Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Park Circus

অদম্য লড়াই রাত জাগা দুই পাড়ার

তাল মিলিয়ে দু’বছরের শিশুর মুঠো করা হাতটা বারবার উপরের দিকে তুলে দিচ্ছিলেন মা বুশরা। কারণ তিনি চান, ‘‘ছোটবেলা থেকেই প্রতিবাদের ভাষা শিখুক আমার ছেলে মহম্মদ নুর আলি।’’ তাই সোয়েটার-টুপি পরা সন্তানকে বুকে আঁকড়েই পার্ক সার্কাস ময়দানে হাজির স্থানীয় বাসিন্দা বুশরা।

বিনিদ্র: সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জির বিরোধিতায় আন্দোলন চলছে শহরে। পুরসভার সামনে আন্দোলনকারীদের চা খাওয়াচ্ছেন এক বিক্রেতা।

বিনিদ্র: সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জির বিরোধিতায় আন্দোলন চলছে শহরে। পুরসভার সামনে আন্দোলনকারীদের চা খাওয়াচ্ছেন এক বিক্রেতা।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২০ ০১:২১
Share: Save:

ভিড়ের ভিতর থেকে আওয়াজ উঠছে ‘‘হাল্লা বোল, হাল্লা বোল!’’

তাল মিলিয়ে দু’বছরের শিশুর মুঠো করা হাতটা বারবার উপরের দিকে তুলে দিচ্ছিলেন মা বুশরা। কারণ তিনি চান, ‘‘ছোটবেলা থেকেই প্রতিবাদের ভাষা শিখুক আমার ছেলে মহম্মদ নুর আলি।’’ তাই সোয়েটার-টুপি পরা সন্তানকে বুকে আঁকড়েই পার্ক সার্কাস ময়দানে হাজির স্থানীয় বাসিন্দা বুশরা।

অন্য দিকে আবার ‘ঘরে বসে ফেসবুকে আন্দোলন আর নয়’ বলে স্লোগান তুলে রাস্তায় বসেছেন আর এক দল মানুষ। কলকাতা পুরসভার সামনে চ্যাপলিন স্কোয়ারে এনআরসি এবং সিএএ-র বিরোধিতার সেই সভায় শামিল দশম শ্রেণির পড়ুয়া নইমা হুজুই। তার কথায়, ‘‘বাবা রাত জাগতে বারণ করছিলেন। কিন্তু

আমি জাগব। দেশের জন্য এটুকু কষ্ট করতে পারব না?’’পার্ক সার্কাস ময়দান থেকে ধর্মতলার ওই জায়গার দূরত্ব কয়েক কিলোমিটার। কিন্তু বুধবার রাতে ‘আজাদি’র জন্য দেওয়া স্লোগানই মিলিয়ে দিচ্ছিল দু’টি জায়গাকে। গান গেয়ে, স্লোগান তুলে একসঙ্গে রাত জাগল পার্ক সার্কাস ও নিউ মার্কেট চত্বর।

শুধু বুশরা কিংবা তাঁর স্বামী জাহিদ আহমেদ আনসারিই নন। জাতীয় নাগরিক পঞ্জি এবং সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় পার্ক সার্কাস ময়দানে যে ভাবে প্রতিবাদ চলছে, সেখানে শিশুদেরও এনে শামিল করছেন তাদের পরিজনেরা। যেমন বুধবার রাতে লেডিজ় পার্কের বাসিন্দা শাকিল আহমেদ নিয়ে এসেছিলেন মেয়ে আমিরাকে। জাতীয় পতাকা হাতে ধরে বাবার কোলে চেপে সারা মাঠ ঘুরছিল বছর দুয়েকের মেয়েটা। এত ছোট মেয়েকে এনে কী লাভ?

প্রশ্নটা শুনেই শাকিল বললেন, ‘‘লাভ-ক্ষতির হিসেব কষতে তো এই আন্দোলন নয়। ছোট থেকে ওরাও শিখুক, লড়াই কী ভাবে করতে হয়। প্রতি রাতে এখানে না নিয়ে এলে তো কেঁদে ভাসাবে মেয়ে।’’ কাজের চাপ সামলে বাড়ি ফেরার পথে এক বার পার্ক সার্কাস ময়দানের সামনে না দাঁড়ালে মনটা উসখুস করে হাওড়ার যুবক সুবিমলের। হাতে ধরা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে তিনি বললেন, ‘‘এই নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহেরা কারা বলুন তো? কেন ওঁদের বিভেদের রাজনীতিতে দেশবাসী শামিল হবেন?’’ মাঠের মাঝের ভিড় থেকে নাট্যকর্মী নবমিতা চন্দ তখন আওয়াজ তুলেছেন, ‘‘ঝুমকে বোল, নাচকে বোল, গা-কে বোল...।’’ উল্টো দিকের ভিড় তাল মিলিয়ে বলছে, ‘‘আজাদি।’’ ঠিক তখনই কয়েক কিলোমিটার দূরে রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে ডাফলি বাজিয়ে নইমা, তার কয়েক জন সমবয়সি এবং বড়দের গলায় স্লোগান উঠল, ‘‘জয় ভীম, জয় ভীম।’’

‘ভীম’ কেন? ‘‘মহাভারতের ভীম মানেই শক্তি। তাই তাঁর নাম নিয়ে আমরা সকলে লড়াই শুরু করছি,’’ বললেন নিউ মার্কেট চত্বরের দোকানি তনবির আলম। মঙ্গলবার থেকে পুরসভার সামনে সিএএ এবং এনআরসি-র বিরোধিতায় ধর্নায় বসেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। রাত জাগলে পাছে তাঁদের ঘুম পায়, তার জন্য বিনামূল্যে চা খাওয়াচ্ছিলেন মহম্মদ মেহবুব। বললেন, ‘‘সন্ধ্যা পর্যন্ত নিউ মার্কেটে ঘুরে চা বিক্রি করি। রাতে তো আমার ঘরের লোকজনই রাস্তায় এসে বসেছেন, তাঁদের পাশাপাশি সকলকেই না হয় একটু চা খাওয়ালাম।’’

ক্রমশ বাড়ছে কুয়াশা। শহরের রাস্তা সিক্ত হচ্ছে। তার মধ্যেই নিউ মার্কেট চত্বরে জাতীয় পতাকা হাতে দুই খুদে তালাত আহমেদ ও জারা খান চেঁচিয়ে বলল, ‘‘নেহি চলেগা, নেহি চলেগা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Park Circus CAA Anti CAA Movement
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE