Advertisement
E-Paper

শহর ছাড়ার উড়ানে সঙ্গী মশকবাহিনী!  

কলকাতা থেকে সন্ধ্যার উড়ান ধরে কেউ চলে যাচ্ছে বেঙ্গালুরু, কেউ মুম্বই, কেউ দিল্লি। কারও কোনও নির্দিষ্ট গন্তব্য নেই। যে কোনও বিমানে উঠে পড়লেই হল। টাকা তো আর লাগছে না!

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০
ব্যাট-উওম্যান: বিমানে মশা মারতে ভরসা ব্যাট। নিজস্ব চিত্র

ব্যাট-উওম্যান: বিমানে মশা মারতে ভরসা ব্যাট। নিজস্ব চিত্র

কলকাতা থেকে সন্ধ্যার উড়ান ধরে কেউ চলে যাচ্ছে বেঙ্গালুরু, কেউ মুম্বই, কেউ দিল্লি। কারও কোনও নির্দিষ্ট গন্তব্য নেই। যে কোনও বিমানে উঠে পড়লেই হল। টাকা তো আর লাগছে না!

বিমানে উঠে, খানিকটা ভনভন করে, মনের আশ মিটিয়ে আসনে বসা যাত্রীদের যারপরনাই বিরক্ত করার পরে যেই র‌্যাকেট হাতে বিমানসেবিকাকে ছুটে আসতে দেখছে, তখনই আসনের তলায় গিয়ে লুকোচ্ছে। কখনও বা জায়গা খুঁজে নিচ্ছে দুই আসনের ফাঁকে। সুযোগ-সুবিধা বুঝে চলছে ‘কুটুস-কাটুস’।

 

মুম্বই, বেঙ্গালুরু বা অন্য শহরে পৌঁছনোর পরে, যাত্রীরা নেমে গেলে বিমানের দরজা খোলা পেয়ে আবার সেই শহরের ভিড়ের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে কলকাতার মশককুল। মাঝখান থেকে দু’ঘণ্টার উড়ানে আসনে বসেই নেচে চলেছেন যাত্রীরা। সারা উড়ান ধরে সামনে, পিছন থেকে শোনা যাচ্ছে চটাস-চটাস শব্দ।

সম্প্রতি কলকাতা থেকে সন্ধ্যার উড়ানে মুম্বই যাওয়ার সময়ে এক যাত্রীর এমনই এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে। তিনি জানান, মশার আক্রমণের কথা শুনে পাইলট বলে দেন, এই সময়ে কলকাতা থেকে সন্ধ্যার উড়ানে মশার এই উৎপাত নতুন নয়। এতে তাঁদের কিছু করার নেই। কিন্তু কেবিনে এত বেশি সংখ্যক মশা ঢুকে পড়েছিল যে যাত্রীরা অতিষ্ট হয়ে পড়েন। শেষে মশা মারার ব্যাট হাতে ‘ময়দানে’ নামেন এক কর্মী। তাঁর কথায়, ‘‘সে এক ভীষণ মজার দৃশ্য। প্রথম সারি থেকে তিনি মশা মারতে মারতে পঞ্চম সারিতে পৌঁছতেই আবার প্রথম সারিতে ডাক পড়তে শুরু করে। এক জন একটি ব্যাট নিয়ে রীতিমতো ঘেমেনেয়ে অস্থির। তাঁকে সাহায্য করতে ময়দানে নামেন এক বিমানসেবিকাও। কিন্তু মশাগুলিও প্রাণে বাঁচতে তাঁদের পাশ কাটিয়ে এ দিন সে দিক পালিয়ে যাচ্ছিল।’’ শেষে একটি স্প্রে এনে তা ছড়ানো শুরু করা হয়। সেই স্প্রে তে খানিকটা মশার উপদ্রব কমতে দুই মহিলা যাত্রী নাকি নিজেদের গায়ে পারফিউমের মতো সেই স্প্রে মেখে নেন।

কলকাতা থেকে সম্প্রতি রাঁচি যাওয়ার সময়ে একই অভিজ্ঞতা হয়েছে অভিজিৎ ঘোষের। দমদম এলাকার মশার ‘সুনাম’ নিয়ে হাসি-মস্করাও করতে শোনা যায় যাত্রীদের। গত বুধবারের উড়ানে কলকাতা থেকে মুম্বই যাচ্ছিলেন গৌরঙ্গি আগরওয়াল। তাঁর কথায়, ‘‘মশার সঙ্গে এ রকম যাত্রা আগে হয়নি। সারা উড়ানে আমাকে পাঁচ জায়গায় মশা কামড়েছে। যাত্রী ছিল দেড়শো, মশা ছিল প্রায় এক হাজার। যাত্রীরা সকলেই বেশ বিরক্ত।’’

বিমানবন্দর সূত্রের খবর, যে বিমানগুলি এরোব্রিজে এসে দাঁড়াচ্ছে, সেগুলি নিয়ে সমস্যা নেই। কিন্তু পার্কিং বে-তে দাঁড়ানো বিমানগুলি নিয়েই সমস্যা হচ্ছে। যেখানে বিমান দাঁড়িয়ে থাকে, পড়ন্ত বিকেলে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা উড়ে বেড়াচ্ছে বিমানবন্দরের সেই অ্যাপ্রন এলাকায়। বিমানের দরজা খোলা পেয়ে সেঁধিয়ে যাচ্ছে ভিতরে। আর তার পরে যাত্রী উঠলেই শুরু হচ্ছে ‘আক্রমণ’।

বিমান পরিষ্কারের কাজে যুক্ত এক কর্মী জানিয়েছেন, বিমান কলকাতায় নেমে আবার উড়ে যাওয়ার মাঝে আধ ঘণ্টা থেকে চল্লিশ মিনিট পাওয়া যায়। তখন বিমান পরিষ্কার করে যাত্রীদের ওঠার আগে মশা মারার স্প্রে ছড়ানো হয়। কিন্তু যে উড়ানগুলি ছাড়তে দেরি হয়ে যায়, সেগুলির দরজা অনেক ক্ষণ খোলা থাকছে। সেখানে মশার উপদ্রব বেশি।

বিমানবন্দরের যে দিকে রাজারহাট, সে দিকে প্রধান রানওয়ের ডান পাশে একটি জায়গা রয়েছে, যেখানে বিমানবন্দরের জল গিয়ে জমে। সেখান থেকে পাম্প করে সেই জল বার করে দেওয়া হয়। কিন্তু সব সময়ে সেখানে জল থাকে। সেখানে মশার বাস রয়েছে। এ ছাড়াও বিমানবন্দরের ভিতরে প্রচুর নিকাশি নালা রয়েছে। সেখানেও মশার জন্ম হয়। প্রধানত টার্মিনাল বিল্ডিং-এ, অ্যাপ্রন এলাকায় যে ছোট ছোট অফিস রয়েছে, সেখানে স্প্রে ও ধোঁয়া দেওয়া হয়। কিন্তু বিশাল অ্যাপ্রন এলাকায় সেই স্প্রে করা বা ধোঁয়া দেওয়া কার্যত অসম্ভব।

বিমানবন্দরের অধিকর্তা অতুল দীক্ষিত শুক্রবার জানিয়েছেন, যেখানে জল জমে থাকছে, সেখানে মশার লার্ভা মারার জন্য মাছ ছাড়া হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা হাত গুটিয়ে বসে নেই। অভিজ্ঞ সংস্থাকে দিয়ে মশা তাড়ানোর কাজ চলছে।’’

কিন্তু তার পরেও সুযোগ বুঝে বিমানে চড়ে বসছে তারা।

Godrej HIT
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy