Advertisement
E-Paper

কোর্টে তিরস্কারের তোড়ে ভুল কবুল পুলিশের

থানা থেকে আদালত, সর্বত্র পুলিশের লেজে-গোবরে দশা অব্যাহত! তদন্তের নামে আলিপুরের ‘সাজানো ঘটনা’ ফাঁস হয়ে যাওয়ায় আদালতের তোপের মুখে পড়তে হয়েছিল তাদের। এ বার ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ বা ভাবমূর্তির ক্ষত মেরামতিতে নেমেও পুরনো পাপের জন্য বিচারকের কাছে পুলিশকে ফের ভর্ৎসিত হতে হল। তিরস্কারের তোড়ের মুখে সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল স্বীকার করতে বাধ্য হন যে, পুলিশের ভুল হয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৩২

থানা থেকে আদালত, সর্বত্র পুলিশের লেজে-গোবরে দশা অব্যাহত! তদন্তের নামে আলিপুরের ‘সাজানো ঘটনা’ ফাঁস হয়ে যাওয়ায় আদালতের তোপের মুখে পড়তে হয়েছিল তাদের। এ বার ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ বা ভাবমূর্তির ক্ষত মেরামতিতে নেমেও পুরনো পাপের জন্য বিচারকের কাছে পুলিশকে ফের ভর্ৎসিত হতে হল। তিরস্কারের তোড়ের মুখে সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল স্বীকার করতে বাধ্য হন যে, পুলিশের ভুল হয়েছিল।

আলিপুর থানায় ঠিক এক সপ্তাহ আগেকার তাণ্ডবের ঘটনায় ধৃত যোগেশ বোরাকে শুক্রবার চার দিনের জন্য পুলিশি হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আলিপুর আদালতের মুখ্য বিচারক সঞ্জীব দারুকা। তবে তার আগে কৃতকর্মের জন্য ফের পুলিশের কড়া সমালোচনা করেন তিনি। গত মঙ্গলবার পাঁচ জনকে ধরে আনলেও আলিপুরের ঘটনায় তাদের জড়িত থাকার কোনও তথ্যপ্রমাণ আদালতে পেশ করতে পারেনি পুলিশ। পাঁচ জনকেই জামিনে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক। পুলিশের কাছে না ছিল ধৃতদের বিবৃতির কোনও নথি, না ছিল সিসিটিভি-র ফুটেজ। তদন্তের এই দৈন্যদশার জন্য বিচারক এ দিনও পুলিশকে তিরস্কার করেন।

কেস ডায়েরিতে আগের ভুলের কিছুটা প্রায়শ্চিত্তের চেষ্টা করেছে পুলিশ। এ দিন ফের কেস ডায়েরি খতিয়ে দেখেন বিচারক দারুকা। দেখা যায়, বৃহস্পতিবার ধৃত যোগেশের জবানবন্দির বয়ান কেস ডায়েরিতে রাখা হয়েছে। আলিপুর থানার সিসিটিভি-র ফুটেজ ঘেঁটে আরও পাঁচ জনের উপস্থিতির তথ্যপ্রমাণ দেওয়া হয়েছে সেই সঙ্গেই। পুলিশের তরফে জানানো হয়, এই পাঁচ জনের মধ্যে তিন জনকে যোগেশ চিহ্নিত করেছে। কেস ডায়েরির সঙ্গে আলিপুর কাণ্ডের কিছু সাক্ষীর বয়ান এবং ইতিমধ্যে জামিনে ছাড়া পাওয়া পাঁচ জনের বয়ান বিচারকের কাছে পেশ করা হয়।

ওই সব নথিপত্র খুঁটিয়ে দেখে বিচারক প্রশ্ন তোলেন, এগুলো আগে আদালতে পেশ করা হয়নি কেন? সিসিটিভি-র ফুটেজই বা এত দিন পরে কেন এল আদালতে? পুলিশের পেশ করা নথিতে দেখা গিয়েছে, ১৪ নভেম্বর, আলিপুর থানায় তাণ্ডবের দিনেই ঘটনার কয়েক জন সাক্ষী এবং আগে ধৃত পাঁচ জনের বয়ান নথিবদ্ধ করে পুলিশ। ১৫ নভেম্বর পাঁচ জনকে ধরে আদালতে তোলা হয়। ১৮ তারিখে তাঁদের জামিন দেন বিচারক। এ-সব মনে করিয়ে দিয়েই বিচারকের প্রশ্ন, ওই তথ্যপ্রমাণ এত দিন আদালতে পেশ করা হয়নি কেন?

পুলিশের তখন কার্যত নাকখত দেওয়ার দশা। সরকারি আইনজীবী সৌরীনবাবু পত্রপাঠ পুলিশের ভুল স্বীকার করে নেন। তিনি বলেন, “আমাদের ভুল হয়েছিল। এই সব বিবৃতি, তথ্যপ্রমাণ অন্য ফাইলে ঢুকে গিয়েছিল। তাই সে-দিন এগুলো আদালতে জমা দেওয়া যায়নি। এই ভুলের জন্যই ইতিমধ্যে তদন্তকারী অফিসারও পাল্টে দেওয়া হয়েছে।”

এই বক্তব্য শুনে পুলিশকে ফের তীব্র ভাষায় তিরস্কার করেন বিচারক। আগের বার কেস ডায়েরি ঠিক ভাবে না-লেখায় পুলিশের সমালোচনা করেন তিনি। ধৃতকে পুলিশি হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়ার আগে তাঁর মন্তব্য, বিনা অপরাধে কারও বন্দিদশায় থাকা কাম্য নয়। পুলিশকে তিরস্কার করলেও কেস ডায়েরি দেখে এত দিনে তারা সিধে রাস্তায় হাঁটছে বলেই আশা প্রকাশ করেন বিচারক। তাঁর মন্তব্য, “অবশেষে তদন্ত ঠিক পথে এগোচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।”

তদন্তে গাফিলতির জন্য পুলিশের অন্দরমহলে আলিপুরের ঘটনার পূর্বতন তদন্তকারী অফিসারের দিকেই আঙুল তোলা হয়েছে। সাব-ইনস্পেক্টর কৌশিক রায়ের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে লালবাজারের উপরমহল। কৌশিকবাবুর বিষয়ে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছেন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায়। ডিসি (সাউথ) মুরলীধর শর্মা বলেন, “রিপোর্ট খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

কিন্তু শাসক দলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত যে-সব ব্যক্তি আলিপুর কাণ্ডে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে উচ্চবাচ্য করেনি পুলিশ। ধৃত যোগেশের অভিভাবক বলে পরিচিত তৃণমূল নেতা প্রতাপ সাহা রয়েছেন বহাল তবিয়তে। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমের ঘনিষ্ঠ প্রতাপকে তো এ দিন আদালত-চত্বরেই বুক ফুলিয়ে ঘুরতে দেখা যায়। থানায় হামলার আগে যোগেশের সঙ্গে ফোনে প্রতাপের কথা হয়েছিল বলে পুলিশি সূত্রের খবর। আদালতের সেরেস্তায় এ দিন বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়ের মতো তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ কিছু আইনজীবীর সঙ্গে বসে প্রতাপকে আলোচনা করতেও দেখা গিয়েছে। আলিপুর কাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি অবশ্য কিছু বলতে রাজি হননি। শুনানির সময় এজলাসেও ঢোকেননি প্রতাপ। এক ফাঁকে সেরেস্তার পিছন দিয়ে বেরিয়ে একটি ঢাউস গাড়িতে উঠে চলে যান।

আদালতে পুলিশ তখন ধৃত যোগেশকে ১৪ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে আবেদন জানাচ্ছে। তাদের বক্তব্য ছিল, সন্দেহভাজনদের বিষয়ে খুঁটিনাটি তথ্য জানার জন্যই যোগেশকে হাতে পাওয়া দরকার। বিচারক শেষ পর্যন্ত চার দিনের জন্য ধৃতকে পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। ধৃতের আইনজীবী আয়ুব খান ও অরিন্দম দাস অবশ্য অভিযোগ করেন, তাঁদের মক্কেলকে ফাঁসানো হয়েছে। যোগেশ যেখানে থাকেন, সেই বিধানচন্দ্র কলোনির কমিটি নেতারা তখন গম্ভীর মুখে আদালত-চত্বরে ঘুরছিলেন।

alipore case tmc kolkata police Police accepted wrong Saurin Ghoshal low kolkata news online news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy