Advertisement
E-Paper

পাভলভ থেকে ছুটি পেতে চলেছেন পার্থ

পাভলভ মানসিক হাসপাতাল থেকে ছুটি পাচ্ছেন রবিনসন স্ট্রিটের কঙ্কাল-কাণ্ডে ধৃত পার্থ দে। দিনে একটি করে ট্যাবলেট আর মাস তিনেক অন্তর একবার করে আউটডোরে দেখিয়ে যাওয়া, এর বাইরে তাঁর আর কোনও চিকিৎসার প্রয়োজন নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন পাভলভের চিকিৎসকেরা।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৫ ০০:৩৮
পার্থ দে। —ফাইল চিত্র।

পার্থ দে। —ফাইল চিত্র।

পাভলভ মানসিক হাসপাতাল থেকে ছুটি পাচ্ছেন রবিনসন স্ট্রিটের কঙ্কাল-কাণ্ডে ধৃত পার্থ দে। দিনে একটি করে ট্যাবলেট আর মাস তিনেক অন্তর একবার করে আউটডোরে দেখিয়ে যাওয়া, এর বাইরে তাঁর আর কোনও চিকিৎসার প্রয়োজন নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন পাভলভের চিকিৎসকেরা।

তাঁদের বক্তব্য, স্কিৎজোফ্রেনিয়ার সমস্যা রয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা এমন স্তরের নয় যে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি রাখতে হবে। নিয়মিত ওষুধ খেলে তিনি যথেষ্ট স্থিতিশীল থাকবেন। পুলিশও জানিয়েছে, তদন্তের যা গতিপ্রকৃতি তাতে এই মুহূর্তে পার্থবাবুকে হেফাজতে নেওয়ার প্রশ্ন উঠছে না। ফলে দিন কয়েক পর থেকেই সম্পূর্ণ মুক্ত জীবন কাটাতে চলেছেন রাজ্য জুড়ে সাড়া জাগানো ওই ঘটনার অন্যতম মূল চরিত্র।

আদালতের নির্দেশে পার্থকে হাসপাতালে ভর্তি করেছিল পুলিশ। ছুটি দেওয়ার ক্ষেত্রে কী হবে? সুপার গণেশ প্রসাদ জানিয়েছেন, এ ক্ষেত্রে তাঁকে যাঁরা নিতে আসবেন, সইসাবুদ করিয়ে তাঁদের হাতেই ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে কোনও আত্মীয়-বন্ধু নয়, সুপার জানান, পার্থকে নিতে আসবেন মাদার হাউসের প্রতিনিধিরা। তাঁরাই ওঁর থাকার ব্যবস্থা করবেন।

গত জুন মাসে রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছিল রবিনসন স্ট্রিটের কঙ্কাল কাণ্ড। দে পরিবারের বাড়ি থেকে পার্থবাবুর বাবার মৃতদেহ উদ্ধার করতে গিয়ে তাঁর দিদি দেবযানীর পচাগলা দেহও উদ্ধার করে পুলিশ। পার্থ জানান, দিনের পর দিন উপবাসে থাকা দিদি দেবযানীর ‘যোগ সাধনা’-য় বাধা দেননি তিনি। তাঁর মৃত্যুর পরে কঙ্কালের সঙ্গে মাসের পর মাস এক ঘরে বাসও করেছেন। দিদির পোষা দু’টি কুকুরও মারা যাওয়ার পরে পচেছে ওই ঘরেই। এর পরেই আদালতের নির্দেশে তাঁকে পাভলভ মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গোড়ায় ঘটনার তদন্তে নেমে নতুন কিছু সূত্রের আশায় পার্থবাবুর নার্কো অ্যানালিসিস করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পুলিশ। আদালতে এ ব্যাপারে আবেদনও জমা দেয় তারা। কিন্তু বেঁকে বসেন পাভলভের চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, কোনও মানসিক রোগীর এমন পরীক্ষা চিকিৎসা শাস্ত্রের বিরোধী। এর ফলে পার্থবাবুর বড় ধরনের মানসিক বিপর্যয় ঘটতে পারে। এ ধরনের পরীক্ষার জেরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যুর নজির রয়েছে বলেও জানান তাঁরা। পাভলভের চিকিৎসকদের মতে, মানসিক হাসপাতালে ভর্তি কোনও রোগীর এমন পরীক্ষা মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনেরও সামিল। এর পরে আদালতও ওই আর্জি খারিজ করে। তার পর থেকেই পুলিশও পার্থবাবুর বিষয় নিয়ে তেমন নাড়াচাড়া করেনি।

তবে ঠিক কী ধরনের মানসিক অবস্থায় তিনি মৃতদেহের সঙ্গে একই ঘরে বসবাস করেছেন তা জানতে সিঙ্গাপুর থেকে ফরেন্সিক-মনোবিদ জয়দীপ সরকারকে এনে পরীক্ষা শুরু করে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। শুধু পার্থবাবুর সঙ্গে কথা বলা নয়, রবিনসন স্ট্রিটে দে-বাড়িতে গিয়ে সরেজমিনে তদন্তও শুরু করেন জয়দীপবাবু। কিন্তু তিনিও তেমন উল্লেখযোগ্য কোনও নতুন তথ্য জানাতে পারেননি বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

গত আড়াই মাসে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে আসেননি কোনও আত্মীয়। সে নিয়ে মাঝেমধ্যেই মন খারাপ করেন পার্থ। বার বার জানান তাঁর অন্যদের সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা করে। বস্তুত, শেষ মাস দেড়েক হাসপাতাল সুপার এবং চিকিৎসকেরাই তাঁকে অনেকটা সঙ্গ দিচ্ছেন। কাগজ পড়ে নানা বিষয় নিয়ে তাঁদের সঙ্গেই কথা বলেন তিনি। হাসপাতাল সূত্রে খবর, হাসপাতাল চত্বরের খোলা অংশে বাগান করার প্রস্তাব দিয়েছেন পার্থ। জানিয়েছেন, বাগান হলে রোগীদেরও ভাল লাগবে। ছুটি পেতে চলেছেন জেনে ডাক্তার-নার্সদের তিনি বলেছেন, ‘‘অনেক বিষয়ে পড়াশোনা করতে চাই। বহু জায়গায় ঘুরতে চাই। বাকি জীবনটা অর্থবহ কাজ করে যেতে হবে।’’

Partha Dey Pavlov mental hospital kolkata police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy