Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ফার্মাসি খোলার অনুমতি মিলল এক বছর পরে

ওই আগুনে নষ্ট হয়েছিল প্রায় ৯০ শতাংশ ওষুধ। অগ্নিকাণ্ড স্বাভাবিক নয় বলে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছিল তদন্তে।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওষুধের স্টোরে অগ্নিকাণ্ড। —ফাইল চিত্র

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওষুধের স্টোরে অগ্নিকাণ্ড। —ফাইল চিত্র

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৪০
Share: Save:

গত বছর অক্টোবরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফার্মাসি বিভাগে আগুন লেগে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল আনুমানিক পাঁচ কোটি টাকার ওষুধ। এক বছর পরে সেই পোড়া ওষুধ সরানোর অনুমতি পেলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তা-ও পিছু ছাড়ল না বিতর্ক।

ওই আগুনে নষ্ট হয়েছিল প্রায় ৯০ শতাংশ ওষুধ। অগ্নিকাণ্ড স্বাভাবিক নয় বলে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছিল তদন্তে। হাসপাতালের অন্দরে এই অভিযোগও ওঠে যে, ফার্মাসিতে ওষুধের হিসেবে গরমিল ঢাকতে ইচ্ছাকৃত ভাবে আগুন লাগানো হয়েছিল। হাসপাতাল সূত্রের খবর, অন্তর্ঘাতের অভিযোগ এতই জোরালো ছিল যে রাজ্য ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি ও সেন্ট্রাল ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এমনকি, হায়দরাবাদের একটি ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি সংস্থাকেও ডাকা হয়। অন্তর্ঘাতের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ফরেন্সিক তদন্তে ওই সংস্থার সুনাম রয়েছে।

এই অবস্থায় গত ৪ সেপ্টেম্বর পোড়া ওষুধ সরানোর অনুমতি দেয় স্বাস্থ্য ভবন। যা ঘিরে মূলত দু’টি প্রশ্ন তুলেছেন মেডিক্যাল কলেজের কর্মী-আধিকারিকদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, এতগুলি ফরেন্সিক সংস্থার পাশাপাশি স্বাস্থ্য ভবনের এক প্রতিনিধিদলও ঘটনার তদন্ত করেছিল। তাতে কী উঠে এল? এক বছরেও কিছু জানা গেল না কেন? যদি তদন্তের ফল শূন্য হয়, তা হলে এই এক বছর মূল ফার্মাসির দরজা বন্ধ রাখার অর্থ কী? ফার্মাসির সঙ্গে যুক্ত হাসপাতালের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পুড়ে যাওয়া ওষুধ সরানোর কাজ কেন এত দিন বন্ধ থাকল বুঝলাম না। ফার্মাসির কম্পিউটারের রেকর্ড সরানোর জন্য ওই আগুন বলে সন্দেহ করা হয়েছিল। তা হলে কি সেই অনুমান ভিত্তিহীন ছিল? তা-ই যদি হবে, সে ক্ষেত্রে যাঁরা ওই সন্দেহ করেছিলেন তাঁরা কেন জবাবদিহি করবেন না?’’ আর এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ঢাকঢোল পিটিয়ে তদন্তই সার। আগুন লাগল কী ভাবে, সেটাও জানতে পারলাম না।’’

যদিও কর্মী-আধিকারিকদের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন হাসপাতালের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, আগুন লাগার পরে ফার্মাসি বিভাগকে সরানো হয় এমসিএইচ হাবের সাততলায়। সেখান থেকেই হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে এত দিন ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছিল। কিন্তু ওই জায়গায় ওষুধ সংরক্ষণের আদর্শ পরিবেশ নেই। তা ছাড়া ওষুধ সংরক্ষণের যে সব নিয়ম রয়েছে, সেগুলিও মানা সম্ভব হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য ভবনের এক শীর্ষ কর্তার হস্তক্ষেপে পুলিশের কাছ থেকে নো-অবজেকশন (এনওসি) সার্টিফিকেট পাওয়ার বিষয়টি ত্বরান্বিত হয়। হাসপাতালের এক কর্তার কথায়, ‘‘অগ্নিকাণ্ডের তদন্তের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা ধন্দে থাকায় এনওসি পেতে এত দেরি হল।’’

তবে হাসপাতালের অধ্যক্ষা মঞ্জুশ্রী রায়ের মত, বিষয়টি নিয়ে অহেতুক জলঘোলা করা হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘আগুন কী ভাবে লাগল, সেই তদন্ত চলছে। নষ্ট ওষুধ পুনর্ব্যবহার সম্ভব কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে খানিক দেরি হয়েছে। এখন সবার আগে পোড়া জায়গা সংস্কার করতে হবে। ফার্মাসিকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনাই অগ্রাধিকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE