Advertisement
২৪ অক্টোবর ২০২৪

রেললাইন ঘেঁষা ঝুঁকির দিনযাপন

কেউ মাটির উনুনে সবে রান্না বসিয়েছেন, কেউ বা খাটিয়ায় শুয়ে। খেলাধুলো বা পড়াশুনো চলে ওই রেললাইনে বসেই। ট্রেন সামনে আসার আগেই রান্না ছেড়ে, খাটিয়া উল্টে, সব ফেলে নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে অভ্যস্ত ওঁরা। ট্রেন চলে গেলে ফিরে আসা। এরই মাঝে ঘটে যায় অঘটন। তবু বদলায় না এই ছবি।

বিপজ্জনক: জীবনকে বাজি রেখে এ ভাবেই বেঁচে থাকা। নিজস্ব চিত্র

বিপজ্জনক: জীবনকে বাজি রেখে এ ভাবেই বেঁচে থাকা। নিজস্ব চিত্র

জয়তী রাহা
শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৭ ০১:৩৩
Share: Save:

একটা শব্দ...। তাতেই ওঁরা বুঝতে পারেন ট্রেন আসছে। কেউ মাটির উনুনে সবে রান্না বসিয়েছেন, কেউ বা খাটিয়ায় শুয়ে। খেলাধুলো বা পড়াশুনো চলে ওই রেললাইনে বসেই। ট্রেন সামনে আসার আগেই রান্না ছেড়ে, খাটিয়া উল্টে, সব ফেলে নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে অভ্যস্ত ওঁরা। ট্রেন চলে গেলে ফিরে আসা। এরই মাঝে ঘটে যায় অঘটন। তবু বদলায় না এই ছবি।

দমদম থেকে চক্ররেলে চেপে শোভাবাজার ছাড়াতেই দেখা গেল, প্রায় রেললাইন দখলের ছবি। লাইনের উপরেই থরে থরে প্লাস্টিকের ছাউনির নীচে বিপজ্জনক ঝুপড়ি। কোনওটি ট্রেন থেকে মাত্র এক চুল দূরে।

অভিযোগ, চক্ররেল লাইনের ধারে শোভাবাজার-ইডেন গার্ডেন্সের মাঝে এমন অসংখ্য ঝুপড়ি গজিয়ে উঠেছে। ঢাকুরিয়া, টালিগঞ্জ-নিউ আলিপুর, লেক গার্ডেন্স-বালিগঞ্জ স্টেশনের মাঝেও তৈরি হয়েছে প্লাস্টিক এবং টালির ছাউনির ঝুপড়ি। যাত্রীদের অভিযোগ, দক্ষিণের স্টেশনগুলির পরিস্থিতি আরও খারাপ। সেখানে রেললাইনের মাঝে থাকে জলের ড্রাম, লাইনেই কাপড় বিছিয়ে শুকোনো হয়।

যাত্রীদের একাংশের এই নিয়ে অস্বস্তির শেষ নেই। কাজের সূত্রে প্রতি দিন খিদিরপুরে যাতায়াত করেন মৈনাক সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘ট্রেন ঢুকলে উনুনে বসানো কড়াই চলে যায় ট্রেনের নীচে। জানলা দিয়ে থুতু ফেলতে গিয়ে অনেক সময়েই হয়তো পড়ে রান্না-খাবারে।’’

ওই স্টেশন এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, এলাকায় চুরি-ছিনতাইয়ের মতো অপরাধমূলক কাজ বাড়ছে ওখান থেকেই। মানছেন লালবাজারের এক পুলিশ কর্তা। তিনি বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ওখান থেকে অভিযুক্তকে ধরে আনতে পারি আমরা। এর বেশি কিছু করতে পারি না। ওটা রেলের জায়গা।’’

যদিও পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র জানান, রুটিন মাফিক উচ্ছেদ হয়। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই ফিরে আসে। তিনি বলেন, ‘‘স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের সহযোগিতা ছাড়া স্থায়ী সমাধান অসম্ভব।’’ গত বছর মাঝেরহাট থেকে দখলদার উচ্ছেদে সাফল্য রেলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে মানছেন পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক। তাঁর দাবি, ‘‘রাজনৈতিক প্রভাব না থাকায় এবং পুলিশের সাহায্যে সেটি সম্ভব হয়েছিল।’’ তিনি জানান, নেতাদের দাবি থাকে, পুনর্বাসন দেওয়ার। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কোন যুক্তিতে পুনর্বাসন দেবে রেল? আমার ঘরে লোক ঢুকেছে। তাঁকে বের করতে কী আমি ফ্ল্যাট কিনে দেব?’’ তিনি জানান, কোর্টের অর্ডারে বছর কয়েক আগে লেক গার্ডেন্স থেকে দখলদার উচ্ছেদ হয়েছিল। কিন্তু নেতাদের জোরে ফিরে এসেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Railway Track Life Risk
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE