Advertisement
E-Paper

সুস্থ হয়েও ঠিকানা নেই মনোরোগীদের

সুস্থ হয়ে ওঠা মানসিক রোগীরা, যাঁদের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যান না আত্মীয়-স্বজনেরা, কিংবা যাঁরা বাড়ির কথা মনেই করতে পারেন না, কোথায় যাবেন তাঁরা? পুনর্বাসনের এই প্রশ্নটি বিভিন্ন সময়ে সামনে এসেছে।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৫ ০০:৫৯
আঁখি। —নিজস্ব চিত্র।

আঁখি। —নিজস্ব চিত্র।

সুস্থ হয়ে ওঠা মানসিক রোগীরা, যাঁদের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যান না আত্মীয়-স্বজনেরা, কিংবা যাঁরা বাড়ির কথা মনেই করতে পারেন না, কোথায় যাবেন তাঁরা? পুনর্বাসনের এই প্রশ্নটি বিভিন্ন সময়ে সামনে এসেছে। আরও একবার সেই প্রশ্ন বড় হয়ে উঠল ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রি-তে ভর্তি আঁখি নামে এক রোগিণীকে কেন্দ্র করে।

পাভলভ মানসিক হাসপাতাল থেকে আঁখিকে ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রি-তে পাঠানো হয়েছিল। আপাতত চিকিৎসকেরা তাঁকে সুস্থ বলেও ঘোষণা করেছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও আঁখিকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া যাচ্ছে না। কারণ তিনি বাড়ির ঠিকানা বলতে পারছেন না।

এক দিকে ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রি-র কর্তারা জানাচ্ছেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠানটি মানসিক চিকিৎসার উৎকর্ষকেন্দ্র। সেখানে শয্যাসংখ্যা সীমিত। একটি শয্যা অকারণ আটকে থাকার অর্থ অন্য কোনও রোগীকে বঞ্চিত করা। তাই অবিলম্বে আঁখিকে হাসপাতাল থেকে সরাতে চান তাঁরা। অন্য দিকে, পাভলভ-ও তাঁকে ফিরিয়ে নেবে না বলে জানাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কোথায় রাখা হবে আঁখিকে, তা-ই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।

স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘আমরা নিজেরাই অন্ধকারে। এ প্রশ্নের জবাব আমাদের কাছে নেই।’’

কিন্তু আশ্রয়হীন মেয়েদের জন্য এ রাজ্যে সমাজকল্যাণ দফতরের বেশ কয়েকটি হোম রয়েছে। সেখানে কি আঁখির ঠাঁই হতে পারে না? রাজ্যের সমাজকল্যাণমন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘‘কেন পারে না? হাসপাতালের তরফে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরাই সেই ব্যবস্থা করতে পারি। শুধু আশ্রয় নয়। ওঁর বৃত্তিমূলক কিছু প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করতে পারি। কারণ বাকি জীবন মেয়েটিকে কিছু না কিছু করে তো বাঁচতে হবে!’’

প্রশ্ন উঠেছে, এই সমস্যা তো নতুন কিছু নয়। রাজ্যের মানসিক হাসপাতালগুলিতে এখন মোট শয্যাসংখ্যা ১০৫০টি। সব মিলিয়ে সেখানে ভর্তি রয়েছেন এর দ্বিগুণেরও বেশি রোগী। যার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশই সেরে উঠেছেন। কেন সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলির তরফে সমাজকল্যাণ দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় না? এর উত্তরে পাভলভ এবং ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রি কর্তৃপক্ষ নীরব থেকেছেন। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে কখনও স্পষ্ট কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। পুনর্বাসনের ব্যাপারে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিকে কাজে লাগিয়ে কয়েকটি হোম তৈরি করা হবে বলে ঠিক হয়েছে। যদিও তা এখনও আলোচনার স্তরেই রয়েছে।’’

কিন্তু যত দিন তা না হচ্ছে, তত দিন আঁখির মতো মানুষেরা যাবেন কোথায়? সেই প্রশ্ন আপাতত সমাধানহীন হয়েই রয়ে গিয়েছে। ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রি-র মহিলা ওয়ার্ডে রীতিমতো ব্যাগ গুছিয়ে অপেক্ষা করছেন আঁখি। যাকে দেখছেন, তাঁর কাছেই বছর ত্রিশের ওই তরুণীর প্রশ্ন, ‘‘আমি এখন কোথায় যাব?’’

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে খবরের শিরোনামে এসেছিলেন পাভলভ মানসিক হাসপাতালের রোগিণী আঁখি। হিংস্র হয়ে উঠছেন, এই কারণ দেখিয়ে টানা কয়েক মাস পাভলভের সলিটারি সেল-এ আটকে রাখা হয়েছিল তাঁকে। বিষয়টি সামনে আসার পরেই তোলপাড় শুরু হয় নানা মহলে। হস্তক্ষেপ করে মহিলা কমিশন ও মানবাধিকার কমিশন। স্বাস্থ্যকর্তারা উদ্যোগী হয়ে সলিটারি সেল তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সাসপেন্ড করা হয় হাসপাতালের সুপার-সহ তিন জনকে। আঁখিকে পাভলভ থেকে পাঠানো হয় আইওপি-তে। সেখানে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে থাকেন আঁখি। আর তখনই বড় হয়ে ওঠে তাঁর পরবর্তী আশ্রয়ের প্রশ্ন।

ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রি-র অধিকর্তা প্রদীপ সাহা বলেন, ‘‘এটা খুব বড় সমস্যা। মানসিক হাসপাতালে ভিড় বেড়েই চলেছে। ফলে পুনর্বাসনের প্রশ্নটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’ পাভলভ-কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, এক বার হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে বাড়ির লোক আর যোগাযোগ করেন না বহু ক্ষেত্রেই। সেই মানুষেরা তাই সুস্থ হওয়ার পরেও মানসিক হাসপাতালের চার দেওয়ালের মধ্যে থেকে যেতে বাধ্য হন। যে কোনও সমাজের পক্ষেই এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। একই কথা বলেছেন লুম্বিনী পার্ক মানসিক হাসপাতালের চিকিৎসেকরাও।

soma mukhopadhyay institute of psychiatry pavlov mental hospital psychiatric patients rehabilitation well patients mental patients mental patients rehab
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy