Advertisement
১৯ মে ২০২৪

মৃতার ডায়েরিতে অত্যাচারের বিবরণ, জেল শ্বশুর-শাশুড়ির

আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৭ সালের ২ জুলাই রিজেন্ট পার্ক থানার পূর্ব পুটিয়ারির দীনেশপল্লিতে শ্বশুরবাড়িতে মৃত্যু হয় ২৩ বছরের সোমার।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৫৬
Share: Save:

পণের দাবিতে তাঁর উপরে রোজ হয়ে চলা শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের ঘটনা ডায়েরিতে লিখতেন সোমা চক্রবর্তী। শেষ যে দিন ডায়েরিতে লেখেন তিনি, তার পরের দিনই গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় তাঁর দেহ উদ্ধার হয়েছিল শ্বশুরবাড়ি থেকে। ওই লেখা সোমার মৃত্যুকালীন জবানবন্দি হিসেবে গ্রহণ করে তাঁর শ্বশুর ও শাশুড়িকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলেন আলিপুরের সপ্তম ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের বিচারক রাজশ্রী বসু অধিকারী।

আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৭ সালের ২ জুলাই রিজেন্ট পার্ক থানার পূর্ব পুটিয়ারির দীনেশপল্লিতে শ্বশুরবাড়িতে মৃত্যু হয় ২৩ বছরের সোমার। ওড়নার ফাঁস লাগানো অবস্থায় তাঁর দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। মেয়েকে শ্বাসরোধ করে খুন করার পরে গলায় ওড়নার ফাঁস লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন সোমার বাবা বিজয় বিশ্বাস।

ঘটনার তদন্তে নেমে সোমার স্বামী আশিস চক্রবর্তী, দেওর দেবাশিস চক্রবর্তী, শ্বশুর দীপক চক্রবর্তী ও শাশুড়ি শিপ্রা চক্রবর্তীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে চার জনেই জামিন পান। ময়না-তদন্তের রিপোর্টে বলা হয়, সোমা আত্মঘাতী হয়েছিলেন। কিন্তু তদন্তের সময়ে সোমার একটি ডায়েরির হদিস পায় পুলিশ। তাঁর উপরে শ্বশুর ও শাশুড়ি কী ভাবে অত্যাচার করতেন, তার বিবরণ নিয়মিত ডায়েরিতে লিখেছিলেন সোমা। এই মামলার সরকারি আইনজীবী অলোক দত্তচৌধুরী বলেন, ‘‘আদালত ডায়েরিটি সোমার মৃত্যুকালীন জবানবন্দি হিসেবে গ্রহণ করে। শ্বশুর তাঁকে গুলি করে খুন করবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন। ওই ডায়েরির শেষ পাতায় লিখেছিলেন সোমা। পরের দিনই সোমা আত্মঘাতী হন। এক হস্তলেখা বিশেষজ্ঞ সোমার কলেজের নানা খাতার সঙ্গে ওই ডায়েরির হাতের লেখা মিলিয়ে দেখেন। সেগুলি একই ব্যক্তির লেখা বলে আদালতের কাছে রিপোর্ট পেশ করেন তিনি। তবে ডায়েরিতে স্বামী ও দেওরের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করেননি সোমা।’’

আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব পুটিয়ারির দীনেশপল্লির একই পাড়ার বাসিন্দা সোমা ও দেবাশিস। ২০০২ সালে দুই বাড়ির অমতে বিয়ে করেন তাঁরা। বিয়ের পরেও বিষয়টি কোনও বাড়ি থেকেই মেনে নেওয়া হয়নি। বছরখানেক পরে স্বামীর সঙ্গে সোমা শ্বশুরবাড়িতে যান। পরে সোমার বাড়ি থেকেও বিষয়টি মেনে নেওয়া হয়। বিজয়বাবু জানান, ‘‘আসবাবপত্র, শাড়ি, নগদ টাকা ও গয়না পণ হিসেবে আমি সোমার শ্বশুর ও শাশুড়ির হাতে তুলে দিয়েছিলাম। কিন্তু তার পরেও নানা সময়ে নগদ টাকার দাবিতে আমার মেয়ের উপরে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করা হত। মেয়ের মৃত্যুর ঘটনার কয়েক দিন আগে আমার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছিল। আমি কোনও মতে ১০ হাজার টাকা জোগাড় করে মেয়ের শ্বশুরের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। কিন্তু তার পরেও মেয়ের উপরে অত্যাচার বন্ধ হয়নি।’’

আইনজীবী অলোকবাবু বলেন, ‘‘ওই ডায়েরির বয়ান অনুযায়ী শ্বশুর ও শাশুড়ির অত্যাচারই সোমার মৃত্যুর কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। সেই কারণে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪(বি) ধারায় (পণের জন্য অত্যাচারের জেরে মৃত্যুর ঘটনা) শ্বশুর ও শাশুড়িকে কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। তেমনই ওই ডায়েরিতে আশিস ও দেবাশিসের বিরুদ্ধে সোমার কোনও অভিযোগ না থাকায় তাঁদের বেকসুর খালাস দিয়েছেন বিচারক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Arrest Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE