Advertisement
E-Paper

কোর্টের নির্দেশ মানতে থাকবে বেশি নজরদারি

হাতিবাগানের ছোট্ট ফ্ল্যাটে থাকেন প্রবীণ জ্যোর্তিময় ঘোষ এবং তাঁর স্ত্রী। কালীপুজো যতই এগিয়ে আসছে ততই চিন্তা বাড়ছে ওঁদের। আলোর উৎসবে শব্দের তাণ্ডব ওঁদের কাছে আতঙ্কের কারণ। শহরের বিভিন্ন প্রান্তেই বিশেষ করে শিশু ও প্রবীণদের কাছে আনন্দটা অবশেষে নিরানন্দ হয়ে দাঁড়ায়।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৩৪
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

হাতিবাগানের ছোট্ট ফ্ল্যাটে থাকেন প্রবীণ জ্যোর্তিময় ঘোষ এবং তাঁর স্ত্রী। কালীপুজো যতই এগিয়ে আসছে ততই চিন্তা বাড়ছে ওঁদের। আলোর উৎসবে শব্দের তাণ্ডব ওঁদের কাছে আতঙ্কের কারণ। শহরের বিভিন্ন প্রান্তেই বিশেষ করে শিশু ও প্রবীণদের কাছে আনন্দটা অবশেষে নিরানন্দ হয়ে দাঁড়ায়।

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, শব্দের তাণ্ডবে হৃদ্‌যন্ত্র বিকল হয়ে প্রবীণদের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তা ছাড়া শিশু ও বয়স্কদের শ্রবণশক্তি হারানোর আশঙ্কা তো রয়েছেই। তাই এ বছর শব্দবাজি ফাটানো নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে খুশি প্রবীণ নাগরিকদের একাংশ। পাশাপাশি তাঁরা সন্দিহান, আইনের কার্যকারিতা নিয়ে।

সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, চলতি বছরে কেবল রাত আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত বাজি ফাটানো যাবে। এর অন্যথা হলেই পুলিশ আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে। যদিও আদালতের কঠোর নির্দেশ পুলিশ কতটা কার্যকর করতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রের কথায়, ‘‘আমরা শুধু বাতাসে দূষণের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করি। আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে যাবতীয় ব্যবস্থা পুলিশ নেবে। তাই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ শহরের প্রতিটি থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’

শব্দবাজি নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা শব্দদূষণ বেঞ্চের প্রবীণ আইনজীবী গীতানাথ গঙ্গোপাধ্যায় উত্তর কলকাতার বাসিন্দা। তাঁর কথায়, ‘‘কালীপুজোর সময়ে এই বৃদ্ধ বয়সে আতঙ্কে থাকতে হয়। শব্দের দাপট থেকে রক্ষা পেতে দরজা-জানলা বন্ধ করে ঘরে থাকি। মনেপ্রাণে চাই, যে কোনও শব্দবাজি নিষিদ্ধ হোক। মাত্রা বেঁধে দেওয়ার পরেও শব্দবাজির দাপট কোথাও কমছে না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানতে পুলিশপ্রশাসন কঠোর হোক, এটাই চাই।’’ বৃদ্ধ জ্যোতির্ময়বাবুরও পর্যবেক্ষণ, ‘‘শব্দবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রতি বছর পুলিশ ও প্রশাসন একাধিক বৈঠক করলেও কাজ হয় না। গত বছরও আমার বাড়ির আশপাশের আবাসনের ছাদে গভীর রাত পর্যন্ত বাজি ফেটেছে। আতঙ্কে কালীপুজোর দু’দিন সন্ধ্যা থেকেই দরজা-জানলা বন্ধ রাখি।’’

শব্দবাজির তাণ্ডবে প্রবীণ এবং শিশুদের ভয়ানক ক্ষতি হয় বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। শিশু চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষের কথায়, ‘‘শব্দের দাপটে শিশুদের শ্রবণেন্দ্রিয়ের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। শব্দবাজিতে বিষাক্ত উপাদান থাকে। যা পোড়ানোর ফলে বাতাস ভীষণ ভাবে দূষিত হয়। সেই দূষিত বায়ু শিশু ও বয়স্কদের ফুসফুসে ঢুকে শরীরের ক্ষতি করে। হাঁপানি ও ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। ওই ধোঁয়া সদ্যোজাতের পক্ষে ভীষণ ভাবে ক্ষতিকর।’’ তাঁর মতে, ‘‘প্রতি বছর কালীপুজোর পরে চোখ, হাত থেকে বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষত নিয়ে বাচ্চারা আসে। এই অভিজ্ঞতা

থেকে বলতে পারি, শব্দবাজি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হোক।’’

সুপ্রিম কোর্ট শহরে শব্দবাজি ফাটানোর যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে তার সঠিক প্রয়োগে পুলিশ কী ব্যবস্থা নিচ্ছে? এ বিষয়ে লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘কালীপুজোর সময়ে শব্দবাজি ফাটানোর ক্ষেত্রে আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কালীপুজোর দু’দিন শহরের বিভিন্ন প্রান্তে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। শহরের অলিগলিতে দ্রুত পৌঁছতে অটোর ব্যবস্থা থাকছে। বহুতল আবাসনের ছাদগুলির উপরেও বাড়তি নজরদারি দেওয়া হবে।’’

Sound Pollution Cracker Supreme Court Police Monitoring
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy