বেকেটোভার ব্যাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছেন পড়ুয়ারা। ছবি: দীপশিখা দাসের সৌজন্যে।
মোবাইল কখন বাজবে, সেই অপেক্ষায় সারা দিনই বসে থাকেন বাবা। ইউক্রেনের জ়েপোরিঝিয়ায় পাঁচতলা হস্টেলের নীচে বাঙ্কারে আটকে আছেন মেয়ে। শুকনো খাবার প্রায় শেষ। পানীয় জল নামমাত্র আছে। থাকার মধ্যে দু’প্যাকেট আটা। কিন্তু আগুন জ্বালানোর উপায় নেই। মেয়ের কাছ থেকে গত কয়েক দিনে প্রতিটি মুহূর্তের খুঁটিনাটি জানার চেষ্টা করেছেন বীজপুরের জেটিয়া গোয়ালাপাড়ার বাসিন্দা অনুপকুমার ঘোষ। তাঁর মেয়ে পূজা ‘জ়েপোরিঝিয়া স্টেট মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি’-তে এমবিবিএস-এর প্রথম বর্ষের পড়ুয়া। গত বছরের ডিসেম্বরে ইউক্রেনে যান পূজা। তিনি বলেন, ‘‘দু’ঘণ্টা পর পর বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে, সঙ্গে ইন্টারনেটও। এটা শনিবার থেকে শুরু হয়েছে। ফলে খাবারের সঙ্গে যোগাযোগও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এখন।’’
খারকিভ রাজধানী কিভ থেকে ট্রেনে ছ’ঘণ্টার পথ। ২০১৭ সালে শিশুরোগ নিয়ে পড়াশোনা করতে সেখানে গিয়েছিলেন দমদমের দীপশিখা দাস। তিনি বললেন, ‘‘আমরা বেকেটোভায় যে শেল্টারে আছি, সেখানেও খাবারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এক বার হাসপাতালে গিয়েছিলাম। গাড়ির সামনেই বিস্ফোরণ ঘটল। এ দিক-ও দিক ছড়িয়ে কত পোড়া দেহ। ২৩ সার্পনিয়া টিউব রেল স্টেশনে কয়েক হাজার মানুষ আটকে। তাঁদের পোষ্যেরা, এমনকি, পথকুকুরগুলিও প্রাণভয়ে আশ্রয় নিয়েছে সেখানে। খাবার নেই, জল নেই। আশ্বাস ছাড়া সরকারের কোনও সক্রিয় পদক্ষেপও নেই।’’
হালিশহরের নবনগরের বাসিন্দা আর এক ডাক্তারি পড়ুয়া চয়ন কুমার কিভ-এ আছেন। দেশে ফেরার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনিও। প্রথম দফায় যাঁরা ফিরতে পারলেন, তাঁদের সঙ্গে তিনিও বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। কিন্তু ফেরার সুযোগ হয়নি। পোল্যান্ড সীমান্তে
আটকে পড়েছেন দীপশিখার এক সহপাঠী নির্মল কুমার। তিনি এ দিন ভিডিয়ো কলে একের পর এক বিস্ফোরণের ছবি দেখিয়ে বলেন, ‘‘বহু বাঙালি আটকে আছেন, কী ভাবে দেশে ফিরতে পারব, কিছু বুঝতে পারছি না। কেউ বাঙ্কারে, কেউ টিউব রেল স্টেশনে আটকে। বাকিরা দিগ্ভ্রান্তের মতো মরিয়া হয়ে ঘুরছি দেশে ফেরার জন্য।’’
রাজ্য প্রশাসনের তরফে অবশ্য উদ্যোগ শুরু হয়েছে ইউক্রেনে আটকে থাকা পড়ুয়াদের বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করে সেই খবর নবান্নের কন্ট্রোল রুমে পৌঁছে দেওয়ার। শুক্রবার নৈহাটির তৃণমূল বিধায়ক পার্থ ভৌমিকও চয়ন কুমার ও পূজা ঘোষের বাড়িতে যান। তাঁদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে সমস্ত তথ্য মুখ্যমন্ত্রীকে জানানোর আশ্বাস দেন। পার্থবাবু বলেন, ‘‘এ রাজ্য থেকে কত জন ইউক্রেনে গিয়ে এখনও আটকে আছেন, তার ঠিকঠাক পরিসংখ্যান পেতে আপ্রাণ চেষ্টা করছি আমরা। যাতে বিদেশ মন্ত্রকের মাধ্যমে তাঁদের ফেরানোর ব্যবস্থা করা যায়।’’
শনিবার মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকার প্রত্যেকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy