Advertisement
E-Paper

হোয়াটস-অ্যাপের সূত্রে ধৃত খুনের দুই অভিযুক্ত

লম্বা চুল আর কানে দুল পরা এক যুবক। ইলিয়ট রোডের একটি বহুতলে দেবকুমার মুখোপাধ্যায় নামে এক বৃদ্ধকে খুনের তদন্তে নেমে আততায়ীর চেহারা সম্পর্কে ওইটুকু বিবরণই সম্বল ছিল পুলিশের। তা নিয়েই ঘটনার কিনারা করেছে পার্ক স্ট্রিট থানা। রহস্যের সমাধানে তাঁদের হাতিয়ার হয়েছে ‘হোয়াট্স অ্যাপ’। খুনে অভিযুক্ত এক যুবককে সোমবার রাতে মুম্বই থেকে গ্রেফতার করেছেন তদন্তকারী অফিসারেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৪ ০২:২৮

লম্বা চুল আর কানে দুল পরা এক যুবক। ইলিয়ট রোডের একটি বহুতলে দেবকুমার মুখোপাধ্যায় নামে এক বৃদ্ধকে খুনের তদন্তে নেমে আততায়ীর চেহারা সম্পর্কে ওইটুকু বিবরণই সম্বল ছিল পুলিশের। তা নিয়েই ঘটনার কিনারা করেছে পার্ক স্ট্রিট থানা। রহস্যের সমাধানে তাঁদের হাতিয়ার হয়েছে ‘হোয়াট্স অ্যাপ’। খুনে অভিযুক্ত এক যুবককে সোমবার রাতে মুম্বই থেকে গ্রেফতার করেছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। কলকাতা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে তার সঙ্গীকেও। কলকাতা পুলিশের দাবি, এই প্রথম ‘হোয়াট্স অ্যাপ’-এর সাহায্যে কোনও খুনের কিনারা করা হল।

ডিসি (দক্ষিণ) মুরলীধর শর্মা মঙ্গলবার বলেন, “আব্দুল হাসান নামে ওই যুবককে মুম্বই থেকে ধরা হয়েছে। তাকে জেরা করে ইলিয়ট রোড থেকে ধরা হয়েছে নিয়াজ রহমান নামে আর এক অভিযুক্তকে।” পুলিশ জানায়, দু’জনেই দেবকুমারবাবুর প্রতিবেশী।

পুলিশ জানায়, গত ১১ জুন ইলিয়ট রোডের ওই বহুতলের তিনতলার ফ্ল্যাট থেকে দেবকুমারবাবুর দেহ উদ্ধার হয়। তাঁর নাকে, চোখে ও গলায় আঁচড়ের চিহ্ন ছিল। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট থেকে পুলিশ জানতে পারে, ওই বৃদ্ধ খুন হয়েছেন।

ধৃতদের জেরায় পুলিশ জেনেছে, হাসান ও নিয়াজ দেবকুমারবাবুর বাড়িতে কল সেন্টার খোলার পরিকল্পনা করেছিল। তাতে সায় ছিল না ওই বৃদ্ধের। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে ১০ জুন দেবকুমারবাবুর বাড়ি যায় হাসান ও নিয়াজ। পুলিশের দাবি, কল সেন্টার খুলতে না দিলে দেবকুমারবাবুকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় হাসান। প্রতিবাদ করায় দেবকুমারবাবুর মুখে ঘুষি মারে সে। তাতে অচৈতন্য হয়ে পড়েন বৃদ্ধ। পুলিশের দাবি, এর পরে গলা টিপে দেবকুমারবাবুকে খুন করা হয়। ঘটনার পরেই গা-ঢাকা দেয় হাসান ও নিয়াজ। হাসান মুম্বইয়ে অভিনয় শেখার স্কুলে ভর্তি হয়।

কী ভাবে ধরা পড়ল অভিযুক্তেরা? পুলিশ জানায়, ওই বহুতলের এক বাসিন্দা তাদের জানান, ঘটনার কিছু দিন আগে লম্বা চুল আর কানে দুল পরা এক যুবককে ওই বৃদ্ধের ফ্ল্যাটের বাইরে দেখা যায়। এক পুলিশকর্তার কথায়, “প্রথমে আমরা অন্ধকারেই ছিলাম। কিন্তু ‘লম্বা চুল আর কানে দুল’ কিছুটা আশার আলো দেখায়।”

এর পরেই ডিসি (দক্ষিণ) মুরলীধর শর্মার নেতৃত্বে পার্ক স্ট্রিট থানার দুই অফিসার দেবাশিস দত্ত এবং শান্তনু মজুমদার তদন্ত শুরু করেন। ‘লম্বা চুল আর কানে দুল’ পরা কোনও যুবকের খোঁজ না পেয়ে দেবকুমারবাবুর মোবাইলের ‘কল লিস্ট’ দেখতে শুরু করেন তাঁরা। পুলিশের দাবি, তখনই দেখা যায়, খুন হওয়ার দিন একটি মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করা হয় দেবকুমারবাবুকে। ওই নম্বরের সিম কার্ডটির খোঁজ নিতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, সিমটির মালিক উত্তর ২৪ পরগনার এক ব্যক্তি। আরও জানা যায়, ওই লোকটির পরিচয় ভুয়ো। তবে ওই সিম থেকে দেবকুমারবাবুকে এক বারই ফোন করা হয়েছে। তার পরে সেই সিম ব্যবহার করা হয়নি।

এ বার পুলিশ খুঁজতে শুরু করে মোবাইল সেটটি। সিম ঢুকিয়ে ফোন করা হলে মোবাইল সেটের একটি নম্বর ‘রেকর্ড’ হয়ে যায়। সেটিকে বলা হয় ‘আই এম ই আই’ নম্বর। ওই নম্বর দেখে পুলিশ জানতে পারে, গত এক বছরে ওই মোবাইল সেটেই ১৪টি সিম কার্ড ব্যবহৃত হয়েছে। তথ্য পেয়ে কপালে ভাঁজ পড়ে পুলিশের।

এক তদন্তকারী অফিসার জানান, ওই ১৪টি নম্বর মোবাইলের ‘হোয়াট্স অ্যাপ’-এ ‘সেভ’ করা হয়। দেখা যায়, তার মধ্যে চারটি নম্বর ‘হোয়াট্স অ্যাপ’-এ ব্যবহার করা হয়েছে। ‘হোয়াট্স অ্যাপ’-এর প্রোফাইলে নম্বরের মালিকের ছবিও রয়েছে। ছবিটি দেখেই চমকে যান তদন্তকারী অফিসারেরা। কারণ, ছবির যুবকের চুল লম্বা। তার কানে রয়েছে দুল।

পুলিশ জানায়, ছবিটি বহুতলের ওই বাসিন্দাকে দেখানো মাত্রই তিনি চিনতে পারেন যুবককে। স্থানীয়েরাই তাকে আব্দুল হাসান বলে চিহ্নিত করেন। খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানে, হাসান রয়েছে মুম্বইয়ের উপকণ্ঠে মীরা রোড এলাকায়। গত শনিবার মুম্বই যায় পার্ক স্ট্রিট থানার একটি দল। সেখানে পুলিশের সাহায্যে গ্রেফতার করা হয় হাসানকে। তাকে জেরা করে খোঁজ মেলে নিয়াজের।

whats app abdul hasan elliot road devkumar bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy