Advertisement
E-Paper

ধ্বংসস্তূপে খোঁজ সান্ত্বনার

ক্যানিং স্ট্রিটের দিকে একতলায় সফ্‌ট টয়ের দোকানের বিপুল সামগ্রী নষ্ট হয়েছে বাগড়ি মার্কেটের বিধ্বংসী আগুনে। দেড় দিন পরে সোমবার নিজেদের দোকানে ঢুকতে পেরেছেন রমাপ্রসাদবাবুরা। ধ্বংসস্তূপ থেকে হাতড়ে কিছু জিনিস উদ্ধারের পরে তাকের গণেশের দিকে ফিরে তাকালেন

পুড়ে খাক দোকান থেকেই শেষ সম্বলটুকু তুলে নিতে মরিয়া ব্যবসায়ীরা। —নিজস্ব চিত্র।

পুড়ে খাক দোকান থেকেই শেষ সম্বলটুকু তুলে নিতে মরিয়া ব্যবসায়ীরা। —নিজস্ব চিত্র।

আর্যভট্ট খান এবং শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:১৫
Share
Save

ক্ষতিগ্রস্ত দোকানের তাকে কী ভাবে যেন রক্ষে পেয়ে গিয়েছে পুঁচকে গণেশমূর্তিটি। সেই সিদ্ধিদাতার সামনে জোড় হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন বাবা-ছেলে রমাপ্রসাদ চৌধুরী, রাজা চৌধুরী।

ক্যানিং স্ট্রিটের দিকে একতলায় সফ্‌ট টয়ের দোকানের বিপুল সামগ্রী নষ্ট হয়েছে বাগড়ি মার্কেটের বিধ্বংসী আগুনে। দেড় দিন পরে সোমবার নিজেদের দোকানে ঢুকতে পেরেছেন রমাপ্রসাদবাবুরা। ধ্বংসস্তূপ থেকে হাতড়ে কিছু জিনিস উদ্ধারের পরে তাকের গণেশের দিকে ফিরে তাকালেন। দোকানের ছাদে চিড় ধরেছে। দেওয়ালও ক্ষতবিক্ষত। তবু গণেশের নীল তাকটা বেঁচে গিয়েছে। সে-দিকে মুখ করে টানা মিনিট পাঁচেক দাঁড়িয়ে থাকলেন দোকানের মালিক। শেওড়াফুলির বাসিন্দা রমাপ্রসাদ বললেন, ‘‘যা পেরেছি সরিয়ে নিয়ে কে জানে কত দিনের জন্য দোকান বন্ধ করে চলে যাচ্ছি। যাওয়ার আগে মন্ত্র পড়ে পুজোটা অন্তত সেরে যাই!’’

রবিবার ক্যানিং স্ট্রিটে কলকাতার অন্যতম প্রধান এই পাইকারি বাজার ঘিরে শুধুই ধ্বংসলীলা আর আতঙ্ক চোখে পড়ছিল। এ দিন থেকে শুরু হল জ্বলন্ত শ্মশানে ঘুরে দাঁড়ানোর মরিয়া চেষ্টা। দুপুরে সরু গলিটায় থিকথিকে ভিড়। লাইন ঠেলে একবারটি ভিতরে ঢোকার আকুতি। বেলা ১২টা নাগাদ সেই ভিড়টার মাথার উপরেই চারতলার জানলার ভিতরটা জ্বলে উঠতে দেখা গেল। আমড়াতলা স্ট্রিটের গলিতে বাগড়ি মার্কেটের ‘বি’ ব্লকের দিকে জড়ো হওয়া জনতাকে সরাতে তবু হার মানল পুলিশ। মহম্মদ আফতাব, পারভেজ আহমেদের মতো ব্যবসায়ীরা বলছিলেন, বাড়ির ভিতরটা তপ্ত কড়াইয়ের মতো ফুটছে।

বাড়ির চারতলায় মহম্মদ সাজিদের ভ্রমণ সংস্থার অফিস। চার বছরের ঘুমন্ত শিশুকে কোলে নিয়ে সাজিদের স্ত্রী একদৃষ্টে তাকিয়ে বসেছিলেন রবিবার রাত থেকেই। সোমবার সকালে পাগলের মতো ধ্বংসস্তূপ হাতড়াতে দেখা গেল ক্যানিং স্ট্রিটে চশমার দোকানের মালিক জয়নাল আবেদিন ও তাঁর কিশোর পুত্রকে। জয়নাল ছোট মগে করে জল ঢেলে দোকানের মেঝে-দেওয়ালের উত্তাপ কমানোর চেষ্টা করছেন। পাশে হিমাদ্রি দত্তের শল্য চিকিৎসার সরঞ্জামের দোকানটির দশাও কহতব্য নয়। পুড়ে কালো হওয়া যন্ত্রপাতি কেজি দরে জঞ্জালের মতো গাড়িতে তুলছিলেন পুরকর্মীরা, সে দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে দোকান-মালিক। একতলায় সঞ্জয় মেহেরার মতো ভাগ্যবান কদাচ মিলবে। আশপাশের দোকান বেশির ভাগ পুড়ে গেলেও তাঁর ব্যাগের দোকানটি অক্ষত।

আরও পড়ুন: ৯০ কোটির ওষুধ গিলেছে আগুন, সঙ্কট জেলায়

ফুটপাতের যে-দিকে হকারের ডালা থেকে আগুন ছড়িয়েছিল বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তার কাছেই তালগোল পাকিয়ে রয়েছে লোহার ফ্রেম, সিমেন্টের চাঙড়, প্লাস্টিকের থালা, টেডি বিয়ার, হ্যাঙার, পারফিউমের টিউব। এক জায়গায় ডাঁই করতে হাত লাগিয়েছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরাই। আমড়াতলা স্ট্রিটে এইচ গেটের দিক দিয়ে তাঁদের ভিতরে ঢোকার অনুমতি দিল পুলিশ। পুড়ে যাওয়া দোকানের সামগ্রী সরাতে মুটেদের চড়া দর হাঁকতেও দেখা গেল।

এরই মাঝে কাছে সফি মসজিদ থেকে দুপুরে খিচুড়ির বন্দোবস্ত করেছিলেন হাসিম বালা। বিপন্নতার মধ্যে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এই তাগিদই রুপোলি রেখা হয়ে থাকল।

Fire Bagri Market Kolkata Fire Debris Consolation বাগড়ি মার্কেট

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}