Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দিন পনেরো হাঁটুজলে ভেসে আছে জনজীবন

সামান্য বৃষ্টি হলেই আতঙ্কে ভুগতে হয় তাঁদের। অভিযোগ, আগে তবু বৃষ্টির পরে দু’-তিন দিনের মধ্যে জল নেমে যেত। ইদানীং ১৫-২০ দিন কেটে গেলেও জল নামছে না।

ভোগান্তি: জল ঠেলে জল আনতে যাওয়া। শনিবার, রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার দক্ষিণপাড়ায়। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

ভোগান্তি: জল ঠেলে জল আনতে যাওয়া। শনিবার, রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার দক্ষিণপাড়ায়। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৮ ০১:৫৯
Share: Save:

উঠোন, বারান্দা, ঘর জলময়। জলবন্দি গোটা পাড়া। সেই জল ঠেলেই কাজে যাচ্ছেন মানুষ। মহিলারা জলে দাঁড়িয়ে রান্না করছেন। উঁচু ক্লাসের পড়ুয়ারা এক হাঁটু জল ঠেলে যদি বা স্কুলে যেতে পারছে, নিচু ক্লাসের অনেকেই তিন দিন স্কুলে গিয়ে দু’দিন ঘরবন্দি। অসুখ-বিসুখ হলে রোগীকে পাড়ার লোকের কাঁধে চেপে আধ কিলোমিটার দূরে গিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে উঠতে হচ্ছে।

গত দিন পনেরো ধরে এমন ভাবেই চলছে রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের কুড়ের মাঠ, দক্ষিণপাড়া, মুচিপাড়া, মুসলমান পাড়ার হাজার খানেক বাসিন্দার। সামান্য বৃষ্টি হলেই আতঙ্কে ভুগতে হয় তাঁদের। অভিযোগ, আগে তবু বৃষ্টির পরে দু’-তিন দিনের মধ্যে জল নেমে যেত। ইদানীং ১৫-২০ দিন কেটে গেলেও জল নামছে না।

শনিবার দুপুরে ঘুরে দেখা গেল, ওই সব এলাকার প্রায় সব বাড়ির ভিতরেই জল। এলাকার বাসিন্দা বাবু দাস ও তাঁর স্ত্রী মিনতি জানালেন, একে তো পাকা রাস্তা নেই। আধ কিলোমিটারেরও বেশি পথে কংক্রিটের রাবিশ ফেলা রাস্তায় এক হাঁটু জল মাড়িয়ে যেতে হচ্ছে খাবার জল আনতে, রেশন দোকান, বাজার, মুদিখানা, কেরোসিন তেল আনা সবই করতে হচ্ছে বারবার জল মাড়িয়ে।

এলাকার আর এক বাসিন্দা সনৎ মণ্ডল জানান, ১৯ বছর আগে যখন তিনি বাড়ি তৈরি করেন, সেই সময়ে রাস্তা আরও নিচু ছিল। যে কয়েক জন সেই সময়ে পাড়ায় বসবাস করতে শুরু করেন, তাঁরা নিজেদের উদ্যোগে রাবিশ ফেলে রাস্তা সামান্য উঁচু করেছিলেন। বছর সাত-আট আগে পুরসভা এক বার রাবিশ ফেলেছিল। কিন্তু তা কবেই জলে ধুয়ে গিয়েছে। সনৎবাবু এ দিন বেশ কয়েকটি বাড়ির সামনে নিয়ে গিয়ে দেখালেন। সেগুলির কোল্যাপসিবল গেটে তালা লাগানো। জিনিসপত্র জলে ডুবে রয়েছে। ওই ব্যক্তি জানালেন, বাড়ির লোকজন জমা জলে থাকতে না পেরে যে যার আত্মীয়ের বাড়িতে চলে গিয়েছেন। জল না নামলে ফেরার উপায় নেই।

গৃহবধূ প্রিয়াঙ্কা দাস জানান, মা তপতী বিশ্বাস তাঁদের সঙ্গেই থাকেন। দিন কয়েক আগে অসুস্থ হয়ে পড়েন। জল ঠেলে রোগী দেখতে যেতে হবে বলে চিকিৎসকও তাঁদের বাড়িতে ঢোকেননি। বাধ্য হয়ে বৃদ্ধাকে কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। সেই সময়ে কোমর সমান জল ছিল পাড়ার ভিতরে। অ্যাম্বুল্যান্স ঢোকেনি। কার্যত পাড়ার লোকের কাঁধে চেপে আধ কিলোমিটার গিয়ে বৃদ্ধা অ্যাম্বুল্যান্সে ওঠেন। ওই গৃহবধূ জানান, তাঁর স্বামী অমিতবাবু ও তিনি রোজ সকাল-বিকেল তপতীদেবীকে হাসপাতালে দেখতে যাচ্ছেন হাঁটু জল পেরিয়ে। রাতে বাড়ি ফিরে অনেক দিনই দেখছেন সাপ, ব্যাঙ ঘুরে বেড়াচ্ছে বারান্দায়।

এলাকার বাসিন্দা প্রৌঢ়া জানকী সাউয়ের অভিযোগ, পুরসভা কর্তৃপক্ষ পাম্প চালিয়ে জল নামাতে উদ্যোগী হন না। তিনি আরও অভিযোগ করেন, একটানা নোংরা জল মাড়িয়ে তাঁদের অনেকেরই চর্মরোগ হয়েছে।

এমন অবস্থায় পুরকর্তৃপক্ষ কী বলছেন? স্থানীয় কাউন্সিলর দীপা ঘোষ দীর্ঘ দিন অসুস্থ। পুর চেয়ারম্যান পল্লব দাসের বক্তব্য, ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের ওই সব জায়গা পঞ্চায়েত লাগোয়া। পঞ্চায়েত এলাকায় নিচু জমি, ডোবা বুজিয়ে অনেকে বাড়ি করে ফেলেছেন। সেই কারণে কুড়ের মাঠ, দক্ষিণপাড়া, মুচিপাড়ার মতো এলাকা থেকে বৃষ্টির জল বেরোতে পারছে না। যার জেরে এই পরিস্থিতি। চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, শীঘ্রই পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে নিকাশি ঠিক করতে অনুরোধ জানানো হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Monsoon Water Suffer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE