E-Paper

সেতু বন্ধ, বাড়তি ভাড়ার ছেঁকায় চরম ভোগান্তির শিকার যাত্রীরা

বৃষ্টিহীন রবিবারের ভোর ৪টে থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বিদ্যাসাগর সেতু ও কোনা এক্সপ্রেসওয়ে বন্ধ রাখায় এ ভাবেই চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হলেন মানুষ।

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:২৩
শুনশান: একাধিক কাজের জন্য বন্ধ বিদ্যাসাগর সেতু। রবিবার।

শুনশান: একাধিক কাজের জন্য বন্ধ বিদ্যাসাগর সেতু। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।

দৃশ্য ১: এক হাতে ভারী ব্যাগ, অন্য হাতে ট্রলি ব্যাগ নিয়ে গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিলেন অনির্বাণ গুছাইত। গুজরাত থেকে কবিগুরু এক্সপ্রেসে চেপে রবিবার সাঁতরাগাছি স্টেশনে নামেন। তিনি বলেন, ‘‘শিয়ালদহ যাব। বাসে উঠেছিলাম। ভাড়া চাইল ১০০ টাকা! তাই আর কিছু পাওয়া যায় কিনা দেখছি।’’

দৃশ্য ২: আট বছরের ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে ঘাটাল থেকে এসপ্লানেডে যাওয়ার জন্য সাঁতরাগাছিতে নেমেছিলেন রঘুদেব সামন্ত। তিনি বলেন, ‘‘কী বিপদে পড়েছি! সেতু বন্ধ বলে কোনও গাড়ি পাচ্ছি না। শাটল ট্যাক্সি বলছে ২৫০ টাকা প্রত্যেকের ভাড়া লাগবে। ডাকাতি হচ্ছে?’’

দৃশ্য ৩: উলুবেড়িয়ার বাসিন্দা প্রবীর সামন্ত অফিসের কাজে বেহালা যাবেন বলে সাঁতরাগাছিতে নেমেছিলেন। প্রবীরের দাবি, ‘‘আমি কেন, কেউ জানত না যে ২৪ তারিখের পর ৩১ তারিখও সেতু ও কোনা এক্সপ্রেসওয়ে বন্ধ থাকবে। জানলে বেরোতামই না। অ্যাপ-বাইক বলছে বেহালা যেতে ৫০০ টাকা লাগবে।’’

বৃষ্টিহীন রবিবারের ভোর ৪টে থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বিদ্যাসাগর সেতু ও কোনা এক্সপ্রেসওয়ে বন্ধ রাখায় এ ভাবেই চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হলেন মানুষ। এক দিকে হাওড়া স্টেশন বা শিয়ালদহ পৌঁছতে পর্যাপ্ত সরকারি পরিবহণের ব্যবস্থা না থাকায় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হল ট্রেন যাত্রীদের। অন্য দিকে, সাঁতরাগাছি স্টেশনের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা বাস, অ্যাপ-বাইক, অ্যাপ-ক্যাব ও ট্যাক্সি চালকেরা সুযোগ বুঝে বেপরোয়াহয়ে ভাড়া বাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ। দিনের বেলা ভাড়া যেখানে ১০ গুণ বেশি চাওয়া হয়েছিল, রাতে তা আরও বহু গুণ বেড়ে যায় বলে দাবি যাত্রীদের।

পুজোর আর বাকি মাসখানেক। ফলে পুজোর কেনাকাটাও শুরু হয়েছে জোরকদমে। রবিবার ছুটির দিনে সেই বাজার সারতে বেরিয়ে অনেকেই পরিবার নিয়ে নাস্তানাবুদ হয়েছেন। অভিযোগ, এ দিন দিনভর যাত্রী হয়রানির এই ঘটনা ঘটলেও দেখা মেলেনি পুলিশের। যদিও পুলিশের দাবি, এই ধরনের ঘটনাই ঘটেনি।

সাঁতরাগাছি স্টেশনের কাছে কলকাতা সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাস উড়ালপুের সিঙ্গল স্টিল পোর্টা বিম বসানো ও বিদ্যাসাগর সেতুর কেব্‌ল মেরামতির জন্য গত ২৪ তারিখের মতো এ দিনও সেতু ও কোনা এক্সপ্রেসওয়ে ভোর থেকে বন্ধ রাখা হয়। ২৪ তারিখ সেতু ও কোনা এক্সপ্রেসওয়ে বন্ধ রাখার বিষয়টি পুলিশ কিছুটা প্রচার করলেও এ দিন কলকাতা ও হাওড়ায় ঢোকা-বেরোনোর প্রধান দু’টি পথ বন্ধ রাখার কথা অনেকেই জানতেন না বলে দাবি। তাই এ দিন পথের হয়রানি ছিল ২৪ তারিখের থেকেও বেশি।

বেলা ১১টায় সাঁতরাগাছি স্টেশনের বাইরে গিয়ে দেখা গেল, যাত্রীদের থিকথিকে ভিড়। একই চিত্র স্টেশনের উল্টো দিকে কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে। সেখানেও যানবাহন না পেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকেছেন কয়েকশো যাত্রী। ওই পথে কয়েকটি বেসরকারি বাস চললেও হাওড়া সেতু দিয়ে ঘুরে যেতে হবে বলে শিয়ালদহ পৌঁছতে টিকিটের মূল্য চাওয়া হয় ১০০ টাকা।

বেলা যত গড়িয়েছে, একের পর এক ট্রেন সাঁতরাগাছিতে পৌঁছতেই যাত্রীদের ঢেউ গাড়ি না পেয়ে আছড়ে পড়েছে স্টেশন ও কোনা এক্সপ্রেসওয়ের বাসস্ট্যান্ড চত্বরে। যে ক’টি যানবাহন হাওড়া দিয়ে ঘুরে শিয়ালদহ বা ধর্মতলা গিয়েছে, রাতে তারা ভাড়া হেঁকেছে আকাশ ছোঁয়া।

সাঁতরাগাছি জুড়ে যখন এ ভাবে যাত্রীদের হয়রান হতে হয়েছে, তখন পুলিশের দেখা মেলেনি কেন? হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘এই ধরনের অভিযোগ আমরা পাইনি। পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হত। আমাদের সাঁতরাগাছি ট্র্যাফিক পোস্টে সব সময়ই লোক ছিল। তাঁদের কাছে কোনও অভিযোগ কেউ করেননি। আসলে এমন ঘটনাই ঘটেনি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Traffice fare

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy