বিধি-ভঙ্গ: একটি বেসরকারি হাসপাতালের কাছেই রাস্তার উপরে ফাটানো হচ্ছে বাজি। সোমবার সকালে, ই এম বাইপাস সংলগ্ন আনন্দপুরে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
রবিবার যেখানে শেষ হয়েছিল, সোমবার যেন সেখান থেকেই শুরু হল বিধি-ভঙ্গের ছবি। রাত থাকতেই পাড়ায় পাড়ায় তারস্বরে বাজানো শুরু হল সাউন্ড বক্স। কান ফাটানো আওয়াজের তাসা পার্টি নিয়ে এ গলি, ও গলি ঘোরা শুরু হয় সূর্য ওঠার আগে থেকেই। এর পরে লরির মাথায় চড়ে এমন ভাবে পুণ্যার্থীদের ‘জল-যাত্রা’ চলতে থাকে যে, বিপদ ঘটার আশঙ্কা ছিল যে কোনও সময়ে! বন্ধ হওয়া তো দূর, উল্টে দেদার ফেটেছে নিষিদ্ধ শব্দবাজিও। যা নিয়ে প্রশ্ন করায় এক পুণ্যার্থীর মন্তব্য, ‘‘ছটপুজোয় ভোরের আলো ফোটার আগে উঠে জলের দিকে যেতে হয়। বক্স না বাজালে, বাজি না ফাটালে ঘুম ভাঙানো যায়!’’ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, বিধি বলবৎ করার কাজে পুলিশের ঘুম ভাঙল কি?
এ দিন বহু এলাকায় রাত সাড়ে তিনটে-চারটে থেকেই বাজি ফাটানো শুরু হয়ে যায় বলে অভিযোগ। তার প্রায় কোনওটিই সবুজ আতশবাজি নয়। রাতের শান্ত পরিবেশে সেগুলির আওয়াজ আরও কয়েক গুণ বেশি বোঝা যায়। নারকেলডাঙা এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘গত রাতে দেদার বাজি ফেটেছে আমাদের পাড়ায়। কিন্তু সব চেয়ে বিরক্তিকর হল, ভোর ৪টে থেকে একের পর এক বাজির আওয়াজে কেঁপে কেঁপে উঠতে হয়েছে। পুলিশের তরফে কেউ দেখার নেই। তা ছাড়া, ভোরের দিকে রাস্তায় এমনিই পুলিশ কম থাকে। এই সুযোগে বেপরোয়া ভাব আরও বেড়েছে।’’ কাদাপাড়ার কাছে একটি সিনেমা হলের সামনে দেখা যায়, তিন জন ব্যাগ থেকে একের পর এক শব্দবাজি বার করছেন আর ফাটাচ্ছেন। এক খুদেকে আবার দেখা যায়, চকলেট বোমায় আগুন ধরিয়ে রাস্তার দিকে ছুড়ে দিচ্ছে।
একই চিত্র দেখা যায় কাঁকুড়গাছি মোড় এবং শিয়ালদহ চত্বরেও। ছটের পুণ্যার্থীদের তাণ্ডবে ঘুম ছুটেছে বাগবাজারের মতো বেশ কিছু এলাকাতেও। ভিড়ের চাপে ওই এলাকার বেশ কিছু রাস্তা পুলিশকে বন্ধ করে দিতে হয়। সেখান দিয়ে তারস্বরে বাজনা বাজাতে বাজাতে যেতে দেখা গিয়েছে অনেককে। একই অবস্থা ছিল বাবুঘাট এবং ইডেন গার্ডেন্স চত্বরেও। বিধানসভার পাশের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে একটি দলের অনেককেই একসঙ্গে নাচার সময়ে বাজি ফাটাতে দেখা গিয়েছে। তাঁদের সঙ্গে ছিল বিশাল বিশাল বাদ্যযন্ত্র। যা নিয়ে তাঁদের এক জনের বক্তব্য, ‘‘আওয়াজ ছাড়া ঠিক উৎসব পালন হয় না। বাজি ফাটানো যদি ধরে শাস্তি দেওয়ার মতো অপরাধ হত, পুলিশ কি ছেড়ে দিত? ওই তো পুলিশ আছে! কিছু তো বলছে না!’’ দেখা গেল, সত্যিই সেখানে উপস্থিত পুলিশকর্মী কার্যত দর্শকের ভূমিকায়।
অভিযোগ, পুলিশকর্মীদের দর্শকের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে হাসপাতালের সামনে দীর্ঘ সময় ধরে শব্দবাজি ফাটানোর পরেও। এ দিন আনন্দপুর থানা এলাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালের গেট সংলগ্ন জলাশয়ে সকাল থেকে ভিড় করেছিলেন পুণ্যার্থীরা। ভোর থেকে সেখানে শব্দবাজি, একের পর এক শেল ফাটানো হয় বলে অভিযোগ। দীর্ঘ সময় ধরে তাণ্ডব চলার পরে একটি পুলিশের গাড়ি আসতে দেখা গেলেও শব্দবাজি ফাটানো বন্ধ করতে তৎপর হতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। বরং পুলিশের গাড়ির সামনেই দেদার বাজি ফাটানো হয়। দীর্ঘ সময় ধরে বাজির দৌরাত্ম্যে বিরক্ত হাসপাতালের এক নিরাপত্তারক্ষী বললেন, ‘‘যেখানে পুলিশই দর্শক, সেখানে আমরা কী বলব! কালীপুজো থেকে সহ্য করছি, আজও করলাম।’’ শুধু আনন্দপুর নয়, রবীন্দ্র সরোবর সংলগ্ন দেশপ্রাণ শাসমল রোড ও ৮৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় পুরসভার তৈরি অস্থায়ী জলাশয়ে ছটপুজো ঘিরে ভোর থেকে দেদার শব্দবাজি ফাটানো হয়। সেখানেও পুলিশকে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। চায়ের দোকানে বসে এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘বাচ্চারা একটু আনন্দ করছে। সব জায়গায় কি আর আইন দেখানো চলে!’’
অর্থাৎ, ছটেও সেই বুঝিয়ে ‘কার্যোদ্ধারের’ পথেই হাঁটল পুলিশ। কিন্তু বুঝিয়ে আইনভঙ্গ রোখা গেল কি? প্রশ্ন থেকেই গেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy