Advertisement
E-Paper

জোড়াতালির সারাই, সায় দিচ্ছেন মেয়রও

ছাল-চামড়া ওঠা ‘মা’ উড়ালপুলের রাস্তার হাল দেখে বৃহস্পতিবার উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার কালীঘাটে তাঁর বাড়ির কাছেই কলকাতা পুরসভার রাস্তা সারাইয়ের নজির দেখে অবাক স্থানীয় বাসিন্দারা।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৬ ০১:২৯
জল-কাদা ভরা গর্তে রেডিমিক্স ঢেলে এ ভাবেই চলেছে রাস্তা ‘মেরামতি’। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির অদূরে ছবিটি তুলেছেন সুমন বল্লভ।

জল-কাদা ভরা গর্তে রেডিমিক্স ঢেলে এ ভাবেই চলেছে রাস্তা ‘মেরামতি’। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির অদূরে ছবিটি তুলেছেন সুমন বল্লভ।

ছাল-চামড়া ওঠা ‘মা’ উড়ালপুলের রাস্তার হাল দেখে বৃহস্পতিবার উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার কালীঘাটে তাঁর বাড়ির কাছেই কলকাতা পুরসভার রাস্তা সারাইয়ের নজির দেখে অবাক স্থানীয় বাসিন্দারা। কালীঘাট রোডের খোঁড়া ওই অংশ যে ভাবে চাপা দেওয়া হয়েছে, তা হয়তো এখনও মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আসেনি। তবে কাজটা যে ঠিক হয়নি, মেনে নিচ্ছেন পুরসভার একাধিক ইঞ্জিনিয়ার। আর মেয়রের কথায় ‘‘প্রয়োজনের তাগিদে এটা সাময়িক। আবার করা হবে ওই রাস্তা।’’ আর এলাকার একাধিক বাসিন্দার দাবি: এক দফা সাময়িক, তার পরে আবার হবে— এই হলো পুরসভার রাস্তা সারানোর ‘দর্শন’। অনেকেরই অভিযোগ, এর পিছনে একটা চক্র কাজ করে। আর তাতেই সারাই কর্মসূচি ‘চক্রবৃদ্ধি’ হারে মুনাফা দেয় কিছু লোককে।

পুরসভা সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির রাস্তার পাশেই পটুয়াপাড়ায় সম্প্রতি নিকাশির কাজ হয়েছে। কালীঘাট রোডের একটা অংশের নীচে নতুন নিকাশির পাইপ বসাতে ওই রাস্তা প্রায় চার-পাঁচ ফুট গভীরতায় খুঁড়তে হয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তাটি দ্রুত সারাতে গিয়ে দায়সারা ভাবে কাজ করা হয়েছে। যা স্বীকার করেছেন পুরসভার একাধিক মেয়র পারিষদও। পুরসভারই এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘রাস্তা শক্তপোক্ত রাখার জন্য খোয়া ইটের আস্তরণ না দিয়েই শুধু পিচ, কিছুটা পাথরকুচি এবং বালির মিশ্রণ (রেডিমিক্স) ঢেলে দেওয়া হয়েছে পুরো রাস্তার কাদামাখা গর্তের উপরে। এটা এক মাসও টিকবে কি না সন্দেহ।’’

কেন এমন হলো?

পুরসভার এক মেয়র পারিষদের দাবি, কলকাতা পুরসভার দু’টি দফতরের মধ্যে সমন্বয় না থাকাতেই এমন ঘটেছে। আর সেই কারণেই একটা রাস্তায় গর্ত বোজাতে পুরসভার ভাঁড়ার থেকে কয়েক লক্ষ টাকা ‘ফালতু’ বেরিয়ে গেল বলে তাঁর অভিযোগ। যদিও ওই অভিযোগ মানতে নারাজ মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘কাজটা সাময়িক ভাবে করা হয়েছে। এর জন্য তেমন কোনও খরচ হয়নি।’’

পুরসভার রাস্তা দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ার জানান, ওখানে নিকাশি নালার যে কাজ হবে, তা তাঁদের জানানো হয়নি। সেই কারণেই এই হাল। একই দাবি মেয়র পারিষদ রতন দে-রও। তাঁর কথায়, ‘‘একটা রাস্তা খোঁড়া হলে তা সারাইয়ের দায়িত্ব আমাদেরই। কিন্তু কোন সময়ে তা খোঁড়া হবে, সে নিয়ে আমাদের দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সুবিধা হয়। এ ক্ষেত্রে সেটা করা হয়নি।’’ তিনিই জানান, পটুয়াপাড়ায় ওই নিকাশির কাজ করানো হয়েছে স্থানীয় বরোর তরফে।

কেন জানানো হয়নি? স্থানীয় ৯ নম্বর বরোর পক্ষ থেকে তার কোনও ব্যাখ্যা মেলেনি। রতনবাবু জানান, রাস্তা সারাইয়ের কাজ করতে হলে তা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করেই করা উচিত। এর জন্য ওই রাস্তার মাটির হাল কেমন, কোন সময়ে কাজ করা হচ্ছে, কী ধরনের সরঞ্জাম লাগবে— সে সব দেখেশুনে নেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে তেমন কোনও সুযোগ মেলেনি। হঠাৎই জানা যায়, ওই রাস্তাটি খোঁড়া হয়েছে। এমনকী, গত শনিবার রাতভর যখন সারাইয়ের কাজ চলাকালীন তুমুল বৃষ্টি হচ্ছিল, তার মধ্যেই পুরো কাজটি করতে হয়েছে।

অভিযোগ, এমন দায়সারা ভাবে রাস্তাটি সারাই হতে দেখে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা কর্তব্যরত কর্মীদের সে কথা বলেন। কিন্তু তাতে কান দেননি কেউই। গাড়ি-গাড়ি মিশ্রণ এনে ঢালা হতে থাকে সেখানে। অথচ পুরসভারই ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরের এক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘ওই রাস্তায় যে সংখ্যক গাড়ি চলে, তাতে এমন জোড়াতালির সারাইয়ে খুব শীঘ্রই বসে যাবে ওই রাস্তা। এক মাসও টিকে থাকলে হয়!’’

রাস্তা সারাইয়ে এত তাড়াহুড়োই বা ছিল কেন? রতনবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘ওই রাস্তা কালীঘাট মন্দির ও আদিগঙ্গার সঙ্গে যুক্ত। কাছে একটা মন্দিরও রয়েছে। এখন শ্রাবণ মাস। প্রায় প্রতিদিনই বহু পুণ্যার্থী বাঁক কাঁধে শিবের মাথায় জল ঢালতে যাচ্ছেন ওই পথে। তাই রাস্তাটা দ্রুত সারানোর দরকার ছিল। আর একে বর্ষা, তার উপরে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করতে হবে— এই দুইয়ের চাপেই কোনও মতে কাজটি শেষ করতে হয়েছে।’’

construction Patchwork
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy