E-Paper

বিস্ফোরণ-আবহে নজরে শহরের ভাড়া বাড়ি, তবে হুঁশ ফিরেছে কি?

নাগরিকদের হুঁশ ফেরেনি বলেই দাবি পুলিশের। অথচ গত কয়েক বছর ধরে নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ ভাড়াটে প্রসঙ্গে সচেতন হতে নির্দেশ দিচ্ছে শহরবাসীকে। পুলিশের তরফে বার বার অনুরোধ করা হয়েছে, বাড়িতে ভাড়াটে রাখলে, অতিথিশালায় অতিথি থাকলে সেই তথ্য থানায় জমা দিতে।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৫ ০৭:৩৫

—প্রতীকী চিত্র।

দিল্লিতে বিস্ফোরণের পরে কপাল চাপড়াচ্ছেন ফরিদাবাদের ধৌজ গ্রামের একটি বাড়ির মালিক বৃদ্ধ হাজি মাদ্রাসি। ভিন্‌ রাজ্যের বাসিন্দাকে বাড়ি ভাড়া দিয়ে ভাড়াটের তথ্য আর পুলিশকে জানাননি তিনি। অথচ, সেই ভাড়ার ঘর থেকেই উদ্ধার হয়েছে ৩৫০ কিলোগ্রামেরও বেশি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরক। যার সঙ্গে দিল্লির বিস্ফোরণের যোগাযোগ রয়েছে বলে অনুমান পুলিশের। পুলিশি ঝামেলায় পড়েছেন মাদ্রাসিও।

অপরাধমূলক ঘটনায় এ রাজ্যে, তথা খাস কলকাতাতেও একাধিক বার ভাড়া বাড়ির যোগ মিলেছে। কখনও ভাড়ার ফ্ল্যাটে পরিচয় গোপন করে আশ্রয় নিয়েছে গ্যাংস্টার, জঙ্গি। কখনও এলাকার নাম আনন্দপুর, হরিদেবপুর, কখনও নিউ টাউন। বাড়িওয়ালার অজ্ঞতা বা অসচেতনতায় ওই সব এলাকায় জঙ্গিরা বাড়ি, ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে গোপন ডেরা তৈরি করতে পেরেছিল।

তবু নাগরিকদের হুঁশ ফেরেনি বলেই দাবি পুলিশের। অথচ গত কয়েক বছর ধরে নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ ভাড়াটে প্রসঙ্গে সচেতন হতে নির্দেশ দিচ্ছে শহরবাসীকে। পুলিশের তরফে বার বার অনুরোধ করা হয়েছে, বাড়িতে ভাড়াটে রাখলে, অতিথিশালায় অতিথি থাকলে সেই তথ্য থানায় জমা দিতে। কিন্তু বাস্তবে সিংহভাগ মানুষই তা করেন না।

এমনকি, অনেকে ফাঁকা জমিও ভাড়া দিচ্ছেন। যেখানে টালি, ত্রিপল দিয়ে ঘর তৈরি করে লোকজন থাকছেন। কিন্তু সে সব ভাড়াটে সম্পর্কিত তথ্য যে পুলিশকে দেওয়া জরুরি— এমন ধারণাই জমির মালিকের নেই বলে দাবি বিধাননগর পুলিশের।

বিগত কয়েক বছরে জঙ্গি বা অন্যান্য অপরাধীরা কলকাতায় এসে ভাড়ায় থেকে ঘাঁটি গেড়েছে। ২০২১ সালে নিউ টাউনের সাপুরজিতে ভাড়ার ফ্ল্যাটে লুকিয়ে থাকা পাঞ্জাবের গ্যাংস্টারদের সঙ্গে পুলিশের মুখোমুখি গুলির লড়াই দেখেছিল কলকাতা। চার বছরের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে পটনায় একটি হাসপাতালে খুনের ঘটনায় জড়িত অভিযুক্তদের সেই সাপুরজি থেকেই পুলিশ গ্রেফতার করে।

বিধাননগর কমিশনারেটের দাবি, তাদের ওয়েবসাইটেই দেওয়া রয়েছে ভাড়াটেদের তথ্য যাচাইয়ের ফর্ম। তবে কি সেই তথ্য ঠিক মতো সব বাসিন্দার কাছে পৌঁছচ্ছে না? পুলিশের সঙ্গে নাগরিকদের যোগাযোগে কি ফাঁক থেকে যাচ্ছে? উঠছে এমন প্রশ্নও।

গত বছর আনন্দপুরের গুলশন কলোনিতে জঙ্গিদের নাম ভাঁড়িয়ে থাকার খবর প্রকাশ্যে এসেছে। পুলিশের কাছে সেই খবরই ছিল না। বছর দেড়েক আগে হরিদেবপুর থানা এলাকায় তিন সন্দেহভাজন জেএমবি জঙ্গির গ্রেফতারির ঘটনায় উঠে এসেছিল বাড়ি ভাড়া-যোগ। বাংলাদেশ থেকে ভুয়ো পরিচয়ে বাড়ি ভাড়া নিয়ে শহরে ঘাঁটি গাড়লেও অন্ধকারে ছিল পুলিশ। ভাড়াটেদের বিষয়ে বাড়ির মালিক নিজেও খোঁজখবর নেননি, পুলিশকেও কিছু জানাননি।

বর্তমান যুগে অতিথিশালা ব্যবসার বহুল প্রচলন শহর জুড়ে। অনেক জায়গাতেই বড় বড় আবাসনের ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া হয়। পুলিশ জানাচ্ছে, বিভিন্ন আবাসনে পুলিশের তরফে ভাড়াটেদের পরিচয় যাচাই করার ফর্ম দেওয়া থাকে। তবে সব ক্ষেত্রে বাড়ির মালিক ভাড়াটেদের সেই ফর্ম পূরণ করতে বলেন না বলেই অভিযোগ।

তবে শহরবাসীদের অনেকেরই পাল্টা দাবি, ভাড়াটেদের তথ্য যাচাই করার জন্য প্রয়োজনীয় ফর্ম কী ভাবে পাওয়া যাবে, সেই প্রচার সব সময়ে নাগরিকদের কাছে পৌঁছয় না। কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘বাড়ির মালিক সচেতন না হলে পুলিশের পক্ষে ভাড়াটে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন। কে, কখন, কোথায় আসছেন, সেই তথ্য বাড়ির মালিক না দিলে পুলিশের পক্ষে সব সময়ে বোঝা সম্ভব নয়।’’

কিন্তু পুলিশি নজরদারি? লালবাজারের এক কর্তা বললেন, ‘‘সারা বছরই প্রতিটি ডিভিশনকে ভাড়াটেদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া থাকে। বাড়ির মালিকদের সতর্ক থাকার কথা বলে নানাবিধ প্রচারও চলে। দিল্লির ঘটনার পরে নতুন করে ভাড়াটেদের তথ্য যাচাইয়ে কড়াকড়ির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ একই দাবি করে বিধাননগর কমিশনারেটের এক ডেপুটি কমিশনারের দাবি, ‘‘আমরা বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক প্রচার চালাই। রাস্তায় নিয়মিত নাকা তল্লাশিও চলে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kolkta Police awareness

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy