রিকশায় রাখা দড়ি দিয়ে হাত-পা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। তাই ১৪ বছরের কিশোরী সুযোগই পায়নি কোনও ভাবে বাধা দেওয়ার। তাকে জোর করে খালপাড়ের পরিত্যক্ত জমিতে নিয়ে গিয়েছিল ই-রিকশার অভিযুক্ত চালক। অভিযোগ, কিশোরীকে ধর্ষণ করার পরে হাত-পা বাঁধার সেই দড়ি দিয়েই সে মেয়েটির গলায় ফাঁস দিয়ে তার শ্বাসরোধ করে। তাতেই মৃত্যু হয় কিশোরীর। নিউ টাউনে কিশোরীকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় শনিবার গভীর রাতে ই-রিকশা চালক সৌমিত্র রায় ওরফে রাজকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার পরেই তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে তার অপরাধপ্রবণ মানসিকতার কথা। নিউ টাউনে ধর্ষণের ঘটনার আগে সে তার প্রথম স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় জেল খেটেছে বলে জেনেছে পুলিশ। সূত্রের খবর, নিউ টাউনের ঘটনায় ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, মৃত কিশোরীর যৌনাঙ্গে অনেকগুলি ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। সেই আঘাতগুলি জীবিত অবস্থায় করা হয়েছিল বলেই অনুমান। কিশোরীকে বিষাক্ত কিছু খাওয়ানো হয়েছিল কিনা, তা জানতে তার ভিসেরা পরীক্ষা করানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, রাজ ওই কিশোরীকে রাস্তা থেকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার নাম করে নিউ টাউনের লোহাপুল এলাকায় জঙ্গলে ঘেরা ওই পরিত্যক্ত জায়গায় নিয়ে যায়। তার পরে সেখানে তাকে ধর্ষণ ও খুন করে। শুক্রবার সকালে মেয়েটির দেহ উদ্ধার হয়। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা নাগাদ মায়ের বকুনি খেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল সে। খুন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে রাত আড়াইটের মধ্যে। কিন্তু যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে বলে পুলিশের দাবি, সেই জমিটি তারের জাল দিয়ে ঘেরা। একটি অংশে সেই তারের জাল ভাঙা। তবে, সেখান দিয়েও কারও পক্ষে খুব সহজে ভিতরে প্রবেশ করা সম্ভব নয়। তা সত্ত্বেও রাজ কী ভাবে ওই কিশোরীকে নিয়ে সেখানে পৌঁছল, তা নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন রয়েছে।
পুলিশ সূত্রের দাবি, বাড়ি থেকে বেরিয়ে জগৎপুরে পৌঁছনোর পরে কিশোরী আবার বাড়িতেই ফিরে যেতে চেয়েছিল। সরল বিশ্বাসে রাজের রিকশায় উঠে বসেছিল সে। তাকে কিছুটা দূরে নিয়ে যাওয়ার পরে রাজ খাবার খাওয়ার প্রস্তাব দেয়। খাবার খেয়ে নিয়ে সে কিশোরীকে বাড়িতে নামিয়ে দেবে বলে জানায়। রাজ কমলালেবুও কেনে। কিশোরীর দেহ উদ্ধারের সময়ে পাশে কমলালেবুর অংশ পড়ে থাকতে দেখেছে পুলিশ। সূত্রের দাবি, কিশোরী তারের জালের ওই এক চিলতে ভাঙা অংশ দিয়ে ভিতরে ঢুকতে চায়নি। অভিযোগ, রাজ তার রিকশায় রাখা দড়ি দিয়ে কিশোরীর হাত-পা বেঁধে দেয়। যাতে সে আর বাধা দিতে না পারে। রাজ মেয়েটিকে ওই জঙ্গলের ভিতরে টেনে নিয়ে গিয়ে প্রথমে ধর্ষণ করে। তার পরে প্রমাণ লোপাট করতে গলায় দড়ির ফাঁস দিয়ে কিশোরীকে শ্বাসরোধ করে খুন করে।
পুলিশ আপাতত রাজকে ১০ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে পেয়েছে। তাকে ধরার পরে রবিবার পুলিশ জানিয়েছিল, রাত আড়াইটের মধ্যে সব ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ সূত্রের আরও দাবি, এক ঘণ্টা ১০ মিনিটের মধ্যেই সবটা ঘটেছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তেমনটাই মনে করছে পুলিশ। জগৎপুর থেকে যে সব রাস্তা লোহাপুলের দিকে যাচ্ছে,
সেগুলির আশপাশে বসানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজে পুলিশ দেখেছে, রাত ১টা ১২ নাগাদ কিশোরী ওই রিকশায় বসা। এর পরে রাত ২টো ২০ নাগাদ ই-রিকশায় রাজ ছাড়া আর কাউকে দেখা যায়নি।
এ দিকে, রাজকে গ্রেফতারের পরে পুলিশ জেনেছে, নদিয়ায় থাকার সময়ে প্রথম স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তার জেল হয়েছিল। সেই মামলায় এখনও রাজকে রানাঘাট আদালতে হাজিরা দিতে হয়। তার পরে সে দ্বিতীয় বার বিয়ে করে। কিন্তু দ্বিতীয় স্ত্রী-ও পুলিশের কাছে রাজের বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ করেছেন। পুলিশ জেনেছে, বরাবর উগ্র স্বভাবের রাজ ওই রাতে বাড়ি ফিরে কোনও অস্বাভাবিক আচরণ করেনি। বরং সে শান্ত ছিল। রাতে ঘরে বসে মদ্যপানও করে। তার পরে হাঁটতে বেরিয়ে যায়।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)