসভা বলছে, এটি হেরিটেজ!’’ এ বিষয়ে জানতে রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের সঙ্গে শনিবার যোগাযোগ করা হলে কমিশনের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই হলটি আমাদের হেরিটেজের তালিকায় নেই।’’ আর পুরসভার এক কর্তার কথায়, ‘‘আমাদের তালিকায় উত্তরা হেরিটেজ। এ নিয়ে সংশয় নেই।’’

যদিও বহু বছর ধরে বন্ধ উত্তরা সিনেমা হলের মাধ্যমে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। তা হল, এক সময়ে সিঙ্গল স্ক্রিনের হাত ধরে শহরে সিনেমাদর্শনের যে সংস্কৃতি চালু ছিল, তার কি কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না? পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হল ভেঙে আবাসিক বা বাণিজ্যিক বিল্ডিং তৈরির প্রস্তাব সমর্থনযোগ্য নয়। পুরনো সিনেমা হলের জায়গায় কমপক্ষে দু’টি ছোট থিয়েটার না করলে সেই নকশা যেন অনুমোদন করা না হয়। তাঁর কথায়, ‘‘এই শর্ত দিলে সিনেমার উপকারের পাশাপাশি শহরের ঐতিহ্যও রক্ষা পাবে। যেমনটা মেট্রো সিনেমা হলের আধুনিকীকরণে করা হয়েছে। মেট্রো পুনর্নির্মিত হলেও তার সামনেটা একই রকম রয়েছে।’’

Advertisement

পুনর্নির্মিত মেট্রো সিনেমার মূল স্থপতি সুবীর বসু বলছেন, ‘‘শুধু ঐতিহ্য বলে শোরগোল ফেললে হবে না। অর্থনীতির দিকটাও দেখতে হবে। তাই বিদেশে সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই ঐতিহ্যশালী ভবন পুনর্নির্মাণ করা হয়। ঐতিহ্যের সঙ্গে কী ভাবে সময়ের সহাবস্থান করা যায়, অর্থাৎ ‘অ্যাডাপটিভ রিইউজ়’ কী ভাবে করা যায়, মেট্রো সিনেমা হলের পুনর্নির্মাণে তার উপরে গুরুত্ব দিয়েছি‌লাম।’’

ইতিহাসের একটি সূত্র বলছে, বর্তমানে উত্তরা সিনেমা হল যেখানে, সেটা আগে ম্যাডান থিয়েটারের নামে ছিল। সিনেমাকর্মী শ্যামল দত্ত জানাচ্ছেন, ম্যাডান থিয়েটার প্রথমে তাঁবু খাটিয়ে সিনেমা দেখাত। আস্তে আস্তে দর্শকদের আগ্রহ বাড়তে থাকলে ওই এলাকায় ম্যাডান থিয়েটার দু’টি সিনেমা হল খুলেছিল। একটির নাম ছিল ক্রাউন সিনেমা ও অন্যটির নাম ছিল কর্নওয়ালিস থিয়েটার। শ্যামলবাবুর কথায়, ‘‘বাংলার প্রথম নির্বাক ছবি বিল্বমঙ্গল, যা ১৯১৯ সালে রিলিজ হয়েছিল, তা কর্নওয়ালিসে অর্থাৎ বর্তমানের উত্তরায় রিলিজ হয়েছিল। ১৯৩৫ সালের অগস্টে কর্নওয়ালিস থিয়েটারের নামকরণ হয়েছিল উত্তরা সিনেমা। মন্ত্রশক্তি সিনেমা দিয়ে উত্তরার পথ চলা শুরু হয়েছিল।’’

কলকাতা-গবেষক হরিপদ ভৌমিক বলছেন, ‘‘উত্তর কলকাতায় সিনেমা হলগুলি ঘিরে যে সিনেমা দেখার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল, তা ধীরে ধীরে শহরের বুক থেকে মুছে যাচ্ছে।’’

অনেকের মতে, শহরের সিনেমাদর্শনের সংস্কৃতি বদলের নেপথ্যে দায়ী মাল্টিপ্লেক্স। যদিও এ যুক্তি মানতে নারাজ উত্তর কলকাতার আরও এক সিনেমা হল, মিত্রার কর্ণধার দীপেন্দ্রকৃষ্ণ মিত্র। মিত্রা সিনেমাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সে প্রসঙ্গ টেনে এনে দীপেন্দ্রকৃষ্ণ বলছেন, ‘‘মাল্টিপ্লেক্স নয়। টেলিভিশন যখন থেকে এসেছে, তখন থেকেই সিনেমা হলে দর্শকের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। এখন তো আবার ওটিটি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। ফলে সিঙ্গল স্ক্রিন প্রেক্ষাগৃহ এখন শুধুই অতীত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.