Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Boral Crematorium

গড়িয়া শ্মশানে ‘নিষ্ঠুরতা’য় রাজ্য জুড়ে তোলপাড়

ঘটনার সূত্রপাত, বুধবার দুপুরে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই দিন বেলা একটা নাগাদ কলকাতা পুরসভার একটি গাড়িতে করে ১৩টি গলিতপ্রায় দেহ সৎকারের জন্য শ্মশানে আনা হয়।

শ্মশানের সামনে বুধবারের বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র

শ্মশানের সামনে বুধবারের বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২০ ০৪:১৪
Share: Save:

গড়িয়া বোড়াল শ্মশান-চত্বরে দাবিদারহীন বিকৃত দেহ আঁকশিতে টেনে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ে নানা মহলে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। সব ক’টি বিরোধী দল থেকে রাজ্যপাল পর্যন্ত মৃতদেহের এই অমর্যাদা তথা ‘অমানবিক নিষ্ঠুরতা’ নিয়ে সরব। আবার অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকটি দেহকে কোভিড রোগীর দেহ বলে প্রচার করে ভুয়ো খবর ছড়ানোর অভিযোগে বৃহস্পতিবার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ শৈবালকুমার মুখোপাধ্যায় কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।

ঘটনার সূত্রপাত, বুধবার দুপুরে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই দিন বেলা একটা নাগাদ কলকাতা পুরসভার একটি গাড়িতে করে ১৩টি গলিতপ্রায় দেহ সৎকারের জন্য শ্মশানে আনা হয়। সংলগ্ন এলাকায় দুর্গন্ধও ছড়িয়ে পড়ে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই শ’খানেক বাসিন্দা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁরা শ্মশানের মূল ফটক আটকে দেন বলেও অভিযোগ।

ঘটনাস্থলে আসেন এলাকার বাম কাউন্সিলর চয়ন ভট্টাচার্য। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এই ভাবে দেহ সৎকার নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। স্থানীয় মানুষের বাধায় দেহগুলি নিয়ে ফিরে যায় পুরসভার গাড়ি। পরে পুলিশ এসে শ্মশান চত্বর জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা করে। তবে ঘটনা সেখানেই থেমে থাকেনি। কলকাতার পুর কর্তৃপক্ষের তরফে বোঝানো হয়, মে মাসের শেষেই নির্দেশিকা অনুযায়ী, দাবিদারহীন যে কোনও মৃতদেহ (যা কোভিড রোগীর নয়) গড়িয়া শ্মশানেই দাহ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভিডিয়োর দেহগুলি কোভিড রোগীর নয় বলে প্রশাসনের তরফে দাবি করা হলেও বিভ্রান্তি কাটেনি ছিটেফোঁটাও।

আরও পড়ুন: ছোঁয়াচ এড়াবে কী ভাবে, চিন্তা কালীঘাট মন্দিরে

বিকৃত দেহ টেনে নিয়ে যাওয়ার বীভৎস দৃশ্যটি নেটে ছড়িয়ে পড়ার পরে এ দিন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিমকে ডেকে দেহ সৎকার নিয়ে আলোচনা করেন নবান্নের শীর্ষ স্তরের আমলারা। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের টুইট: ‘মৃতদেহ সৎকারে অবর্ণনীয় হৃদয়হীন অসংবেদনশীলতায় আমি মর্মাহত। মৃতদেহ আমাদের সমাজে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী, পরম্পরা মেনেই সৎকারের আচার-অনুষ্ঠানও হয়ে থাকে’। তিনি অবশ্য বীভৎসতার জন্যই ভিডিয়োটি শেয়ার না-করার কথা লেখেন। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অভিযোগ, ‘‘এই দেহগুলি কোভিড রোগীদেরই লাশ। নন্দীগ্রামে সিপিএম লাশ চুরি করেছিল, এখন তৃণমূলও করোনার মৃতদেহ চুরি করছে।’’ পুর প্রশাসনের দায়িত্বভার ছেড়ে ফিরহাদের পদত্যাগও দাবি করেছেন তিনি।

দেখুন সেই ভিডিয়ো:

কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বা সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী বিষয়টি নিয়ে সরব। প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘মৃত্যু যে কারণেই হোক, বাংলার মানুষ মৃতদেহ নিয়ে বর্বরতা সহ্য করবে না।’’ সুজন চক্রবর্তী ববিকে একটি চিঠি লিখে মৃতদেহগুলির বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। সুজনবাবুর প্রশ্ন, ‘‘লাশগুলি কাদের? করোনা রোগীর সঙ্গে মৃতদেহগুলির কি কোনও সম্পর্ক আছে? গড়িয়া শ্মশান থেকে ফেরত যাওয়ার পরে দেহগুলির কী পরিণতি হয়েছে?’’

বিষয়টি নিয়ে ফিরহাদও মুখ খুলেছেন। কলকাতা পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘কোভিডের দেহ ধাপাতেই পোড়ানো হয়। তবে কিছু অজ্ঞাতপরিচয় দেহ আবার গড়িয়ায় দাহ করা হচ্ছে। সেই মতো পুরসভার তরফে নোটিসও দেওয়া হয়েছে।’’ তবে কোন দেহ নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছিল, তা খতিয়ে না-দেখলে বোঝা সম্ভব নয় বলে তিনি জানিয়েছেন।

দেহগুলি কোথা থেকে আনা হয়েছিল তা যদিও স্পষ্ট নয়। পুরসভার বরো চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে স্থানীয় ডিওয়াইএফ নেতা কৌশিক ঘোষ বলেন, “দেহগুলি এমআর বাঙুর হাসপাতালের মর্গের বলে শুনেছি। ফলে দেহগুলি করোনা আক্রান্তদের হতে পারে।”

আরও পড়ুন: ফুলবাগান পর্যন্ত মেট্রোর পরিষেবা শীঘ্রই

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Boral Crematorium Garia Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE