Advertisement
E-Paper

পিজিতে স্ট্রেচার নাকি অঢেল, তবু পান না রোগীরা

মগরাহাটের বাসিন্দা এক যুবকের ডান পা বাইক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বৃহস্পতিবার স্ট্রেচার পায়নি তাঁর পরিবারও। নিরুপায় হয়ে বৃষ্টির মধ্যে দাদাকে কোলে তুলে সার্জারির বহির্বিভাগে নিয়ে আসেন ভাই।

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৯ ০১:২৭
অসহায়: পায়ে ঘা নিয়ে এ ভাবেই চিকিৎসার জন্য ঘুরছেন মনোতোষ শিকদার। বৃহস্পতিবার, এসএসকেএমে। নিজস্ব চিত্র

অসহায়: পায়ে ঘা নিয়ে এ ভাবেই চিকিৎসার জন্য ঘুরছেন মনোতোষ শিকদার। বৃহস্পতিবার, এসএসকেএমে। নিজস্ব চিত্র

বাঁ পায়ের চামড়া উঠে গিয়েছে। দগদগে ঘায়ের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। স্ট্রেচারের অভাবে ওই অবস্থায় এসএসকেএমের প্লাস্টিক সার্জারির বহির্বিভাগে দু’হাতে ভর দিয়ে শরীর ঘষটে চিকিৎসকের ঘরের দিকে এগোচ্ছেন প্রৌঢ় মনোতোষ শিকদার।

মগরাহাটের বাসিন্দা এক যুবকের ডান পা বাইক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বৃহস্পতিবার স্ট্রেচার পায়নি তাঁর পরিবারও। নিরুপায় হয়ে বৃষ্টির মধ্যে দাদাকে কোলে তুলে সার্জারির বহির্বিভাগে নিয়ে আসেন ভাই। বহির্বিভাগ চলাকালীন স্ট্রেচারের অভাবে এ ভাবেই হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ রোগীর পরিজনদের। যন্ত্রণায় কাতর মনোতোষ এ দিন বললেন, ‘‘মানুষকে মানুষ ভাবা হয় না। বিনামূল্যে চিকিৎসা, ওষুধ আছে। কিন্তু স্ট্রেচার নেই!’’

দুর্গাপুজোর আগে বৃষ্টির মধ্যে হাঁটার সময়ে বাঁ পায়ে ধারালো কিছু বিঁধে বিপত্তি ঘটে। প্রথমে গুরুত্ব দেননি মনোতোষ। পরে ক্ষতস্থানে ঘা হয়ে যায়। এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মনোতোষের চামড়া কেটে বাদ দেন চিকিৎসকেরা।

মনোতোষের ভাইপো শচীন শিকদার বলেন, ‘‘অস্ত্রোপচারের পরেও অবস্থার বদল না হওয়ায় কাকাকে এসএসকেএমে রেফার করা হয়।’’ সেই মতো এ দিন প্লাস্টিক সার্জারির বহির্বিভাগে মনোতোষকে আনেন তাঁর পরিজনেরা। কিন্তু জরুরি বিভাগের সামনে দীর্ঘক্ষণ

অপেক্ষা করেও স্ট্রেচার পাননি তাঁরা। এ দিকে দুপুর দুটো বেজে গেলে বহির্বিভাগ বন্ধ হয়ে যাবে। তাই দেড়টা নাগাদ বাধ্য হয়ে স্ট্রেচার ছাড়াই মনোতোষকে তাঁর পরিজনেরা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।

দুর্ভোগ কম পোহাতে হয়নি মুজফ্ফর লস্করের পরিবারকেও। এক হাতে দাদার ক্ষতিগ্রস্ত ডান পায়ের গোড়ালি এবং আর এক হাতে কোমরের অংশ ধরেছিলেন ভাই। ওই অবস্থায় এক ঘর থেকে আর এক ঘরে রোগীকে নিয়ে দৌড়োদৌড়ি করতে গিয়ে এক সময়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন তিনি। মুজফ্ফরের বাবা বলেন, ‘‘স্ট্রেচার নিতে লম্বা লাইন। কখন পাওয়া যাবে ঠিক নেই। রোগীর পরিবারের কী কষ্ট বলুন তো!’’

গত জুলাইয়ে স্ট্রেচারের অভাবে এসএসকেএমেই এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল।

জগাছার বাসিন্দা নারায়ণচন্দ্র বাগচীর মৃত্যুতে তাঁদের পরিজনদের রাগ গিয়ে পড়েছিল হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীর উপরে। যার প্রেক্ষিতে মনোতোষের ভাইপো শচীন বলেন, ‘‘যে সময়ে চাপ বেশি থাকে, সে সময়ে যাতে রোগীরা দুর্ভোগের শিকার না হন, তা নিশ্চিত করা উচিত।’’

হাসপাতালের সুপার রঘুনাথ মিশ্র বলেন, ‘‘স্ট্রেচারের কোনও অভাব নেই। বহির্বিভাগ চলাকালীন রোগীর চাপ থাকে। সে সময়ে স্ট্রেচার পেতে যাতে অসুবিধা না হয়, তার জন্য আলাদা লোক রাখা হয়েছে। হাসপাতাল চত্বরের কোথাও স্ট্রেচার পড়ে রয়েছে কি না, দু’জন কর্মী তা লক্ষ রাখেন। পাশাপাশি ডেপুটি সুপার, অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারেরা নজরদারি চালান।’’ সুপার যোগ করেন, ‘‘অন্য হাসপাতালের মতো স্ট্রেচারের বিনিময়ে আমাদের এখানে ভোটার বা আধার কার্ড জমা রাখা হয় না। স্ট্রেচার যাতে রোগীর পরিজনেরা জমা করেন, তার জন্য হাসপাতালের পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে ঘোষণার ব্যবস্থা রয়েছে। রোগীর পরিজনেরা একটু সচেতন হলেই এই সমস্যা হয় না।’’

SSKM Hospital Stretcher Health Health Department
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy