Advertisement
E-Paper

বাড়ির গায়ে রাসায়নিকের কারখানা, আতঙ্ক নিত্যসঙ্গী

বেহালার চণ্ডীতলার স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা, ওই তার থেকে শর্ট সার্কিট হয়ে যে কোনও মুহূর্তে ফের ঘটে যেতে পারে বড়সড় অগ্নিকাণ্ড। ঠিক যেমনটা ঘটেছে রবিবার রাতে। 

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৯ ০৩:৪৭
দগ্ধ: রাসায়নিক ভর্তি ড্রামের পাশ দিয়ে গিয়েছে বিদ্যুতের তার। সোমবার, বেহালার সেই কারখানায়। নিজস্ব চিত্র

দগ্ধ: রাসায়নিক ভর্তি ড্রামের পাশ দিয়ে গিয়েছে বিদ্যুতের তার। সোমবার, বেহালার সেই কারখানায়। নিজস্ব চিত্র

একই পাড়ায় গা ঘেঁষাঘেঁষি করে তৈরি হয়েছে বসত বাড়ি ও দাহ্য রাসায়নিকের কারখানা। সেই রাসায়নিকের কারখানার থেকে বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে বিদ্যুতের তার। বেহালার চণ্ডীতলার স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা, ওই তার থেকে শর্ট সার্কিট হয়ে যে কোনও মুহূর্তে ফের ঘটে যেতে পারে বড়সড় অগ্নিকাণ্ড। ঠিক যেমনটা ঘটেছে রবিবার রাতে।

ওই রাতে চণ্ডীতলার রাসায়নিক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পরে সেই আতঙ্ক আরও বড় আকার নিয়েছে। স্থানীয়দের বক্তব্য, কয়েক বছর আগে সেখানেই একটি রাসায়নিক কারখানায় বড়সড় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল। রবিবার যেখানে আগুন লাগে, সেটি ওই কারখানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে। এলাকাবাসীর চিন্তা, রাসায়নিক গুদামগুলিতে যে ভাবে তারের জট এখনও রয়ে গিয়েছে, সেখান থেকে ফের আগুন লাগতে পারে।

প্রাথমিক তদন্তের পরে দমকলকর্তারা জানাচ্ছেন, রবিবার রাতের ঝড়ে বিদ্যুতের খুঁটি থেকে তার ছিড়ে পড়ে একটি কারখানার চালে। ছেঁড়া তার কোনও দাহ্য পদার্থের সংস্পর্শে এসে শর্ট সার্কিট হয়ে যায়। সেখান থেকেই আগুনের ফুলকি কারখানায় রাখা থিনারের মতো দাহ্য পদার্তে গিয়ে পড়ে। দ্রুত আগুন ধরে যায় গোটা কারখানায়। অল্প সময়ের মধ্যে তা ছড়াতে থাকে আশপাশেও।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এক স্থানীয় বাসিন্দা রাজু রায় বলেন, ‘‘বিকট শব্দ করে চারদিকে ছিটকে যাচ্ছিল আগুনের গোলা। আশপাশের দু’টি কারখানা পুড়ে গিয়েছে। আমরাও ভয়ে ঘর থেকে সব জিনিস বার করে ফেলি।’’ স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, বিদ্যুৎবাহী তার ছিঁড়ে মাটিতে জলের মধ্যে পড়েছিল। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ভয়ে তাই জ্বলতে থাকা কারখানার আগুন নেভানোর জন্য আশপাশে যেতে ভয় পাচ্ছিলেন তাঁরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাসায়নিক কারখানাগুলিতে কোনও অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা নেই। ধীমান মণ্ডল নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমরা যেন আগ্নেয়গিরির উপরে বাস করছি। কারখানাগুলির বিরুদ্ধে সিইএসসিকে অভিযোগ জানিয়েছি।’’

সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সিইএসসি-র কর্মীরা পোড়া কারখানার সামনে কাজ করছেন। ঘটনাস্থলে কাজ করা সিইএসসি-র এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এই এলাকায় বিদ্যুতের বেশির ভাগ তারই মাটির তলা দিয়ে গিয়েছে। তার বাইরে থেকে ঝুলে থাকার কথা নয়। তারগুলি কী অবস্থায় আছে, খতিয়ে দেখা হবে।’’

চণ্ডীতলার ওই এলাকায় পাঁচ থেকে ছ’বিঘার মতো জায়গায় রয়েছে ছোট-বড় তিরিশটির মতো কারখানা। রবিবারের অগ্নিকাণ্ডের পরে বেশির ভাগ কারখানাই বন্ধ। একটি কারখানা খোলা ছিল। সেখানকার এক আধিকারিক, অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘আমাদের কারখানায় অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা রয়েছে।’’ কারখানা ঘুরে দেখা গেল, কয়েকটা অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র আছে ঠিকই, কিন্তু আগুন নেভানোর জন্য আর যা যা দরকার, তা কার্যত কিছুই নেই। চণ্ডীতলার কারখানাগুলির সংগঠন ‘চণ্ডীতলা স্মল স্কেল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর প্রেসিডেন্ট তথা ওই এলাকার একটি কারখানার মালিক রাম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা নতুন মিটার ঘর বানিয়েছি। যে সব কারখানার তার বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে পড়েছে, সেখানকার মালিকদের বলেছি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে।’’ স্থানীয় মানুষদের আরও অভিযোগ, কারখানায় অবৈধ ভাবে বড় বড় পাত্রে দাহ্য রাসায়নিক মজুত করে রাখা আছে। রামবাবুর অবশ্য দাবি, ‘‘যে সব কারখানা মালিকদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠছে, অ্যাসোসিয়েশনের তরফ থেকে তাঁদের সর্তক করা হবে।’’

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুরো এলাকায় একটিই পুকুর ছিল। সংস্কারের অভাবে সেখানেও জল নেই। বড় বড় আগাছায় ভরে গিয়েছে। ওই পুকুরে যদি জল থাকত, তা হলে আগুন আর একটু তাড়াতাড়ি নেভানো যেত। পুকুর সংস্কার করার জন্য এলাকার বাসিন্দারা সোমবার স্থানীয় কাউন্সিলরকে স্মারকলিপি দিয়েছেন।

Behala Accident
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy