E-Paper

জল থইথই হাসপাতাল যেন ভোগান্তির অন্য নাম

শুধু কার্ডিয়োলজি বিভাগই নয়, এসএসকেএম হাসপাতালের রোনাল্ড রস ভবন, প্রসূতি ও সদ্যোজাত বিভাগ, ফার্মেসি বিভাগ, অক্সিজেন স্টোর, ক্যান্টিন পুরোপুরি জলমগ্ন হয়ে পড়ে শুক্রবার।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৪ ০৭:১১
নাস্তানাবুদ: ভারী বৃষ্টিতে জলমগ্ন এসএসকেএম হাসপাতাল। তার মধ্যে দিয়েই হুইলচেয়ারে বসিয়ে কোনওক্রমে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এক রোগীকে। শুক্রবার।

নাস্তানাবুদ: ভারী বৃষ্টিতে জলমগ্ন এসএসকেএম হাসপাতাল। তার মধ্যে দিয়েই হুইলচেয়ারে বসিয়ে কোনওক্রমে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এক রোগীকে। শুক্রবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

এসএসকেএমের কার্ডিয়োলজি বিভাগের দু’পাশে লম্বা সিমেন্টের বেদিতে পা তুলে বসেছিলেন ওই বিভাগে ভর্তি হওয়া রোগীদের আত্মীয়-পরিজনেরা। তাঁদের সামনে তখন যেন ছোটখাটো ডোবা। যেখানে জলের গভীরতা হাঁটু সমান। সেই জমা জল ডিঙিয়ে কার্ডিয়োলজি বিভাগে রোগীদের নিয়ে যেতে নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে আত্মীয়দের। রোগীর পরিজনদের মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ, জল না নামলে কী ভাবে তার সামনে বসে রাত কাটাবেন তাঁরা?

শুধু কার্ডিয়োলজি বিভাগই নয়, এসএসকেএম হাসপাতালের রোনাল্ড রস ভবন, প্রসূতি ও সদ্যোজাত বিভাগ, ফার্মেসি বিভাগ, অক্সিজেন স্টোর, ক্যান্টিন পুরোপুরি জলমগ্ন হয়ে পড়ে শুক্রবার। যার ফলে রোগী ভোগান্তি চরমে উঠেছে। জলে ডুবে ছিল পার্ক সার্কাসের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালও। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৬ নম্বর গেটের সামনে জল জমে থাকায় হাসপাতালে রোগী নিয়ে ঢুকতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন পরিজনেরা।

শুক্রবার বেলা ১২টা নাগাদ এসএসকেএমের কার্ডিয়োলজি বিভাগের সামনে বসে থাকা পলাশ পাল জানালেন, তাঁর মা সুমিতা পাল ওই বিভাগের আইসিইউ-তে ভর্তি। পলাশ বলেন, ‘‘কাল রাত থেকে জেগে বসে আছি। জল না নামলে কোথায় থাকব জানি না।’’

ওই হাসপাতালের প্রসূতি ও সদ্যোজাত বিভাগের একতলা এতটাই জলমগ্ন যে লিফ‌্‌ট বন্ধ করে দিতে হয়েছে। রোগীর বাড়ির লোকেরা খাবার নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠছেন। বজবজ থেকে আসা সাবির হোসেন মণ্ডল বলেন, ‘‘আমার স্ত্রী রেনুকা খাতুন এখানে ভর্তি। কিন্তু একতলার বহির্বিভাগ জলে ডুবে রয়েছে। লিফ্‌টে হাঁটু সমান জল। আমাদের তো বটেই, রোগীদেরও হেঁটে উঠতে হচ্ছে।’’

ফার্মেসি বিভাগের ভিতরে এতটাই জল জমে যায় যে ওষুধ বাঁচিয়ে রাখাই দায় হয়। সে সব কোনও রকমে বাঁচিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেন কর্মীরা। ডুবে থাকা আলমারির পায়া ছাপিয়ে জল প্রায় পৌঁছে গিয়েছিল তাকেও। প্রেসক্রিপশন নিয়ে এসএসকেএমের ফার্মেসি বিভাগে ঢুকেছিলেন শ্যামা সর্দার। প্রায় হাঁটুজল ঠেলে ভিতরে থেকে ফিরে বললেন, ‘‘করিডর তো নয়, যেন নদী। এতটা জল ভেঙে ঢুকেও ওষুধ পেলাম না।’’ শুধু শ্যামাই নন, বেশির ভাগ রোগী বা তাঁদের আত্মীয়েরা ফার্মেসিতে ঢুকে নিরাশ হয়ে ফিরে আসেন। তাঁদের প্রশ্ন, বৃষ্টির মধ্যে কোথায় ওষুধ কিনতে যাবেন তাঁরা? সেখানকার এক কর্মী হিরণ্ময় বিশ্বাস বলেন, ‘‘কোনও রকমে ওষুধ বাঁচাতে পেরেছি। ফের বৃষ্টি হলে কী হবে জানি না।’’ ফার্মেসির পাশের স্টেশনারি স্টোর্সের ভিতরেও জল।

এসএসকেএমের ক্যান্টিনও এ দিন জলের নীচে ছিল। সেই জলে পা ডুবিয়েই খাচ্ছিলেন কয়েক জন। কর্মী শৈলেন মণ্ডল বলেন, ‘‘ক্যান্টিনে জল জমার ঘটনা বহু বছর পরে হল।’’ তবে দেখা গেল, হাসপাতাল জুড়ে পাম্প চালিয়ে জল বার করার চেষ্টা করছেন এসএসকেএমের কর্মীরা। তাঁদের এক জনের দাবি, ‘‘ফার্মেসির দিকটা নিচু। তাই একটু ভারী বৃষ্টি হলে এখানে জল জমে যায়। পাম্প দিয়ে জল বার করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’’

পার্ক সার্কাসের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালও সকাল থেকে জলমগ্ন ছিল। প্রধান ফটক কোনও রকমে পেরিয়ে হাসপাতালে ঢুকেও নিস্তার নেই। ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনেও জমে রয়েছে জল। শুধু হাসপাতাল চত্বরেই নয়, ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে শুরু করে জল জমেছে বহির্বিভাগের সামনেও। হাসপাতালের এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে যেতে গিয়ে চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে রোগী ও তাঁর পরিজনদের।

একই হয়রানির ছবি দেখা গেল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছ’নম্বর গেটের সামনে। সেখানে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ যেন নদী। ওই হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে গিয়ে দেখা গেল, এক মুমূর্ষু রোগীকে ট্রলিতে করে অন্য কোনও ওয়ার্ডের দিকে বৃষ্টির মধ্যে নিয়ে যাচ্ছিলেন এক আত্মীয়। আত্মীয়ের হাতের ছাতা রোগীর মাথায় ধরেও তাঁকে বৃষ্টির থেকে আড়াল করা যাচ্ছিল না।

কোনও ক্রমে ত্রিপলের নীচে বসে আছেন হাসপাতালে ছড়িয়ে থাকা রোগীর পরিজনেরা। তাঁদেরই এক জন বলেন, ‘‘প্রার্থনা করছি, আর যেন বৃষ্টি না হয়। ফের বৃষ্টি হলে এ বার তো যেখানে শুয়ে আছি, সেখানেও জল জমে যাবে। তখন কোথায় যাব?’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Cyclone Dana Heavy Rainfall Water Logged Kolkata Water logged SSKM Hospital

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy