Advertisement
E-Paper

ফুটপাথে পড়ে বৃদ্ধ, ১০ ঘণ্টা পরে এল পুলিশ

ফুটপাথে পড়ে কাতরাচ্ছেন বৃদ্ধ। বাঁ পায়ে দগদগে ঘা। গায়ে জামা থাকলেও নিম্নাঙ্গে কোনও আবরণ নেই। আশপাশ দিয়ে লোকজন চলে যাচ্ছেন।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৬ ০১:৪৫
দিনভর এ ভাবেই। রবিবার, শরৎ বসু রো়ডে। ছবি : সুমন বল্লভ

দিনভর এ ভাবেই। রবিবার, শরৎ বসু রো়ডে। ছবি : সুমন বল্লভ

ফুটপাথে পড়ে কাতরাচ্ছেন বৃদ্ধ। বাঁ পায়ে দগদগে ঘা। গায়ে জামা থাকলেও নিম্নাঙ্গে কোনও আবরণ নেই। আশপাশ দিয়ে লোকজন চলে যাচ্ছেন। কারও কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। মিটার পঞ্চাশেক দূরে রয়েছে একটি পুলিশ কিয়স্ক। কিন্তু সকাল থেকে বৃদ্ধকে কাতরাতে দেখে টনক নড়েনি উর্দিধারীদেরও। এমনকী ঘটনার খবর দিয়ে দুপুরে লালবাজারে ফোন করা হলে পুলিশ এসেছে বিকেলে, দ্বিতীয় বার ফোন করার পরে

রবিবার এমনই অমানবিক দৃশ্যের সাক্ষী রইল দক্ষিণ কলকাতার শরৎ বসু রোড। দশ ঘণ্টা পরে স্থানীয় এক ব্যক্তির তৎপরতায় টালিগঞ্জ থানার পুলিশ এসে বৃদ্ধকে উদ্ধার করে বাঙুর হাসপাতালে পাঠায়। পুলিশ জানায়, ওই ব্যক্তি নিজেকে আব্বাসউদ্দিন নামে পরিচয় দিয়েছেন। জানিয়েছেন, তিনি মালদহের বাসিন্দা।

কী হয়েছিল এ দিন?

শরৎ বসু রোডের বাসিন্দা সোমেন্দ্রমোহন ঘোষ নামে এক ব্যক্তি জানান, রবিবার সকালে তিনি দেখেন, রাস্তার মাঝখানে পড়ে রয়েছেন ওই বৃদ্ধ। আশপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে গাড়ি। তিনিই রাস্তা থেকে বৃদ্ধকে সরিয়ে ফুটপাথে শুইয়ে দেন। সোমেন্দ্রবাবু অবশ্য সেই সময়ে পুলিশকে খবর দেননি। তিনি বলেন, ‘‘কাছেই কয়েক জন পুলিশ দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলেন। ভেবেছিলাম, দেখে ওঁরা নিজেরাই ব্যবস্থা নেবেন।’’

দুপুর আড়াইটে নাগাদ সোমেন্দ্রবাবু দেখেন, বৃদ্ধ ফুটপাথেই প়ড়ে রয়েছেন। পায়ের ক্ষতে কিলবিল করছে পোকা। শুয়ে শুয়ে কাতরেই যাচ্ছেন। এর পরেই লালবাজারে ফোন করেন তিনি। গোটা ঘটনা জানান। লালবাজার থেকে আশ্বাস মেলে, শীঘ্রই ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করতে পুলিশ যাচ্ছে। বিকেল চারটের সময়ে সোমেন্দ্রবাবু দেখেন, বৃদ্ধ তখনও একই ভাবে শুয়ে। আশপাশে পুলিশের টিকিরও দেখা নেই। ফের লালবাজারের কন্ট্রোলে ফোন করেন সোমেন্দ্রবাবু। তাঁর দাবি, ‘‘পুলিশ আসেনি শুনে চমকে ওঠেন লালবাজারের অফিসারেরাও। এর কিছু ক্ষণ পরেই অবশ্য পুলিশ আসে।’’

অনেকে বলছেন, বিদেশে পুলিশ শুধু অপরাধী ধরে না। নাগরিক পরিষেবাতেও তার সাহায্য মেলে। এ শহরেও পুলিশের ‘মানবিক মুখ’-এর কথা বারবার বলেন প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা। কিন্তু বহু জায়গাতেই পুলিশের কাজে তার দেখা মেলে না বলে অভিযোগ। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘পুলিশের মানবিক মুখ মেলে না, এটা বলা ভুল। কিন্তু যেটা সব সময়ে হওয়া উচিত, সেটা মাঝেমধ্যে মেলে।’’ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) সুপ্রতিম সরকার বলেন, ‘‘কিয়স্কের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হবে।’’

কিন্তু লালবাজারে ফোন করা হলেও প্রথম বারে তারা তৎপর হয়নি কেন? সুপ্রতিমবাবু বলেন, ‘‘পুরো ঘটনাটিই খতিয়ে দেখা হবে। দেখা হবে লালবাজারের ভূমিকাও।’’

কিন্তু শুধু পুলিশ কেন, এই ঘটনায় অমানবিকতার অভিযোগ উঠতে পারে শরৎ বসু রোডের বাসিন্দাদের অনেকের বিরুদ্ধেও। কারণ, দশ ঘণ্টা ধরে এক ব্যক্তি ফুটপাথে প়ড়ে কাতরালেও শুধু এক জন ছাড়া আর কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসেননি। পুলিশের একাংশের বক্তব্য, বিদেশে পুলিশ যেমন সক্রিয়, তেমনই সামাজিক কাজে নাগরিকদের সচেতনতাও অনেক বেশি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের শিক্ষক ডালিয়া চক্রবর্তীর পর্যবেক্ষণ, ‘‘নগরজীবনের শুরু থেকেই একলা বেঁচে থাকার প্রবণতা বরাবর ছিল। এই ধারা দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। মানুষ বেশি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছেন। নাগরিকেরা ভাবেন, রাস্তার অসুস্থ মানুষকে সাহায্য করতে গিয়ে তিনি নিজেই বিপদে প়ড়বেন।’’

police recover oldman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy