Advertisement
E-Paper

বাংলার ‘মাছের’ জন্য মুঙ্গেরের ‘খাবার’, জাল গোটাচ্ছে পুলিশ

মাছ খাবার না পেয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। মুঙ্গের ও স্থানীয় অস্ত্র কারবারিদের ফোনে আড়ি পেতে এই ধরনের কথাবার্তা শুনে ধন্দে পড়ে গিয়েছিলেন তদন্তকারী অফিসারেরা। মাঝে মধ্যেই স্থানীয় কারবারিরা মুঙ্গেরের অস্ত্র ব্যবসায়ীদের ‘খাবার’ পাঠানোর জন্য কাকুতিমিনতি করছেন।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৬ ০১:২৩

মাছ খাবার না পেয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। মুঙ্গের ও স্থানীয় অস্ত্র কারবারিদের ফোনে আড়ি পেতে এই ধরনের কথাবার্তা শুনে ধন্দে পড়ে গিয়েছিলেন তদন্তকারী অফিসারেরা। মাঝে মধ্যেই স্থানীয় কারবারিরা মুঙ্গেরের অস্ত্র ব্যবসায়ীদের ‘খাবার’ পাঠানোর জন্য কাকুতিমিনতি করছেন।

মাছ ও খাবারের কী অর্থ?

তদন্তকারীদের কথায়, ‘মাছ’ মানে নাইন অথবা সেভেন এমএম পিস্তল। আর ‘খাবার’ মানে ওই দুই পিস্তলের কার্তুজ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মুঙ্গেরের কিছু অস্ত্র কারবারি এ রাজ্য ঘাঁটি গেড়ে বসেছে। এখানেই অস্ত্র তৈরি হচ্ছে। সম্প্রতি দক্ষিণ শহরতলির বন্দর লাগোয়া রবীন্দ্রনগর থানা এলাকায় দুটি বড় অস্ত্র কারখানার হদিস পাওয়া গিয়েছে। ওই সব কারখানা থেকে প্রচুর ওয়ান শটার, নাইন এমএম ও সেভেন এমএম পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। বেশ কয়েক জন মুঙ্গের অস্ত্র কারবারিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

শুধু দক্ষিণ ২৪ পরগনা নয়, রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলা থেকে হাজার খানেক অস্ত্রও উদ্ধার হয়েছে বলে রাজ্য পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। কলকাতার আশেপাশে কিছু এলাকা কার্যত ‘মিনি-মুঙ্গের’ হয়ে উঠেছে বলে রাজ্য পুলিশের কর্তাদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায়, পিস্তল তৈরির পাশাপাশি কার্তুজ তৈরিতে হাত পাকানো শুরু করেছে স্থানীয় অস্ত্র কারবারিরা। সম্প্রতি বারুইপুরের বেগমপুর থেকে বাপি হালদার নামে এক অস্ত্র কারবারি গ্রেফতার করা হয়। ধৃতের ঘর থেকে নাইন এম এম ও সেভেন এমএম পিস্তলের একাধিক অর্ধেক তৈরি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে। এক তদন্তকারীর কথায়, বাপি মুঙ্গের থেকে কার্তুজ তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে বলে জেরায় কবুল করেছে। তবে এখন কার্তুজ তৈরিতে তেমন সরগর হয়নি। একেকটি কার্তুজ তৈরি করতে প্রায় দিন তিনেক সময় লেগে যাচ্ছে। বাপি-সহ তিন শ্রমিককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ওই শ্রমিকরা বাপির কাছ প্রশিক্ষণ নিত বলে পুলিশের দাবি। এক তদন্তকারীর কথায়, নাইন ও সেভেন এমএম পিস্তলের কার্তুজ মুঙ্গেরের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিনতে ৫০০ টাকা প্রতিটির দাম পড়ে। কিন্তু এখানে কার্তুজ তৈরি করতে হলে এক-একটির মজুরি প্রায় ৬০০ টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সরঞ্জাম খরচ নিয়ে প্রতি কার্তুজ হাজার টাকা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে ধৃতদের জেরায় জানা গিয়েছে। কিন্তু এখানকার বেআইনি অস্ত্র ব্যবসায়ীরা চেষ্টার কসুর করছেন না। সেটাই এখন চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তদন্তকারীদের কথায়, মুঙ্গের থেকে কারিগর নিয়ে এসে নাইন এম এম ও সেভেন এম এম পিস্তল-সহ ওয়ান শটারও এখানে রমরমিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু ওই সব পিস্তলের কার্তুজ মুঙ্গের থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে। এখানকার কারখানায় তৈরি হচ্ছে পিস্তল। আর মুঙ্গেরের কার্তুজ। এ ভাবেই এতদিন চলছিল ব্যবসা। কিন্তু এখন এখানে বিপুল পরিমাণে পিস্তল তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এখন পিস্তল অনুযায়ী মুঙ্গের থেকে সরবরাহ অমিল। তদন্তকারীদের অনুমান, মুঙ্গের অস্ত্র কারবারীদের একাংশ এ রাজ্য কারখানা খুলে বসেছেন। কিন্তু দক্ষ কারিগরের অভাবে কার্তুজ তৈরি করতে পারছে না। রাজ্য পুলিশের এক কর্তার কথায়, মাস চারেক ধরে রাজ্য জুড়ে প্রায় কুড়ি জন অস্ত্র কারবারিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখানে কার্তুজ তৈরি শুরু হলে পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াবে।’’

এক তদন্তকারীর কথায়, মুঙ্গের অস্ত্র ব্যবসায়ীরাও ঢালাও কার্তুজ বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। একমাত্র নিজেদের পিস্তলের ম্যাগাজিনের সঙ্গে কার্তুজ বিক্রি করছে ওরা। এ রাজ্যের অস্ত্র ব্যবসায়ীদের মুঙ্গেরে গিয়ে কার্তুজ তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন মুঙ্গেরের কারবারিরা। মুঙ্গের অস্ত্র কারবারিদের ফোনে আড়ি পেতে তদন্তকারী তা শুনেছেনও।

ওই পুলিশ কর্তার কথায়, ধৃতদের দফায় দফায় জেরা করা হয়েছে।
রাজ্য কোথায় কোথায় মুঙ্গের কারবারিরা সক্রিয় রয়েছে, তার সবিস্তার খোঁজও নেওয়া হচ্ছে। আরও অস্ত্র কারবারী জালে ধরা পড়বে বলে মনে হচ্ছে।’’ ওই পুলিশ কর্তার সংযোজন, অস্ত্র ও কার্তুজ, কোনও ভাবেই আর তৈরি যাতে না হয় সেই জন্য বিষয় রাজ্য জুড়ে সর্বত্র কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Police department Weapons Arms
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy