Advertisement
E-Paper

কাজের ফাঁকেই মুলুকের ভোটের ফলের দিকে নজর ওঁদের

অনেকের মনেই মঙ্গলবার সকাল থেকে ঘুরপাক খেয়েছে একটাই প্রশ্ন— বিহারে ফের নীতীশ না তেজস্বী?

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২০ ০৪:১০
উৎসুক: ভোটে1র ফলাফল জানতে মোবাইলে চোখ এ শহরে থাকা বিহারের বাসিন্দাদের। মঙ্গলবার, পোস্তায়। ছবি: সুমন বল্লভ

উৎসুক: ভোটে1র ফলাফল জানতে মোবাইলে চোখ এ শহরে থাকা বিহারের বাসিন্দাদের। মঙ্গলবার, পোস্তায়। ছবি: সুমন বল্লভ

মাথার উপরে রোদের তেজ ততটা না থাকলেও, মেজাজটা বেশ উত্তপ্ত বছর পঁয়তাল্লিশের বদ্রী সাউয়ের। পোস্তা বাজারের এক গলিতে তেতে থাকা চাটুতে পরোটা ভাজার ফাঁকেই বার বার চোখ রাখছিলেন পাশে দাঁড়ানো বন্ধুর মোবাইলে। জেনে নিচ্ছিলেন, ভোটের ফলাফলের দাঁড়িপাল্লায় এগিয়ে কে?

শহর কলকাতায় প্রায় ২০ বছর ধরে পরোটা বিক্রি করা বদ্রীই শুধু নন। তাঁর মতো অনেকের মনেই মঙ্গলবার সকাল থেকে ঘুরপাক খেয়েছে একটাই প্রশ্ন— বিহারে ফের নীতীশ না তেজস্বী? এঁরা সকলেই আদতে বিহারের বাসিন্দা। কেউ ভোট দিয়ে কলকাতায় ফিরে এসেছেন। কারও আবার ভোট দিতে যাওয়াই হয়নি। কিন্তু পরিবার-পরিজন কাকে ভোট দিয়েছেন, সেই খবর রেখেছেন। আর তাই এ দিন সকালে ভোটগণনা শুরু হওয়ার পর থেকে ফলাফলের দাঁড়িপাল্লায় নীতীশ ও তেজস্বীর ওঠানামা ঘিরে তাঁদেরও উত্তেজনার পারদ চড়েছে।

বড়বাজার, পোস্তা, গিরিশ পার্ক, চিনাবাজার, ক্যানিং স্ট্রিট এলাকায় মূলত মোটবাহকের কাজ করেন বিহারের এই বাসিন্দারা। কেউ আবার শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছাতুর শরবত, পরোটা, লিট্টি, চা বিক্রি করেন। প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু হয় ওঁদের ব্যস্ততা। এ দিনও তার ব্যতিক্রম ছিল না। তাই সময় ধরে টিভি বা মোবাইলের পর্দায় চোখ রাখতে না পারলেও কাজের ফাঁকেই জেনে নিয়েছেন, তাঁদের মুলুকের মাটিতে কার পাল্লা কতটা ভারী হল। সাইকেল ভ্যানে মালপত্র ওঠানোর আগে মোবাইলে নজর রাখছিলেন ভাগলপুরের কৈলাস দাস ও গুড্ডু মণ্ডল। বললেন, ‘‘ভোট দিয়ে এসেছি। তাই ফলটাও তো জানতে হবে। বিহারে পরিবার থাকে। ওঁদের ভাল-মন্দের দিকেও তো খেয়াল রাখতে হবে।’’

বাংলার মাটিতে রোজগার করতে এলেও পরিবারের সদস্যেরা যাতে নিরাপদে থাকেন, সে দিকেই তাঁদের নজর রয়েছে বলে জানালেন বদ্রীও। বললেন, ‘‘তেজস্বীকে চাই না। উনি জিতলে তো আবার লালুপ্রসাদের রাজত্ব শুরু হবে। তাতে নিরাপত্তায় সমস্যা হতে পারে।’’ কথার মাঝেই মধুবনী জেলার বাসিন্দা ওই ব্যক্তি জানলেন, নীতীশেরই পাল্লা ভারী। শুনেই মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বদ্রী বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর জন্যই নীতীশ জিতছেন। মোদীর সঙ্গে উনি রয়েছেন, তাই ওঁকেই আবার চাই।’’

বিহারে ভোট দিতে গিয়েছিলেন? পোস্তার ডালপট্টিতে ভারী বস্তা লরিতে তোলার ফাঁকে বৃদ্ধ সুরেন্দ্র যাদব বললেন, ‘‘হ্যাঁ, ভোট দিয়েই তো ফিরে এলাম। শুনলাম, নীতীশজি এগিয়ে আছেন। এটা খুব ভাল হচ্ছে। লালু তো কোনও কাজই করেননি। ওঁর ছেলে জিতলে আবার একই অবস্থা হবে!’’ অতিমারি পরিস্থিতিতে বিহারে যেতে পারেননি ছাতুর শরবত বিক্রেতা দেবানন্দ মণ্ডল। কিন্তু বাড়ির লোকজন ইভিএমের কোন বোতাম টিপেছেন, তা জানেন তিনি। বললেন, ‘‘রাজনীতি বুঝি না। কিন্তু নিজের রাজ্যের উন্নয়ন চাই।’’

টিভির পর্দায় তখন ফল দেখাচ্ছে— নীতীশ-১৩১, তেজস্বী-১০১। তা দেখেই আনন্দে লাফিয়ে উঠলেন চিনাবাজারে কর্মরত মজফ্ফরপুরের বাসিন্দা ছোটু দাস। বললেন, ‘‘বেশি কিছু বুঝি না। তবে এটা জানি, মোদীর দলের কেউ মুখ্যমন্ত্রী হলে আরও উন্নয়ন হবে।’’

চিনাবাজারের তস্য গলিতে একটা গুদামে তখন টিভিতে ভোটের ফল দেখতে ব্যস্ত রঘুনাথ-ছোটুরা। প্রত্যেকেই মনেপ্রাণে চাইছেন, এক বার গেরুয়া শিবিরের হাতে যাক তাঁদের বিহার। তা হলে কি বাংলাতেও...! প্রশ্ন শেষ হয় না। ভিন্ রাজ্য থেকে বাংলায় এসে খেটে খাওয়া মানুষগুলি বলে ওঠেন, ‘‘দিদির রাজ্যে এটা বলা মুশকিল!’’

Bihar Assembly Election 2020 Kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy