Advertisement
E-Paper

নগদ-নির্ভরতা কমাচ্ছে পাড়ার ছোট দোকানও

পরিস্থিতির চাপে পাড়ায় পাড়ায় ছোটখাটো দোকান বা স্টলেও দ্রুত বাড়ছে ‘ভার্চুয়াল ওয়ালেট’ ও ‘প্লাস্টিক মানি’র ব্যবহার। কোথাও বসছে পেটিএম, কোথাও আবার কার্ড সোয়াইপ করার যন্ত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০৮
রোলের দোকানেও পেটিএম। শনিবার। — নিজস্ব চিত্র

রোলের দোকানেও পেটিএম। শনিবার। — নিজস্ব চিত্র

পরিস্থিতির চাপে পাড়ায় পাড়ায় ছোটখাটো দোকান বা স্টলেও দ্রুত বাড়ছে ‘ভার্চুয়াল ওয়ালেট’ ও ‘প্লাস্টিক মানি’র ব্যবহার। কোথাও বসছে পেটিএম, কোথাও আবার কার্ড সোয়াইপ করার যন্ত্র। নোটের আকাল শুরু হওয়ার পরপরই এক ধাক্কায় বিক্রি কমে গিয়েছিল ছোট দোকানগুলিতে। রোল, লস্যি, পানের দোকান তো বটেই, বিক্রি কমে গিয়েছিল মুদির দোকানেও। কিন্তু প্রয়োজনই খুলে দিয়েছে অন্য পথ। পেটিএম ও কার্ড সোয়াইপ করার যন্ত্র বসিয়ে পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে শুরু করেছেন স্টল-মালিক ও ছোট দোকানিরাও।

একটা মোটাসোটা, ভারী রোল খেতে গেলে বড়জোর ৬০ টাকা। নগদ ছাড়া আর কোনও মাধ্যমে দাম মেটানোর কথা ভাবারই অবকাশ ছিল না এত দিন। নোট বাতিলের ধাক্কায় এমন স্টলও দাম নিচ্ছে পেটিএমে! টালিগঞ্জ ফাঁড়ি ও চারু মার্কেটের মাঝামাঝি জায়গায় ঠেলাগাড়িতে রোল বিক্রি করেন মানস ঘোষ। এমনিতে রোজ বিক্রি গড়ে হাজার দুয়েক টাকার। নোটের চোটে বিক্রি পড়ে গিয়েছিল। শেষমেশ মানসবাবু তিন-তিনটে পেটিএম অ্যাকাউন্ট চালু করেছেন। মানসবাবুর কথায়, ‘‘মানুষ এখন যতটা পারেন একশোর নোট বাঁচিয়ে চলছেন। তাই পেটিএম চালু করেছি, ফলও মিলছে।’’

বড়বাজারে ক্যালেন্ডার-বিক্রেতা গিরিধারী চৌধুরী বসেন কেবল ডালা নিয়ে। তিনিও দিচ্ছেন পেটিএমের সুবিধে! নতুন বছর আসতে আর মাসখানেক। এই সময়ে অগ্রিম জমা করে লোকে প্রচুর বরাত দিয়ে যায় ক্যালেন্ডারের। বেশির ভাগই দু’-তিন হাজার টাকার বরাত। আগে লোকে ৫০০ টাকার নোটে অগ্রিম দিত। কিন্তু এখন দিচ্ছে পেটিএমে।

আগরতলা থেকে আসা এক ক্রেতা অল্প কিছু ক্যালেন্ডারের বরাত দিয়ে অগ্রিম বাবদ ৫০০ টাকা দেবেন বলে জানিয়ে ২০০০-এর নোট ধরাতে গেলেন। গিরিধারী জোড়হস্ত, ‘‘রেহাই দিন! এই নোট নিয়ে খুচরো দিতে পারব না, পেটিএমে দেবেন।’’

বড়বাজারের মুরগিহাটার এক লস্যি কারবারিও আসল টাকার ব্যাগ ছেড়ে ‘ভার্চুয়াল ওয়ালেট’ নিয়েই ঢের স্বস্তিতে। ৫০-৬০ টাকার পানীয় খেলেও ওই লস্যি বিক্রেতা হাসতে হাসতে ক্রেতাদের নির্দিষ্ট নম্বর ডায়াল করে দাম মেটাতে বলছেন।

বাগুইআটির চালপট্টির একাধিক দোকানেও পেটিএমের সুবিধে থাকার লিখিত ঘোষণা বড় বড় অক্ষরে।

যোধপুর গার্ডেন তল্লাটে আজাদ মাতব্বরের ছোট মুদি-স্টেশনারি দোকানেও পেটিএমে টাকা নেওয়ার ব্যবস্থা সদ্য চালু হয়েছে। সেই সঙ্গে তড়িঘড়ি বসেছে কার্ড সোয়াইপের যন্ত্র। আজাদের কথায়, ‘‘মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছাড়া থাকবেন কী করে? কত আর বাকিতে দেওয়া যায়? তাই, এই সব ব্যবস্থা।’’

কেক-পেস্ট্রি-প্যাটির এক বিপণি-চেনের আউটলেট আজাদগড়ে চালু হয় এই বছর মার্চে। অগস্টে চালু হয় পেটিএম। দোকানের কাচের দরজার গায়ে বড় বড় করে ‘পেটিএম অ্যাকসেপ্টেড হিয়ার’ লেখা থাকলেও এত দিন কেউ গুরুত্ব দেননি।

আর এখন? আউটলেটের মালিক রতনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘অগস্ট থেকে নভেম্বর, তিন মাসে দোকানের মোট পাঁচটা লেনদেন পেটিএমে হয়েছিল। ৮ নভেম্বরের পর থেকে এখন রোজ পাঁচটা লেনদেন পেটিএমে হচ্ছে।’’ লেক গার্ডেন্সে লর্ডসের মোড়ে চটজলদি, মুখরোচক খাবারের ছোট ছোট দোকানের ছড়াছড়ি। তারই একটায় বসেছে কার্ড সোয়াইপের যন্ত্র। দোকানের পক্ষে অমিতাভ চট্টোপাধ্যায় হাতেকলমে তার ব্যবহার শিখছেন। তিনি বললেন, ‘‘নোট বাতিলের পরে ব্যবসা লাটে ওঠার জোগাড়। মানুষের হাতে ডাল-ভাত খাওয়ারই নগদ নেই, ফাস্টফুড কী করে খাবে? তাই, কার্ড সোয়াইপের যন্ত্র বসাতে হল।’’

কার্ডে খরচ মেটানোর যন্ত্র দোকানে বসিয়ে তার ব্যবহার শিখিয়ে দিতে হাজির ব্যাঙ্কের কর্মীরাও। তাঁদের এক জন ধ্রুবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় জানালেন, ৮ নভেম্বর নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার পরে কাজের চাপে কার্যত নিঃশ্বাস ফেলার সময় নেই। তাঁর কথায়, ‘‘পাড়ার এক চিলতে পান-সিগারেটের দোকানও কার্ড সোয়াইপ করার যন্ত্র বসাচ্ছে।’’ ফুটপাথের স্টল-মালিক বা দোকান মালিকদের অনেকেই বলছেন, ‘‘অল্প বয়সীরা পেটিএমে অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ। মোবাইল ফোনে বোতাম টিপেই তারা দাম মেটাতে পারছে।’’

আবার শহরের বড় একটি বিপণিতে চালু হয়েছে কার্ড সোয়াইপ করে নগদ পাওয়ার ব্যবস্থা। বৃহস্পতিবার এই ব্যবস্থা চালু করেছেন বিপণি কর্তৃপক্ষ। যে কোনও ব্যাঙ্কের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ওই বিপণির অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেওয়া যাচ্ছে দোকানে বসানো যন্ত্র সোয়াইপ করে। সঙ্গে সঙ্গে সেই পরিমাণ টাকা নগদে হাতে মিলছে। কিছু কেনাকাটা না করলেও এই সুবিধে পাওয়া যাচ্ছে।

demonetization
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy