ভেঙে পড়েছে হাওড়া স্টেশনের ১৪ ও ১৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেড।
সওয়া ন’টা নাগাদ হাওড়ার ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে এসেছিল কালকা মেল। যাত্রীরা ট্রেন থেকে নেমে প্ল্যাটফর্ম ধরে হেঁটে বাইরে চলেও গিয়েছেন। খালি ট্রেনটি কারশেডে পাঠানোর কাজ চলছে। আচমকাই প্রচণ্ড শব্দ। হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল প্ল্যাটফর্মের যাত্রী শেডের কিছুটা অংশ (১০০ ফুটের মতো)। তবে মাটিতে পড়েনি। ট্রেনের ছাদের সঙ্গে ঝুলতে থাকে ভাঙা শেড। সোমবার সকালের ঘটনা।
রেল সূত্রের খবর, ওই সময়ে প্ল্যাটফর্মে বেশি যাত্রী ছিলেন না। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান রেলের কর্তারা। আসে পুলিশ ও আরপিএফ। বন্ধ করে দেওয়া হয় ১৪ ও ১৫ নম্বর প্ল্যাটফর্ম। যাতে কেউ ঢুকতে না পারে, সে জন্য দড়ি দিয়ে দুই প্ল্যাটফর্মই আটকে দেয় আরপিএফ। কিন্তু জওয়ানদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে যাত্রীরা সেখানে ভিড় করলে সামাল দিতে হিমশিম খায় পুলিশ ও আরপিএফ।
পরে দুই প্ল্যাটফর্মের ওভারহেডের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে মেরামতির কাজ শুরু করেন রেলকর্মীরা। সকালের ব্যস্ত সময়ে দু’টি প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেওয়ায় পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব রেলের ট্রেন চলাচল কিছুটা বিঘ্নিত হয়।
কিন্তু কেন এমন হল? রেল সূত্রে খবর, এ দিন সকালে হাওড়ার ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মের (শুরুর দিকে) একটি শেডের তিনটি মরচে ধরা লোহার স্তম্ভ আচমকা হেলে শেড সমেত লাইনে দাঁড়ানো কালকা মেলের ছাদের উপরে এসে পড়ে। মাটিতে না পড়ায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো গিয়েছে বটে, কিন্তু রেলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে, হাওড়ার মতো সর্বোচ্চ মানের স্টেশনের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ নিয়ে।
বিপত্তির কারণ মরচে ধরা এমনই তিনটি স্তম্ভ। সোমবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
মাটির নীচে বা উপরে, রেলের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ যে শিকেয়, এই ঘটনা ফের তা প্রমাণ করল। রেলের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই কলকাতা মেট্রো চলছে নড়বড়ে হয়ে। বিভিন্ন দূরপাল্লার ট্রেনেও নিত্যই লেগে রয়েছে নানা গোলমাল। ট্রেনের বাতানুকূল যন্ত্রের ত্রুটি থেকে ইঞ্জিনের যান্ত্রিক ত্রুটি তো রয়েছেই, এ বার পূর্ব রেলের হাওড়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম শেড ভেঙে পড়ায় সেখানকার রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েও প্রশ্ন উঠল।
রেল সূত্রের খবর, বৃটিশ আমলের এই প্ল্যাটফর্মটির এত দিন ধরে কোনও রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি। অথচ হাওড়া স্টেশনের গায়েই হাওড়ার ডিভিশনাল রেলের অফিস। সেখানে ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজারও (ডিআরএম) রয়েছেন। যাত্রীরা প্রশ্ন তুলেছেন, কেউই বিষয়টি দেখেননি কেন? এই ঘটনার দায় নেবে কে? ডিআরএম অর্নিবাণ দত্ত অবশ্য এর কোনও উত্তর দেননি। তাঁর শুধু বক্তব্য, “কী হচ্ছে, সেটা আপনারাও দেখছেন। তদন্ত হোক, তার পরে ভাবা হবে।” মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বলেন, “এখন ওই পুরনো শেড পুরোটাই ভেঙে নতুন করা হচ্ছে।”
রেলকর্তাদের একাংশের অভিযোগ, শেষ তিন-চার বছরে পূর্ব রেলের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ প্রয়োজন ছাড়াই প্রতিটি স্টেশনের মেঝে বা দেওয়ালে বারবার শুধু নানা ধরনের টাইলস (গ্রানাইট) পাল্টেছেন। খরচ হয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ফলে যা ঘটার, তা-ই ঘটছে বলে অভিযোগ ওই কর্তাদের।
রেলের এক কর্তার কথায়, ‘‘এক বার ‘আদর্শ প্ল্যাটফর্ম’ তৈরি, আর একবার সুষ্ঠু যাত্রী পরিষেবা দেওয়ার নামে প্ল্যাটফর্মগুলিতে অযথা টাইলস পাল্টানো হয়েছে। আলোর ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। ফলে ভাঁড়ারের লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে জলের মতো। কিন্তু পরিকাঠামোগত নির্মাণ কাজ কিছুই হয়নি।’’ অথচ ওই টাকা খরচ হয়েছে রেলের বাণিজ্যিক বিভাগের যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য তহবিল থেকে। যাতে দেখানো যাবে, প্রচুর স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা হয়েছে যাত্রীদের জন্য। আর খরচ করেছে রেলের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy