মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে বকেছেন, তাতে কী? অপরাধ হয়ে চলেছে নিজের নিয়মে।
অপরাধীরা গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাতে কী? ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট চলছে তার আপন গতিতে।
মুখ্যমন্ত্রীকে থোড়াই কেয়ার, দণ্ডমুণ্ডের কর্তা পুলিশ কমিশনারই এখানে শেষ কথা।
নইলে মুখ্যমন্ত্রী দল না দেখে সমাজবিরোধীদের ধরার জন্য পুলিশকে ভর্ৎসনা করার তিন দিন পরেই ভরদুপুরে গঙ্গার ধারে খোলা মাঠে মদের আসর বসায় সমাজবিরোধীরা! প্রতিবাদ করতে গিয়ে ছুরির ঘায়ে রক্তাক্ত হন এলাকার বাসিন্দা! এর পরেও অবশ্য অধরা থেকে গিয়েছে অভিযুক্ত। যেমনটা ঘটেছে রবিবার দুপুরে, পানিহাটির এমএন চ্যাটার্জি লেনের ঘটনায়।
মধ্যমগ্রামের জোড়া খুনের ঘটনায় উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ নিজেদের সূত্রকে কাজে লাগিয়ে সাত দিনে তদন্তের কিনারা করতে পেরেছে। কিন্তু তার দু’দিন পরেই ইছাপুর খালের ধারে জোড়া খুনের ঘটনায় ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ তা পারে না কেন? অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ থেকে ব্যারাকপুর কমিশনারেটকে আলাদা করার সময়ে তো বলা হয়েছিল, পরিকাঠামোর উন্নতি করে এলাকার মানুষকে আরও ভাল পরিষেবা দেওয়ার জন্যই এত কাণ্ড করা হচ্ছে। এলাকার মানুষও দেখেছেন, নয়া কমিশনারেটে আইপিএস এসেছেন ভূরি ভূরি। ডিএসপি-রা এখন সকাল-সন্ধ্যা থানাগুলিতে থাকেন খুঁটিনাটি সব খতিয়ে দেখতে। তেমনই নির্দেশ ব্যারাকপুরের কমিশনার নীরজ সিংহের। কিন্তু কাজের কাজ কী হল? অপরাধের পরিসংখ্যানই অবশ্য বলে দিচ্ছে, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কমিশনারেটের ক্রাইম রেকর্ড অনুযায়ী, চলতি বছরের পাঁচ মাসেই ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটে চুরির সংখ্যা ৬২৬টি, নারী নির্যাতন ৭২২টি, ডাকাতি ৭টি এবং খুন ৩২টি। খুচরো অপরাধের সংখ্যা দেড় হাজারেরও বেশি। যদিও এ কথা মানতে চাননি পুলিশ কমিশনার নীরজ সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘সমস্ত ঘটনারই কিনারা হয়েছে। যেগুলি হয়নি, তা দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাত্র। তবে কোনও রাজনৈতিক রং বিচার না করেই সেগুলির তদন্ত করা হচ্ছে।’’
কমিশনার এ কথা বললেও নিচুতলার কর্মী ও অফিসারদের বক্তব্য আবার ভিন্ন। তাঁদের ক্ষোভ রয়েছে অন্য জায়গায়। এতে চাকরি হারানোর ভয় রয়েছে ষোলো আনা। তাঁদের বক্তব্য, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কর্তাদের বকুনি শুনতে শুনতে তাঁরা বিধ্বস্ত। অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়েও অনেক সময়ে ধমক খেতে হয়, কখনও আবার ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য। অনেক সময়েই তাই তাঁরা বুঝে উঠতে পারেন না, ঠিক কী করা উচিত!
কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘এর থেকে জেলায় কাজ করা ভাল ছিল। এখানে কাজ করার কোনও স্বাধীনতা নেই। শুধু উপরওয়ালার চাপ সহ্য করা। ভাবা যায়, ডিএসপি-দের অবস্থা কার্যত থানার আইসিদের মতো! আর আইসি-রা হাবিলদারে পরিণত হয়েছেন।’’ উপরতলায় এডিসি এবং ডিসি-রাও আছেন সিপি স্যারের কড়া শাসনে। যখন-তখন মুখ খোলা বারণ, নিজেদের চোখ দিয়ে দেখে বিচার-বিশ্লেষণ করা বারণ, তাঁর অনুমতি ছাড়া সামান্যতম ঘটনাতেও সিদ্ধান্ত নেওয়া বারণ।
পুলিশের একাংশের অভিযোগ, চোখের সামনে অপরাধ ঘটতে দেখেও ব্যারাকপুর কমিশনারেটের টহলদারি গাড়ি আগে সিপি কন্ট্রোলে যোগাযোগ করে অনুমতি চায়। পুলিশকর্তারা তাকিয়ে থাকেন রাজনৈতিক নেতাদের দিকে। কিন্তু বড় কর্তার এই ঘর সামলানোর ঠেলায় অপরাধ করে অপরাধীরা হাত ফস্কে বেরিয়ে যাচ্ছে দেদার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy