Advertisement
০১ মে ২০২৪

ধানবাদে পাকড়াও এটিএম লুঠের চাঁই

পেশায় সে কসাই। হাওড়ার পিলখানার মাংসের দোকানে কাজ করে। মহম্মদ কালাম নামে সেই ব্যক্তিই কলকাতা-সহ সম্প্রতি রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পরপর এটিএম ভেঙে কয়েক কোটি টাকা লুঠের মূল পাণ্ডা বলে জানাচ্ছে পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৬ ০০:৩৬
Share: Save:

পেশায় সে কসাই। হাওড়ার পিলখানার মাংসের দোকানে কাজ করে। মহম্মদ কালাম নামে সেই ব্যক্তিই কলকাতা-সহ সম্প্রতি রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পরপর এটিএম ভেঙে কয়েক কোটি টাকা লুঠের মূল পাণ্ডা বলে জানাচ্ছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে রাজধানী এক্সপ্রেসে চেপে ভিন্‌ রাজ্যে পালানোর সময়ে ধানবাদ স্টেশনে লালবাজারের গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়ে যায় কালাম।

পুলিশ জানায়, কালামের শাগরেদ সন্দেহে দুই যুবক আটক হয়েছে। তার আরও দুই সঙ্গীর খোঁজে তল্লাশি চলছে। পুলিশের দাবি, দেশের অন্য চার-পাঁচটি রাজ্যে এটিএম ভেঙে প্রায় ১০০ কোটি টাকা লুঠে জড়িত হরিয়ানার এক দুষ্কৃতী-দলের দুই সদস্য কালামের সঙ্গে যোগাযোগ করেই এ রাজ্যে এসেছিল। তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই দু’জন ভিন্‌ রাজ্য থেকে বিমানে কলকাতায় পৌঁছয়। কালামই তাদের হাওড়ায় থাকার বন্দোবস্ত করে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, সম্প্রতি কালাম ও তার দলবল ১৩টি ব্যাঙ্কের এটিএম লুঠ করেছে। হরিয়ানা গ্যাং পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও হরিয়ানা, তেলঙ্গানা, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে এটিএম ভেঙে টাকা লুঠ করেছিল বলে প্রাথমিক ভাবে গোয়েন্দাদের সন্দেহ।

সম্প্রতি খাস কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা ও বর্ধমানে গ্যাসকাটার দিয়ে এটিএম কেটে টাকা লুঠ ঘুম কেড়ে নিয়েছিল পুলিশের। সতর্ক করা হয়েছিল হাওড়াকেও। লুটেরাদের ধরতে কলকাতা পুলিশ, ব্যারাকপুর পুলিশ ও হাওড়া সিটি পুলিশের গোয়েন্দারা একযোগে তদন্তে নামেন। দমদম, নাগেরবাজার, মধ্যমগ্রাম, বর্ধমান, হাওড়ায় পরপর এটিএম লুঠে উত্ত্যক্ত হয়ে উঠেছিল পুলিশ। কোথাও কোথাও লুঠের আগে সিসিটিভির সংযোগও কেটে দেয় দুষ্কৃতীরা।

তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, একটি এটিএম লুঠের পরে দুষ্কৃতীরা একটি সাদা গাড়িতে চাপে। বিমানবন্দরের কাছে নেমে গিয়েছিল তারা। জানা যায়, গাড়িটি ভাড়া করা হয়েছিল হাওড়া থেকে। সেই মতো গাড়ি ও কয়েক জন যুবকের খোঁজে হাওড়া সিটি পুলিশকে সতর্ক করে ব্যারাকপুর পুলিশ। হাওড়া সিটি পুলিশের গোয়েন্দারা জানতে পারেন, গাড়িটি ভাড়া হয়েছিল পিলখানা থেকে। চালককে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, পিলখানা থার্ড লেনের বাসিন্দা মহম্মদ কালাম নামে এক যুবক সেটি ভাড়া করে। গাড়িচালক আরও জানান, মাঝরাতে গাড়িটি নিয়ে কালাম ও তার সঙ্গীরা ঘুরলেও এটিএম লুঠের বিষয়টি তার জানা নেই।

পুলিশ জানায়, কালাম মূলত হাওড়ার বাঁকড়ার কুখ্যাত দুষ্কৃতী শেখ আকবরের শাগরেদ বলে পরিচিত। কয়েক বছর আগে পিতলের বিস্কুট রং করে সোনার বলে চালিয়ে জালিয়াতির অভিযোগে আকবরের সঙ্গেই কালামকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। কয়েক বছর জেল খেটে ফিরে কসাইয়ের কাজ করছিল সে। স্থানীয় সূত্রে খবর, আসানসোলের এক তরুণীকে বিয়ে করে সে পিলখানাতেই বসবাস করছিল। সেই কালাম-ই এটিএম লুঠের পাণ্ডা জেনে বিস্মিত পুলিশও।

তদন্তে কালামের নাম ওঠার পরে পুলিশ পিলখানার ঘিঞ্জি গলিতে একটি পাঁচতলা আবাসনে কালামের ফ্ল্যাটে যায়। এলাকাবাসীরা জানান, মাসখানেক ধরে কালাম আর মাংসের দোকানে কাজ করছিল না। মাঝেমধ্যে তাকে গ্যাস কাটার ও ছোট অক্সিজেন সিলিন্ডার বাড়িতে নিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছিল। পুলিশ জানায়, এই তথ্য জেনে বুঝতে অসুবিধা হয়নি, কালাম-ই এটিএম লুঠ চক্রের পাণ্ডা। তবে বাড়িতে তাকে পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত মোবাইল ফোনের সূত্রে ধরা পড়ে সে।

পুলিশের দাবি, জেরায় কালাম জানিয়েছে, এটিএম থেকে কিছুটা দূরে গাড়ি রাখা হত। এক জন এটিএম বুথের শাটার নামাত, দু’জন থাকত বাইরে। ক্রমশ দলের আরও কয়েক জন জড়ো হত। তাদের এক জন ভিতরে ঢুকে সিসিটিভি ক্যামেরার সংযোগ কেটে দিত। তার পরেই শুরু হতো ‘অপারেশন’। তবে নাগেরবাজার ও জগদ্দলে তাদের ব্যর্থতার কথাও কালাম জানিয়েছে বলে দাবি পুলিশের। এর মধ্যে জগদ্দলে এটিএম ভাঙার সময়ে পুলিশ তাদের দেখে ফেলে। তাড়া করলে গাড়িতে গ্যাস কাটার, সিলিন্ডার ফেলে রেখে পালায় ওই দুষ্কৃতীরা।

বুধবার কালামকে শিয়ালদহ আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাকে ১৪ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ATM thieft robbery police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE